• রাজ্যে হেলমেটবিহীন বাইকচালানোর প্রবণতা উদ্বেগজনকভাবে বৃদ্ধি পাচ্ছে
    দৈনিক স্টেটসম্যান | ২৭ অক্টোবর ২০২৫
  • রাজ্যে হেলমেট না পরে বাইক চালানোর প্রবণতা ক্রমেই বেড়ে চলেছে। পরিবহন দপ্তরের সর্বশেষ বৈঠকে উঠে আসা পরিসংখ্যান অনুযায়ী, ২০২২ সালে রাজ্যে ৯ লক্ষ ২৩ হাজার ৪১৬টি হেলমেটহীন বাইক চালানোর অভিযোগ নথিভুক্ত হয়েছিল। ২০২৩ সালে তা বেড়ে দাঁড়ায় ১০ লক্ষ ৯৬ হাজার ৬৩৮-এ। ২০২৪ সালে রেকর্ড করা হয় ১১ লক্ষ ৬৪ হাজার কেস। আর ২০২৫ সালের প্রথম পাঁচ মাসের মধ্যেই ৪ লক্ষ ৫৩ হাজার ৪৮৪টি ঘটনা নথিভুক্ত হয়েছে।

    এমতাবস্থায় পরিবহণ দপ্তরের একাংশের বক্তব্য অনুযায়ী, এই বৃদ্ধিই প্রমাণ করছে যে, সচেতনতা বৃদ্ধির প্রচেষ্টা সত্ত্বেও সাধারণ বাইক আরোহীদের মধ্যে নিরাপত্তা সংক্রান্ত শৃঙ্খলাবোধ এখনও যথেষ্ট নয়। শহরাঞ্চল ছাড়াও উপনগরী ও গ্রামীণ এলাকায় হেলমেটবিহীন বাইক চালনার প্রবণতা বৃদ্ধি চোখে পড়ার মতো।

    শুধু হেলমেটবিহীন বাইক চালানোই নয়, বাইক চালানোর সময় মোবাইলের হেডফোন ব্যবহার করে গান শোনা বা কথা বলার ঘটনায়ও যথেষ্ট উদ্বেগ বাড়ছে। পরিবহণ দপ্তরের তথ্য অনুযায়ী, ২০২৪ সালে এই ধরনের ২২,৩৪০টি কেস নথিভুক্ত হয়েছিল। চলতি বছরে মাত্র কয়েক মাসেই তা প্রায় দ্বিগুণ হয়ে ৪৫,১৪৬-এ পৌঁছেছে।

    পরিবহন দপ্তরের শীর্ষকর্তারা জানাচ্ছেন, ‘অনেক বাইক আরোহী বাড়ির কাছাকাছি যাতায়াতের সময় হেলমেট পরার প্রয়োজন অনুভব করেন না। দুর্ঘটনার বড় অংশই ঘটে বাড়ি থেকে দেড় কিলোমিটারের মধ্যে। বাড়ির কাছাকাছি এসে তাঁরা আচমকা গাড়ির গতি বাড়িয়ে দেন বা হেলমেট না পরে গন্তব্যে পৌঁছন। ফলে এই মুহূর্তে মারণ দুর্ঘটনার সম্ভাবনা বেড়ে যায়।’

    পরিবহন প্রতিমন্ত্রী দিলীপ মণ্ডল বলেন, ‘কোনো আইন থাকলেই দুর্ঘটনার সংখ্যা কমবে না, মানুষের সচেতনতা প্রয়োজন। লক্ষ লক্ষ টাকা খরচ করে বাইক কিনছি, অথচ হেলমেট পরছি না, এটা করা যাবে না। মুখ্যমন্ত্রী এই ধরনের দুর্ঘটনা কমাতে “সেফ ড্রাইভ সেভ লাইভ” কর্মসূচি শুরু করেছেন। জেলাভিত্তিক পুলিশ প্রশাসন ও পরিবহন দপ্তর একত্রে নজরদারি চালাচ্ছে, সচেতনতা শিবিরও চলছে। আশা করি, সাধারণ মানুষ সঠিকভাবে সাড়া দেবেন।’

    এ বিষয়ে বিশেষজ্ঞরা বলছেন, রাজ্যে মোট বাইক দুর্ঘটনার অন্তত অর্ধেকেরও বেশি ক্ষেত্রে হেলমেটবিহীন চালকদের মৃত্যু হয়েছে। এক্ষেত্রে শুধুমাত্র আইন প্রয়োগ করে কাজ হবে না, স্কুল-কলেজ ও কর্মক্ষেত্রে সচেতনতা বৃদ্ধি জরুরি। পাশাপাশি প্রযুক্তিগত নজরদারির জন্য ক্যামেরা ও ই-চালানের সংখ্যা বাড়ানোর পরামর্শ দিচ্ছেন পরিবহন বিশেষজ্ঞরা।

    ইতিমধ্যেই পরিবহন দপ্তর জেলা প্রশাসনগুলিকে আরও কঠোর পদক্ষেপ নিতে নির্দেশ দিয়েছে। পরিসংখ্যান, বাস্তব চিত্র এবং দুর্ঘটনায়  মৃত্যু হারের হিসাব মাথায় রেখে রাজ্যের পরিবহন দপ্তর ও পুলিশ-প্রশাসন এবার হেলমেট না পরা এবং মোবাইল ব্যবহারের বিধিনিষেধ লঙ্ঘনের বিরুদ্ধে কঠোর নজরদারি চালাচ্ছে। তবে সচেতনতার এই অভাবের সংস্কৃতি বদলাতে কতটা সময় লাগবে— এটাই এখন বড় প্রশ্ন।
  • Link to this news (দৈনিক স্টেটসম্যান)