স্মার্টফোন যেন সাক্ষাৎ বোমা! তদন্তের রিপোর্ট দেখে চোখ কপালে উঠল
আজকাল | ২৬ অক্টোবর ২০২৫
আজকাল ওয়েবডেস্ক: হায়দরাবাদ থেকে বেঙ্গালুরুগামী একটি প্রাইভেট স্লিপার বাসে ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ডে ইতিমধ্যে মৃত্যু হয়েছে ২০ জনের, যার মধ্যে ১৯ জন যাত্রী ও এক মোটরসাইকেল আরোহী রয়েছেন। শুক্রবার গভীর রাতে এই দুর্ঘটনাটি ঘটে, যখন বাসটি একটি বাইকে ধাক্কা মেরে আগুনে পুড়ে যায়।
অন্ধ্রপ্রদেশ পুলিশের প্রাথমিক তদন্তে জানা গেছে, দুর্ঘটনার পর বাসের নিচে আটকে পড়া দুই-চাকার গাড়িটির পেট্রোল ট্যাংক বিস্ফোরিত হয়, যা থেকে আগুন ছড়িয়ে পড়ে পুরো গাড়িতে। পরবর্তীতে বাসে থাকা দুটি ১২ কেভি ব্যাটারি ও প্রচুর পরিমাণে স্মার্টফোনের লিথিয়াম-আয়ন ব্যাটারি আগুনের তীব্রতা বাড়িয়ে দেয়।
ফরেনসিক ও অগ্নি নির্বাপক দপ্তরের প্রাথমিক রিপোর্ট অনুযায়ী, বাসটিতে প্রায় ২৩৪টি স্মার্টফোন ছিল, যার বাজারমূল্য প্রায় ৪৬ লক্ষ টাকা। হায়দরাবাদের এক ব্যবসায়ী এই ফোনগুলো লজিস্টিক সার্ভিসের মাধ্যমে বেঙ্গালুরু পাঠাচ্ছিলেন। বিশেষজ্ঞদের মতে, আগুন লাগার পর ফোনগুলির লিথিয়াম ব্যাটারি একে একে বিস্ফোরিত হতে থাকে, ফলে আগুন মুহূর্তে ছড়িয়ে পড়ে পুরো কেবিন জুড়ে।
তবে ডেপুটি ইনস্পেক্টর জেনারেল কোয়া প্রভীন বলেছেন, আগুনের প্রধান উৎস ছিল বাসের দুটি ১২ কেভি ব্যাটারি। তিনি জানান, “বাইকের ফুয়েল ট্যাংকটি প্রথমে বিস্ফোরিত হলেও সেটি আগুনের মূল কারণ নয়। আগুনের কেন্দ্রবিন্দু ছিল বাসের মূল দরজার পাশে থাকা দুটি ব্যাটারি, যেগুলো বিস্ফোরিত হয়ে অগ্নিকাণ্ডকে মারাত্মক করে তোলে।”
ডিআইজি প্রভীন আরও জানান, “এই দুর্ঘটনায় দুটি জায়গায় দহন হয়েছে। প্রথমটি মোটরসাইকেলের পেট্রোল ট্যাংক এবং দ্বিতীয়টি বাসের ব্যাটারি টুলকিটে।” তিনি বলেন, বাসের অভ্যন্তরে ব্যবহৃত দাহ্য পদার্থ ও ধাতব রঙও আগুন ছড়াতে সহায়ক ছিল।
আগুনের তীব্রতায় বাসের অ্যালুমিনিয়াম মেঝে পর্যন্ত গলে যায়। দমকল বাহিনী ঘটনাস্থলে পৌঁছালেও আগুন এতটাই দ্রুত ছড়িয়ে পড়েছিল যে অধিকাংশ যাত্রীকে বাঁচানো সম্ভব হয়নি।
দুর্ঘটনার সময় বাসটিতে মোট ৪৪ জন যাত্রী ছিলেন। কয়েকজন জানালা ভেঙে বা সাহায্যে পালাতে সক্ষম হন। বাসের চালক মিরিয়ালা লক্ষ্মাইয়া আগুন লাগার পর যাত্রী দরজা দিয়ে লাফিয়ে পালান এবং পরে পুলিশ তাকে গ্রেপ্তার করে। পুলিশ সুপার বিক্রান্ত পাটিল জানান, চালক প্রথমে ঘটনাস্থল থেকে পালিয়ে গিয়েছিলেন, তবে পরে তাকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য আটক করা হয়েছে।
লক্ষ্মাইয়া পালানোর আগে নীচের লাগেজ অংশে ঘুমিয়ে থাকা সহকারী চালক শিব নারায়ণকে জাগিয়ে তোলেন। দু’জনে মিলে লোহার রড দিয়ে বাসের জানালা ভাঙতে শুরু করেন, যাতে কিছু যাত্রী বেরিয়ে আসতে পারেন। উপস্থিত স্থানীয়রা ও ভেতরের যাত্রীরা আরও কিছু জানালা ভেঙে পালানোর চেষ্টা করেন।
তবে কয়েক মিনিটের মধ্যেই আগুন পুরো বাসটিকে গ্রাস করে ফেলে। এই ঘটনায় ২০ জনের মৃত্যু নিশ্চিত হয়েছে। পুলিশ চালককে অতিরিক্ত গতি ও অবহেলার অভিযোগে ভারতীয় দণ্ডবিধির অধীনে অভিযুক্ত করেছে।
এদিকে, নিহতদের অধিকাংশের দেহ সম্পূর্ণভাবে পুড়ে যাওয়ায় তাদের পরিচয় শনাক্ত করতে ডিএনএ পরীক্ষা শুরু হয়েছে। জেলা প্রশাসন জানিয়েছে, সোমবারের মধ্যে ডিএনএ প্রোফাইলিং সম্পন্ন হবে। এই মর্মান্তিক দুর্ঘটনা অন্ধ্রপ্রদেশে সাম্প্রতিক কালের অন্যতম ভয়াবহ সড়ক দুর্ঘটনা হিসেবে চিহ্নিত হয়েছে, যা আবারও প্রশ্ন তুলেছে বেসরকারি বাস পরিবহনের নিরাপত্তা মান নিয়ে।