• ডাক্তার সেজে ঘুরতে পারে যে কেউ, দেখিয়ে দিল পিজি-কাণ্ড
    আনন্দবাজার | ২৬ অক্টোবর ২০২৫
  • পরনে আকাশি রঙের হাফ হাতা ফতুয়া, জিন্‌স। মাথায় জামার রঙের দড়ি বাঁধা টুপি। চোখে চশমা, পায়ে স্নিকার্স। গলার কাছে ঝুলছে সার্জিকাল মাস্ক। এসএসকেএমের ট্রমা কেয়ারের শৌচাগারে এক নাবালিকাকে ধর্ষণের ঘটনায় অভিযুক্ত এমনই পোশাক পরে ছিল বলে সিসি ক্যামেরার ফুটেজে ধরা পড়েছিল। কিন্তু এমন পোশাক তো চিকিৎসক ও স্বাস্থ্যকর্মীদের। তা হলে তা বেসরকারি সংস্থার চুক্তিভিত্তিক এক নিরাপত্তারক্ষীর পরনে কেন?

    এসএসকেএমের ঘটনার পরে এই পোশাক নিয়েই উঠেছে প্রশ্ন। স্বাস্থ্য শিবিরের একাংশের বক্তব্য, তা হলে তো যে কেউ এমন পোশাক পরে, গলায় স্টেথোস্কোপ ঝুলিয়ে চিকিৎসক পরিচয় দিয়ে হাসপাতালে ঘুরে বেড়াতে পারে। তাকে ধরার কোনও উপায়ও নেই! কিন্তু এমন অবাঞ্ছিত ঘটনা এড়াতে স্বাস্থ্য প্রশাসনের পরবর্তী পরিকল্পনা কী, তা অবশ্য এখনও স্পষ্ট হয়নি। সদুত্তর মেলেনি স্বাস্থ্যকর্তাদের কাছ থেকেও।

    স্বাস্থ্য শিবিরের অন্দরের খবর, নীল বা আকাশি রঙের ওই পোশাক সাধারণত অপারেশন থিয়েটারে চিকিৎসকেরা পরেন। সহযোগী স্বাস্থ্যকর্মীরাও ওই পোশাক ব্যবহার করেন। অনেকের আবার জামার বুক-পকেটের কাছে সংশ্লিষ্ট হাসপাতালের লোগো-নামের কাপড়ের স্টিকার সেলাই করা থাকে। কিন্তু সরকারি হাসপাতালের এই পোশাক যে শুধু সেখানেই পাওয়া যায়, তেমনটা নয় বলে জানাচ্ছেন খোদ স্বাস্থ্যকর্তারাই। কারণ, বিভিন্ন হাসপাতালের বাইরের দোকানে বা খোলা বাজারে এবং অনলাইনে রমরমিয়ে বিক্রি হয় ওই সমস্ত পোশাক, টুপি। যা বিক্রির ক্ষেত্রে সরকারি কোনও নিয়ন্ত্রণ নেই। এই জায়গায় আরও একটি আশঙ্কার কথাও জানাচ্ছেন স্বাস্থ্য আধিকারিকেরা। তা হল, দুর্বৃত্ত নিজের কাজ হাসিল করতে এমন পোশাক যে কোনও জায়গা থেকে বানিয়েও নিতে পারে। তা হলে প্রশ্ন, অতি সহজে সরকারি হাসপাতালে চিকিৎসক বা স্বাস্থ্যকর্মী সেজে ঘুরে বেড়ানো ভুয়ো লোকদের আটকানোর উপায় কী? এক স্বাস্থ্যকর্তার কথায়, ‘‘বিষয়টি নিয়ে চিন্তাভাবনা করা হচ্ছে।’’

    খোদ স্বাস্থ্য শিবিরের একটি সূত্রের খবর, কম-বেশি প্রতিটি মেডিক্যাল কলেজে যে দালাল-চক্র সক্রিয়, তাদের একাংশ এখন সাধারণের কাছে নিজেদের বিশ্বাসযোগ্য করে তুলতে এবং সহজে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের চোখে ধুলো দিতে এই ধরনের পোশাক ব্যবহার করছে। তা হলে উপায় কী? স্বাস্থ্য আধিকারিকদের দাবি, মেডিক্যাল কলেজগুলিতে কোথায় দালালেরা ঘুরে বেড়াচ্ছে, তা নজরে রাখার দায়িত্ব সংশ্লিষ্ট হাসপাতালে কর্তব্যরত পুলিশকর্মীদের। তাদের নিজস্ব নজরদারিতেই তা ধরা পড়ার কথা। কিন্তু সেই কাজ যে কতটা গা-ছাড়া ভাবে হচ্ছে, তা-ও স্পষ্ট এসএসকেএমের ঘটনায়।

    শনিবার প্রতিটি হাসপাতালের নিরাপত্তা ব্যবস্থা নিয়ে নবান্নে উচ্চ পর্যায়ের বৈঠকে বেসরকারি নিরাপত্তারক্ষীদের নির্দিষ্ট পোশাক ও পরিচয়পত্র ঝোলানো বাধ্যতামূলক করা হয়েছে। কিন্তু চিকিৎসক বা স্বাস্থ্যকর্মীদের পোশাক পরে কেউ এলে তাঁকে চেনার উপায় নিয়ে কোনও সুনির্দিষ্ট পথ বেরোয়নি। এমনকি, সরকারি হাসপাতালের চিকিৎসক, স্বাস্থ্যকর্মীদেরও কাজের সময়ে বেসরকারি হাসপাতালের মতো পরিচয়পত্র ঝোলানোর কথা বলা হয়নি। তবে, সরকারি হাসপাতালে জুনিয়র চিকিৎসকদের এক বিল্ডিং থেকে অন্য বিল্ডিংয়ে ছুটে বেড়াতে হয়। কোনও কারণে পরিচয়পত্র ভুলে গেলে, তাঁকে যদি ঢুকতে দেওয়া না হয় এবং তাতে যদি রোগীর ক্ষতি হয়, সেই দায় কার উপরে বর্তাবে, এমন প্রশ্ন তুলেছেন চিকিৎসকদের একাংশ।

    তবে চিকিৎসকদের পোশাক বা স্টেথোস্কোপের মতো চিকিৎসা সরঞ্জাম কিনতে গেলে নির্দিষ্ট প্রমাণপত্র দাখিল করার নিয়ম চালুর দাবিও তুলেছেন ওই চিকিৎসকেরা। রাজ্যের এক মেডিক্যাল কলেজের শীর্ষ আধিকারিকের কথায়, ‘‘প্রতিটি হাসপাতাল আলাদা-আলাদা করে নিজস্ব নিয়ম চালু করলেও তা পুরোপুরি বাস্তবায়িত হওয়াটা সমস্যার। তার থেকে স্বাস্থ্য দফতরের তরফে এই পোশাক ও চিকিৎসা সরঞ্জামের বিষয়ে সুর্নির্দিষ্ট নির্দেশিকা জারি করা প্রয়োজন।’’
  • Link to this news (আনন্দবাজার)