• ভোটের ঠেলায় স্টেশনে ছটের গান বাজাচ্ছে রেল
    আনন্দবাজার | ২৬ অক্টোবর ২০২৫
  • বিহারে আসন্ন ভোটের কথা মাথায় রেখে দেশের প্রধান ৩০টি স্টেশনে আজ থেকে ছট পুজোর গান চালানো-ভিডিয়ো দেখানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছে নরেন্দ্র মোদী সরকার। লক্ষ্য, ছট পুজোর সময়ে বিহারে ফেরা পরিযায়ীদের বার্তা দেওয়া। তবে ভোটের কথা মাথায় রেখে অতীতে এ ধরনের ঘটনা হয়েছে বলে মনে করতে পারছেন না রেলকর্তারাই।

    রেল জানিয়েছে, দক্ষিণ-পূর্ব রেলের খড়্গপুর ডিভিশনে ভোজপুরী লোকসঙ্গীত বাজানো শুরু হয়েছে। দক্ষিণ-পূর্ব রেলের রাঁচি, টাটানগর, বোকারো স্টিল সিটি, আদ্রা, পুরুলিয়া-সহ ১০টি স্টেশনের তালিকায় খড়্গপুর ডিভিশনের সদর খড়্গপুর ছাড়াও রয়েছে সাঁতরাগাছি, শালিমার, বালেশ্বরের মতো স্টেশন।

    খড়্গপুর রেল ডিভিশনের সিনিয়র ডিভিশনাল কমার্শিয়াল ম্যানেজার নিশান্ত কুমার বলেন, ‘‘আমি তো প্রথম ছটে এমন গান বাজাতে দেখছি। এটা জ়োনের জনসংযোগ বিভাগ থেকে যে নির্দেশ এসেছে তা পালন করা হচ্ছে।’’ দক্ষিণ-পূর্ব রেলের জনসংযোগ আধিকারিক সোপান দত্তও মানছেন, ‘‘দক্ষিণ-পূর্ব রেলে এই প্রথম ছটে গান বাজছে। এই সিদ্ধান্তের কথা আমাদের ভারতীয় রেল থেকে জানানো হয়েছে।’’

    রেলকর্তারাও ঘরোয়া ভাবে মেনে নিচ্ছেন, যা কিছু হচ্ছে তা বিহারের ভোটের কথা ভেবেই হচ্ছে। ছটে বাড়ি ফ‌েরার পথে যাতে কোনও অব্যবস্থা না হয় তার জন্য ট্রেনের সংখ্যা এক ধাপে অনেকটাই বাড়িয়ে দিয়েছে রেল। ৩ হাজার অতিরিক্ত ট্রেন চালানো হচ্ছে। যাতে ফি বছরের মতো পদপিষ্টের ঘটনা না ঘটে, তার জন্য গুরুত্বপূর্ণ স্টেশনগুলিতে ভিড় নিয়ন্ত্রণে ‘হোল্ডিং’ এলাকা করেছে রেল। ওই অংশে পানীয় জল, ট্রেনের সময়ের ডিসপ্লে বোর্ড এবং অতিরিক্ত বুকিং কাউন্টারের ব্যবস্থা করা হয়েছে। সাধারণ কামরার যাত্রীদের ট্রেনে ওঠার ক্ষেত্রে হুড়োহুড়ি এড়াতে প্ল্যাটফর্মে রক্ষী মোতায়েন করা হয়েছে। যাত্রীদের ট্রেনে ওঠার ছবি, ভিডিয়ো তোলা হচ্ছে। কুম্ভের অব্যবস্থার পর এ বার ব্যবস্থাপনার মসৃণ ছবি তুলে ধরতে রেলের তরফে ওই সব ছবি সমাজমাধ্যমে দেওয়া হচ্ছে। ডিভিশন, জ়োন ছাড়াও সরাসরি রেলবোর্ড থেকে সিসি ক্যামেরার মাধ্যমে চালানো হচ্ছে নজরদারি। আর পরিযায়ীদের মন জয়ে বাজছে ছটের গান।

    কিন্তু যাত্রীদের একাংশের প্রশ্ন, নানা উৎসবের দেশ ভারতে শুধুমাত্র ছটে কেন গান বাজানো হচ্ছে? দুর্গাপুজো, দীপাবলি, ইদ বা বড়দিনে তো এমন উদ্যোগ দেখা যায়নি। তা ছাড়া,স্টেশনে লাগাতার গানের ভিডিয়ো চালানোয় যাত্রীদের একাংশ অসন্তুষ্ট। খড়্গপুর রেল যাত্রী সংগঠনের সম্পাদক জয় দত্ত বলেন, ‘‘রেল স্টেশন তো উৎসবের মঞ্চ নয়। সেখানেমানুষ নানা প্রয়োজনে ট্রেন ধরতে আসেন। কেউ যদি প্রিয়জনের মৃত্যুসংবাদ পেয়ে ট্রেন ধরতে আসেন, তাঁর কাছে এমন গান কতটা বিরক্তিকর তা রেলের ভাবা উচিত।’’ তা ছাড়া, উচ্চস্বরে গানের গুঁতোয় অনেক যাত্রীই ট্রেনের ঘোষণা শুনতে পাচ্ছেন না।
  • Link to this news (আনন্দবাজার)