তেলুগু ভোটে বিশেষ নজর দিয়ে ছটের পরেই প্রচারে নামছে তৃণমূল
দৈনিক স্টেটসম্যান | ২৬ অক্টোবর ২০২৫
লক্ষ্য ২০২৬ বিধানসভা নির্বাচন। সেই নির্বাচনে ভালো ফল করার জন্য ছট পুজোর পরেই খড়গপুর শহরে তেড়েফুড়ে প্রচারে নামতে চলেছে তৃণমূল কংগ্রেস। শুক্রবার মেদিনীপুরে একটি গোপন বৈঠক হয়। এই বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন পুরপ্রধান কল্যাণী ঘোষ, খড়গপুর শহর তৃণমূলের শীর্ষস্থানীয় নেতা দেবাশিস চৌধুরী, বি হরিশ কুমার, প্রবীর ঘোষ, শহর তৃণমূল যুব কংগ্রেস সভাপতি রোহন দাস।
খড়গপুর শহরে তৃণমূল কংগ্রেসের মূল ভোটব্যাঙ্ক সংখ্যালঘু ভোট। আড়াই লক্ষ ছুঁই ছুঁই ভোটারের এই বিধানসভা কেন্দ্রে সংখ্যালঘু ভোটের পরিমাণ প্রায় ৩০ হাজার। এই ভোটের ৯৫% ভোট যায় তৃণমূলের দিকে। এই ভোট তৃণমূলের পকেটেই আসবে এটা নিশ্চিত। বাকি ভোটারদের বড় অংশ জুড়ে রয়েছে তেলুগু ভোট। এই তেলুগু ভোটের পরিমাণ প্রায় তিরিশ হাজার।
২০২২ সালের পুর নির্বাচনে ৩৫টি ওয়ার্ডের খড়গপুর পুরসভার আটটি ওয়ার্ডে তেলুগু কাউন্সিলর নির্বাচিত হয়েছেন। কিন্তু গত সাড়ে তিন বছরে সেইভাবে তেলুগু কাউন্সিলরদের স্বীকৃতি দেওয়া হয়নি। এই ফ্যাক্টর আগামী নির্বাচনে প্রভাব ফেলবে বুঝেই শহর মহিলা তৃণমূল কংগ্রেসের দায়িত্ব সম্প্রতি দেওয়া হয়েছে কাউন্সিলার ডি বাসন্তীর কাঁধে। বাসন্তীকে সামনে রেখেই আগামী নির্বাচনে ঝাঁপিয়ে পড়তে চাইছে তৃণমূল কংগ্রেস। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক তৃণমূল কাউন্সিলর বলেন, তেলুগু ভোটারদের বেশিরভাগ কেন্দ্রে কারা ক্ষমতায় রয়েছে সেই দিকে তাকিয়ে ভোট দেয়। আর এই জায়গাতেই গত কয়েকটি নির্বাচনে টেক্কা দিচ্ছে বিজেপি। তাই রাজ্যে মমতা ব্যানার্জির দেওয়া প্রকল্পের সুবিধে সমস্ত জাতি সম্প্রদায়ের লোকেরা কিভাবে ঘরে বসে পাচ্ছেন সেই প্রচার জোর কদমে চালাতে চায় রাজ্যের শাসক দল।
বিজেপির মূল ভোটব্যাঙ্ক রেল এলাকার ভোট। নির্বাচনের আগে আরপিএফ এবং রেল আধিকারিকদের একাংশকে ব্যবহার করে রেলের বস্তিতে বস্তিতে উচ্ছেদের ভয় দেখিয়ে ভোট করানো হয়। আরপিএফ এবং রেলের এই ভয় কাটাতে রেলের বিভিন্ন ইস্যু নিয়ে মেদিনীপুরের বৈঠকে প্রবল আন্দোলন শুরু করার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে খড়গপুর তৃণমূল নেতৃত্বকে। ২৭ নং ওয়ার্ডে অফিসার্স বাংলোর পাশের রাস্তা ফের রেল কর্তৃপক্ষ বন্ধ করে দিয়েছেন। এই বন্ধ রাস্তা খোলার জন্য তৃণমূল ফের জোরদার আন্দোলনে নামবে এবং রেল কর্তৃপক্ষকে চাপে রাখবে। মেদিনীপুরের এই গোপন বৈঠক নিয়ে কোনও তৃণমূল নেতাই মুখ খুলতে চাননি। এই বৈঠকে শহর তৃণমূল নেতৃত্বকে আরও একগুচ্ছ নির্দেশ দেওয়া হয়েছে বলে জানা গিয়েছে। প্রার্থী যিনিই হন সকলে যেন এক জোট হয়ে কাজ করে সেই দিকে নজর রাখতে বলা হয়েছে। বিগত কয়েকটি নির্বাচনে প্রার্থী বাছাই নিয়ে অসন্তোষের জেরে ভুগতে হয়েছে তৃণমূল কংগ্রেসকে, তার পুনরাবৃত্তি আগামী বিধানসভা নির্বাচনে যাতে না হয় তা নিশ্চিত করতে বলা হয়েছে তৃণমূল শহর নেতৃত্বকে।
খড়গপুর শহরে দল পরিচালনার জন্য জেলা তৃণমূল সভাপতি সুজয় হাজরাকে কো অর্ডিনেটর করে একটি কোর কমিটি তৈরি করে দেওয়া হয়েছে। পরবর্তীকালে সেই কমিটিতে জেলা তৃণমূল সভাপতির সুপারিশে আরও একজনকে অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। তৃণমূল দলীয় সূত্রে জানা গিয়েছে দলের শীর্ষ নেতৃত্ব সুজয় হাজরার উপরে পুরোপুরি বিশ্বাস রাখতে পারছেন না। তাই খড়গপুর সদরে নির্বাচন পরিচালনা করার জন্য জেলার সহ-সভাপতি তথা বিধায়ক অজিত মাইতিকে দায়িত্ব দেওয়া হতে পারে।