• ছাত্রীর শরীরে ঢুকে মৃতার আত্মা বলল 'বিচার চাই'!
    এই সময় | ২৬ অক্টোবর ২০২৫
  • এই সময়, রায়গঞ্জ: মৃতা নাবালিকার 'আত্মা' গ্রামেরই আর এক নাবালিকার শরীরে প্রবেশ করেছে এবং তার মৃত্যুর ঘটনার বিবরণ দিচ্ছে! এমনই দাবি করে মৃতার পরিবারের উপরে চড়াও হলেন গ্রামবাসীরা। উত্তর দিনাজপুর জেলার রায়গঞ্জ থানার রুয়া গ্রাম পঞ্চায়েতের দক্ষিণ ধূলিয়বান এলাকার ঘটনা। পুলিশ গিয়ে মৃতার পরিবারের সদস্যদের উদ্ধার করে থানায় নিয়ে আসে। অভিযোগ, কুসংস্কারের বশে গ্রামবাসীরা এমন ঘটনা ঘটিয়েছেন।

    কয়েক বছর আগে দক্ষিণ ধূলিয়বানের বাসিন্দা ১৫ বছরের নাবালিকাকে হরিয়ানার গুরুগ্রামে কাজের জন্য নিয়ে যান তার পিসি এবং পিসেমশাই। সেখানে গৃহ পরিচারিকার কাজ করত মেয়েটি। প্রায় এক সপ্তাহ আগে গুরুগ্রামের ঘর থেকে নাবালিকার ঝুলন্ত দেহ উদ্ধার হয়। কী কারণে তার মৃত্যু হয়, তা এখনও জানা যায়নি। মৃতদেহ আনা হয় দক্ষিণ ধূলিয়বানের বাড়িতে। মঙ্গলবার নাবালিকার দেহ কবর দেওয়া হয়। তার পরেই যাবতীয় ঘটনার সূত্রপাত।

    কালীপুজো উপলক্ষে গ্রামে মেলা বসেছিল। বুধবার সন্ধ্যায় সেই মেলা ঘুরে মৃতা নাবালিকার বাড়ির পাশের রাস্তা দিয়ে নিজের বাড়িতে ফেরে গ্রামেরই অষ্টম শ্রেণির এক ছাত্রী। সে বাড়ি ফিরেই 'অস্বাভাবিক আচরণ' শুরু করে বলে দাবি পরিবারের।

    পরিবারের সদস্যদের বক্তব্য, মেয়েটির গলার স্বর বদলে যায়। সে বলতে থাকে, 'আমায় হরিয়ানায় বিক্রির চেষ্টা করা হয়। আমায় ধর্ষণ করে খুন করা হয়েছে। খুন করেছে পিসেমশাই। আমার বিচার চাই।' আধ ঘণ্টা ধরে মেয়েটি এমন সব কথাবার্তা বলছিল বলে জানান বাড়ির লোকেরা। ততক্ষণে ওই বাড়িতে ভিড় জমে যায়। অনেকেই মোবাইলে ক্যামেরাবন্দি করতে থাকেন সেই মুহূর্ত। সেই ভিডিয়ো (সত্যতা যাচাই করেনি 'এই সময়') ছড়িয়ে পড়ে গোটা গ্রামে। তার পরেই হইচই শুরু হয়। খবর দেওয়া হয় ওঝাকে। ওঝা এসে 'পরীক্ষা' করে দাবি করেন, মৃত নাবালিকার আত্মা ওই মেয়েটির শরীরে প্রবেশ করেছিল।

    তার পরেই উত্তেজিত গ্রামবাসীরা মৃত নাবালিকার পিসি এবং পিসেমশাইয়ের বাড়িতে হানা দিয়ে তাঁদের উপরে চড়াও হন। খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে পৌঁছয় রায়গঞ্জ থানার পুলিশ। দম্পতিকে গ্রামবাসীদের হাত থেকে উদ্ধার করে থানায় নিয়ে আসা হয়। যদিও দম্পতির বিরুদ্ধে কোনও লিখিত অভিযোগ না-থাকায় তাঁদের পরে ছেড়ে দেয় পুলিশ। রায়গঞ্জ থানার আইসি বিশ্বাশ্রয় সরকার বলেন, 'কোনও লিখিত অভিযোগ পাইনি। তা সত্বেও গোটা ঘটনা খতিয়ে দেখা হবে।'

    অষ্টম শ্রেণির ওই ছাত্রীর দাদা বলেন, 'বোন মৃত নাবালিকার বাড়ির পাশ দিয়ে নিজের বাড়ি ফিরেছিল। তার পরেই ও হঠাৎ করে অস্বাভাবিক হয়ে যায়। ছটফট করতে থাকে। বলতে থাকে, ওকে ধর্ষণ করে খুন করেছে ওর পিসেমশাই। ওর সঙ্গে অন্যায় হয়েছে। ও বিচার চায়। কারও ক্ষতি করবে না। আমরা ওঝাকে ডাকি। ওঝা বলেন বোনের ভিতরে মৃত নাবালিকার আত্মা প্রবেশ করেছে। এর চিকিৎসা তাঁর কাছে নেই।' এর আগে গ্রামে এই ধরনের ঘটনা ঘটেনি বলে জানান তিনি। জানা গিয়েছে, মৃত নাবালিকার বাবা আট বছর আগে দ্বিতীয় বিয়ে করেন। তার কয়েকদিন বাদেই নাবালিকার মা স্বামী-সন্তান ছেড়ে ফের বিয়ে করে অন্যত্র চলে যান। তার পর থেকে বাবা এবং সৎমা-র সঙ্গেই থাকত নাবালিকা।

    ঘটনায় মৃতার পিসেমশাইয়ের দিকে আঙুল উঠলেও তিনি গ্রামবাসীদের অভিযোগ নস্যাৎ করেছেন। তাঁর বক্তব্য, 'আমি যদি দোষী হতাম তা হলে হরিয়ানার পুলিশই আমায় গ্রেপ্তার করত। যা ঘটেছে, সবটাই সেখানকার পুলিশকে জানিয়েছি।' বিষয়টি নিয়ে মুখ খুলতে চাননি মৃতার বাবা এবং সৎমা। এ দিকে, স্থানীয় গ্রাম পঞ্চায়েত সদস্য আজিমুল রহমান বলেন, 'আমি গ্রামবাসীদের থেকেই বিষয়টি জানতে পারি। পুলিশে খবর দিই। পুলিশ এসে ওদের নিয়ে যায়। আমি গ্রামের লোকেদের বোঝানোর চেষ্টা করছি। জনপ্রতিনিধি হয়ে এই ঘটনাকে প্রশ্রয় দিতে পারি না।'

    মৃতার পরিবার এমনকী, রায়গঞ্জের পুলিশের কাছেও ময়না তদন্তের রিপোর্ট এসে পৌঁছয়নি। ফলে মৃত্যুর কারণ এখনও অজানাই। এরই মাঝে এমন ঘটনায় কুসংস্কারের ছায়া দেখছে বিজ্ঞান মঞ্চ। সংগঠনের জেলা সদস্য চন্দ্রনারায়ণ সাহা বলেন, 'এই ধরনের ঘটনা একেবারেই কাম্য নয়। সম্পূর্ণ অন্ধবিশ্বাসের কারণে এটা ঘটেছে। আমরা জেলা কমিটির সঙ্গে আলোচনা করে ওই এলাকায় গিয়ে গ্রামবাসীদের মধ্যে সচেতনতা গড়ে তোলার চেষ্টা করব।'

  • Link to this news (এই সময়)