ঠেকুয়া-বাণিজ্যে ঝড়! জাতীয় ব্র্যান্ড গড়ে ভাইরাল পুরুলিয়ার দুই বন্ধু
প্রতিদিন | ২৭ অক্টোবর ২০২৫
সুমিত বিশ্বাস, পুরুলিয়া: কেউ অবাঙালি নন। পুরুলিয়ার রেলশহর আদ্রায় বসবাসের সুবাদে অর্থাৎ হিন্দি ভাষাভাষী মানুষজনের চারপাশে বেড়ে ওঠায় দুই কিশোর পরিবারেই ঠেকুয়া আপন হয়ে উঠেছে। ছটপুজোর সময় এই সুস্বাদু ঠেকুয়ার ব্যাপক চাহিদা। তা কিশোর বয়সেই বুঝতে পেরেছিল দুই। তারা সিদ্ধান্ত নেন, লেখাপড়ার ফাঁকেই ঠেকুয়া ব্যবসা করবেন। কিন্তু মাত্র ৫ মাসের এই ব্যবসায় দেশজুড়ে যে ঝড় উঠবে, তা স্বপ্নেও ভাবেননি প্রান্তিক পুরুলিয়ার ওই দুই বন্ধু। তাদের ‘শুদ্ধ স্বাদ’ ব্র্যান্ডের মার্কেট ভ্যালু কোটি টাকা! আর তাই ওই ব্র্যান্ডের ঠেকুয়া বাংলা ছাড়িয়ে ঝাড়খণ্ড, বিহার, উত্তরপ্রদেশ, মহারাষ্ট্রেও বিস্তার লাভ করেছে। একেবারে অনলাইনে এই ব্যবসায় প্রতিদিন গড়ে একশোর বেশি প্যাকেটের বরাত আসছে। আর সম্প্রতি উৎসবের মরশুমে তা বেড়ে গিয়েছে অনেকটাই।ছটপুজোর সময়ে বরাত সামাল দিতে হিমশিম খাচ্ছে ওই দুই কিশোর।
জয়ন্ত কর্মকার ও কৈলাশ বাউরি। টিনএজ ছাড়িয়ে এখনও তারা তরুণ হয়নি, দু’জনেরই বয়স ১৭। জয়ন্তর বাড়ি পুরুলিয়ার আদ্রা থানার কাটারাঙ্গুনিতে। কৈলাস থাকে আদ্রার লোয়ার বেনিয়াশোলে। বর্তমানে জয়ন্ত আদ্রার বেকো হাইস্কুলের একাদশ শ্রেণির ছাত্র। কৈলাস দশম শ্রেণির পর আর লেখাপড়া করেনি। সোশাল মিডিয়াকে কাজে লাগিয়েই এমন বিপুল লক্ষ্মীলাভ ওই দুই কিশোরের। প্রথমে ফেসবুক, ইউটিউব, ইনস্টা, হোয়াটসঅ্যাপে ঠেকুয়া নিয়ে নানান গল্প পোস্ট করত তারা। রসনাতৃপ্তিতে ঠেকুয়া নিয়ে নানা মজার মজার কথা।
এসবের পর একেবারে ‘ব্র্যান্ড’ গড়ে বাজারে নেমে পড়া। সম্পূর্ণভাবে অনলাইন বাণিজ্য। নিজেদের ওয়েবসাইট https://shuddhswad.shop/ খুলে নামকরা অনলাইনের প্ল্যাটফর্মের সঙ্গে গাঁটছড়া বেঁধে তাদের এই ব্যবসা চলছে। এনিয়ে কৈলাস বাউরি বলে, “আমাদের ব্র্যান্ডের মার্কেট ভ্যালু এখন এক কোটি। ছটের আগে আমরা প্রচুর বরাত পেয়েছি।” সংখ্যাটা কত? কিন্তু ব্যবসার এই তথ্য তারা জানাতে চান না। জয়ন্ত কর্মকারের কথায়, “আমাদের বাড়িতেও কমবেশি ঠেকুয়া হয়। কিন্তু কৈলাসদের বাড়ির ঠেকুয়া খেয়েই আমরা দুই বন্ধু মিলে আলোচনা করি ঠেকুয়ার অনলাইন ব্যবসা করলে কেমন হয়? তারপর দু’জনে মিলেই কাজটা শুরু করি। এখন আমাদের টিমে আরও ১৫ জন রয়েছেl”
এই দুই কিশোর তাদের পরিবার-পরিজন এবং অনলাইনের মাধ্যমে ঠেকুয়া বানাতে শেখেন। কৈলাসের কথায়, “আমাদের কোম্পানি দেশীয় স্ন্যাকসের। আমরা ঠেকুয়া দিয়ে শুরু করলেও আগামী দিনে আরও অন্যান্য স্ন্যাক্স তৈরি করব। প্রথমে আমরা দু’জনেই এই কাজ শুরু করেছিলাম। ঠেকুয়া তৈরি, প্যাকেজিং সব নিজের হাতেই করতাম। তারপর বিক্রি বাড়তে থাকলে আমাদের টিমে এখন আমরা ছাড়া আরও ১৫ জন।” ওই দুই কিশোর এলাকার মানুষের কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করায় ওই দুই বন্ধু এখন সামাজিক মাধ্যমে ভাইরাল। তাদের ২৫০ গ্রামের একটি ঠেকুয়া প্যাকেটের দাম ২৯৯ টাকা। দেশীয় স্বাদে বাজিমাত করেছে এই ঠেকুয়া।
তবে কাজটা মোটেই সহজ ছিল না। পুঁজিতে যেমন প্রতিবন্ধকতা ছিল, তেমনই নানান বাধাও এসেছিল। অনেকে হাসাহাসি, কটাক্ষ করেছে। কিন্তু এখন কৈলাস-জয়ন্তরা দৃষ্টান্ত। ওই দুই কিশোরের স্বপ্ন ঠেকুয়াকে ঘিরে আন্তর্জাতিক বাজার দখল করা। দেশীয় বাজারে তাদের কোম্পানির স্ন্যাক্সের আরও বিস্তার ঘটানো।