• ইন্টারপোলের জালে লরেন্স বিষ্ণোই গ্যাংয়ের সদস্য! মার্কিন মুলুক থেকে দিল্লি বিমানবন্দরে নামতেই গ্রেপ্তার...
    আজকাল | ২৬ অক্টোবর ২০২৫
  • আজকাল ওয়েবডেস্ক:  কুখ্যাত লরেন্স বিষ্ণোই গ্যাংয়ের এক সদস্য লখবিন্দর কুমারকে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র থেকে প্রত্যর্পণ করে দিল্লির ইন্দিরা গান্ধী আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে গ্রেপ্তার করেছে হরিয়ানা পুলিশ। কেন্দ্রীয় তদন্ত সংস্থা সিবিআইয়ের সমন্বয়ে পরিচালিত এই আন্তর্জাতিক অভিযানের ফলেই পলাতক গ্যাংস্টারকে দেশে ফিরিয়ে আনা সম্ভব হয়েছে।

    অভিযোগ, লখবিন্দর কুমারের বিরুদ্ধে হরিয়ানায় একাধিক অপরাধমূলক মামলা রয়েছে। যার মধ্যে রয়েছে চাঁদাবাজি, ভয় দেখানো, অবৈধ আগ্নেয়াস্ত্র রাখার অভিযোগ, এমনকি হত্যাচেষ্টার মামলাও। সিবিআই জানিয়েছে, হরিয়ানা পুলিশের অনুরোধে ২০২৪ সালের ২৬ অক্টোবর ইন্টারপোলের মাধ্যমে কুমারের নামে রেড নোটিশ জারি করা হয়েছিল। এরপর প্রায় এক বছর পরে, অর্থাৎ ২০২৫ সালের ২৫ অক্টোবর, মার্কিন কর্তৃপক্ষ তাকে ভারতে প্রত্যর্পণ করে।

    সিবিআইয়ের মুখপাত্র এক বিবৃতিতে জানান, “লখবিন্দর কুমারকে হরিয়ানা পুলিশের অনুরোধে ইন্টারপোলের সহযোগিতায় দেশে ফেরানো হয়েছে। দিল্লি বিমানবন্দরে নামার সঙ্গে সঙ্গেই হরিয়ানা পুলিশের একটি বিশেষ দল তাকে গ্রেপ্তার করে।”

    লখবিন্দর কুমার লরেন্স বিষ্ণোই গ্যাংয়ের সক্রিয় সদস্য হিসেবে পরিচিত। এই গ্যাং বর্তমানে ভারতের অন্যতম কুখ্যাত অপরাধচক্র, যারা চাঁদাবাজি, খুন ও মাদক পাচারের মতো নানা অপরাধে জড়িত।

    উল্লেখযোগ্যভাবে, কানাডা সম্প্রতি লরেন্স বিষ্ণোই গ্যাংকে ‘সন্ত্রাসবাদী সংগঠন’ হিসেবে তালিকাভুক্ত করেছে। কানাডার মন্ত্রী গ্যারি আনন্দসাঙ্গারী এক বিবৃতিতে বলেন, “হিংসা ও সন্ত্রাসের কোনো স্থান নেই কানাডায়। বিশেষ করে এমন গোষ্ঠীগুলোর ক্ষেত্রে, যারা নির্দিষ্ট সম্প্রদায়কে লক্ষ্য করে ভয় ও আতঙ্কের পরিবেশ তৈরি করে।”

    মন্ত্রী আরও বলেন, “বিষ্ণোই গ্যাং দীর্ঘদিন ধরে কানাডা এবং বিদেশে বসবাসরত ভারতীয় সম্প্রদায়ের মধ্যে সন্ত্রাস, ভয় ও অর্থনৈতিক চাঁদাবাজি চালিয়ে আসছে। তাদের সন্ত্রাসী তালিকাভুক্ত করা হলে সরকার তাদের বিরুদ্ধে আরও কার্যকর আইনি পদক্ষেপ নিতে পারবে।”

    এই ঘটনাটি এমন এক সময়ে ঘটেছে, যখন জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা অজিত ডোভাল দিল্লিতে কানাডার জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা নাথালি দ্রোয়ানের সঙ্গে বৈঠক করেন। দুই দেশের মধ্যে গ্যাংস্টার-সংক্রান্ত অপরাধ ও আন্তঃদেশীয় অপরাধচক্র রোধে সহযোগিতা নিয়ে আলোচনা হয়েছিল। অন্যদিকে, লরেন্স বিষ্ণোই গ্যাংয়ের সহযোগী সংগঠন গোল্ডি ব্রার সিন্ডিকেট-এর এক সদস্যকেও সম্প্রতি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে আটক করা হয়েছে। রাজস্থান অ্যান্টি-গ্যাংস্টার টাস্ক ফোর্সের  সমন্বয়ে মার্কিন কর্তৃপক্ষ গ্যাংস্টার অমিত শর্মা ওরফে জ্যাক পণ্ডিতকে গ্রেপ্তার করে।

    রাজস্থানের অতিরিক্ত পুলিশ মহাপরিদর্শক দীনেশ এম. এন. জানান, শর্মা দীর্ঘদিন বিদেশে বসে গ্যাংয়ের চাঁদাবাজি ও মানি লন্ডারিং নেটওয়ার্ক পরিচালনা করছিল। তিনি বিদেশে পালিয়ে থাকা অপরাধীদের আশ্রয়, অর্থ ও জাল নথিপত্র সরবরাহে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছেন।

    ভারতের সিবিআই ইন্টারপোল শাখা বর্তমানে অমিত শর্মার প্রত্যর্পণের প্রক্রিয়াও চালাচ্ছে। কর্মকর্তারা জানান, বিদেশে পালিয়ে থাকা বিষ্ণোই ও ব্রার গ্যাংয়ের আরও কয়েকজন সক্রিয় সদস্যের অবস্থান চিহ্নিত করা হয়েছে এবং তাদের ফিরিয়ে আনার আইনি প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে।

    লখবিন্দর কুমারের গ্রেপ্তারি ভারতের আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর জন্য একটি বড় সাফল্য হিসেবে দেখা হচ্ছে, যা আন্তর্জাতিক অপরাধচক্র দমন ও সন্ত্রাসবাদের বিরুদ্ধে লড়াইয়ে এক নতুন অধ্যায়ের সূচনা করল।
  • Link to this news (আজকাল)