ময়নাগুড়ি শহরে হাতির ‘তাণ্ডব’, নিরাপত্তায় জারি হল ১৪৪ ধারা
প্রতিদিন | ২৬ অক্টোবর ২০২৫
শান্তনু কর, জলপাইগুড়ি: হাতি ঢুকেছে শহরে। খবর করতে গিয়ে হাতির হামলায় জখম সাংবাদিক। অল্পের জন্য প্রাণরক্ষা। দিনভর হাতিটিকে কার্যত ঘেরাও করে রাখেন বনকর্মীরা। ১৪৪ ধারা জারি করা হয় এলাকায়। সন্ধ্যার পর দলছুট মাকনা হাতিটিকে জঙ্গলে ফেরানো হয়েছে বলে জানিয়েছে বনদপ্তর।
শনিবার তখন ভোর ছ’টা। দিনের আলো সদ্য স্পষ্ট হয়েছে। এরইমধ্যে জলপাইগুড়ি ময়নাগুড়ি শহর এলাকায় দাড়িয়ে থাকা একটি মাকনা হাতিকে কেন্দ্র করে চাঞ্চল্য ছড়িয়ে পড়ে। আতঙ্কিত হয়ে পড়েন ময়নাগুড়ি শহরের পেটকাটি এলাকার বাসিন্দারা। খবর পেয়ে একমুহূর্ত দেরি করেননি বনকর্মীরা। বন বিভাগের চারটি স্কোয়াডকে ঘটনাস্থলে পাঠানো হয়। পরে আরও দুটি স্কোয়াডকে যুক্ত করা হয়। আসে ময়নাগুড়ি থানার পুলিশও। বাড়তে থাকে কৌতূহলী মানুষের ভিড়। এরই মধ্যে ক্ষতিগ্রস্ত হয় একটি বাড়ি। কলাবাগান, চাষের ক্ষেতও ক্ষতিগ্রস্ত করে মানুষের ভিড়ে কার্যন্ত বিভ্রান্ত হয়ে পড়ে হাতিটি। অতি উৎসাহে স্থানীয় কয়েকজন আগ বাড়িয়ে শব্দবাজি ফাটিয়ে আরও বেশি বিভ্রান্ত করে তোলে হাতিটিকে। সেই খবর করতে গিয়েছিলেন এক সাংবাদিক। আচমকা হাতিটি তাঁর কাছাকাছি চলে আসে। শুঁড়ে পেঁচিয়ে আছাড় মারার চেষ্টা করলে ওই সাংবাদিক একটা বাড়ির বেড়া টপকে ভিতরে ঢুকে পড়েন। হাতিটিও বেড়া ভেঙে ভেতরে ঢুকে পিছনের পা দিয়ে আঘাত করে। সেখান থেকে কোনওমতে পালিয়ে বাঁচেন সাংবাদিক। এরপর তাঁকে ময়নাগুড়ি হাসপাতালে ভর্তি করা হয়।
এদিকে হাতিটি ময়নাগুড়ি শহর এলাকা ছেড়ে খাগড়াবাড়ি-১ গ্রাম পঞ্চায়েত এলাকায় ঢুকে কলাখাওয়া নদীর পাড়ে বেশ কিছুক্ষণ ঘোরাঘুরি করে। পরে সেখান থেকে ফের রেল সেতু সংলগ্ন শহরের ১ নম্বর ওয়ার্ডের পেটকাটি এলাকায় চলে আসে। মানুষকে সরাতে এলাকায় ১৪৪ ধারা জারি করে প্রশাসন। সহকারী বনাধিকারিক রাজীব দে জানান, জলঢাকা নদী পাড় হয়ে গরুমারা অথবা নাথুয়ার জঙ্গল থেকে হাতিটি ময়নাগুড়ি শহরে ঢুকে পড়ে। হাতিটিকে নজরদারির মধ্যে রাখা হয়েছে। পাশেই রেললাইন, তাই রেলকেও সতর্ক করা হয়েছে। দিনভর নদীর পাড়ে ঝোপের আড়ালে দাঁড়িয়ে থাকে হাতিটি। সন্ধ্যার পর গরুমারার জঙ্গলে ফেরানো হয়েছে।
ঘটনাস্থল থেকে খুব কাছেই ময়নাগুড়ির বানভাসি খাটোরবাড়ি, তারারবাড়ি এলাকা। এখনও কিছু মানুষ ত্রাণ শিবিরে রয়েছেন। তাঁদের নিরাপত্তায় বনকর্মী মোতায়েন রয়েছে। হাতিটি যাতে কোনওভাবেই সেই এলাকায় যেতে না পারে, তারজন্য সমস্ত রকমের পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে। পাশাপাশি লোকালয়ে হাতি চলে আসায় জঙ্গল সংলগ্নই ত্রাণ শিবিরগুলোর নিরাপত্তা আরও বাড়ানো হচ্ছে বলে বনদপ্তর জানিয়েছে।