• বাংলার পরিযায়ী শ্রমিকের রহস্যমৃত্যু যোগীরাজ্যে, ‘বাঙালি বিদ্বেষের জেরে খুন’, অভিযোগ তৃণমূলের
    প্রতিদিন | ২৭ অক্টোবর ২০২৫
  • দেব গোস্বামী, বোলপুর: বাংলার পরিযায়ী শ্রমিকের রহস্যমৃত্যু উত্তরপ্রদেশে। কানপুরে রেল লাইনের ধার থেকে উদ্ধার হল বীরভূমের বাসিন্দা প্রতীক হেমরমের দেহ। তাঁর দেহে একাধিক আঘাতের চিহ্ন পাওয়া গিয়েছে। যার জেরে অনুমান করা হচ্ছে কেউ বা কারা তাঁকে পিটিয়ে খুন করেছে। এদিকে ঘটনা প্রকাশ্যে আসতেই সরব হয়েছে তৃণমূল। শাসকদলের অভিযোগ, যোগীর জঙ্গলরাজে বাঙালি বিদ্বেষের জেরেই হত্যা করা হয়েছে বীরভূমের যুবককে।

    বীরভূমের পারুই থানার দামোদরপুর গ্রামের বাসিন্দা প্রতীক। একবছর আগে চামড়ার কারখানায় শ্রমিকের কাজ নিয়ে চেন্নাই গিয়েছিলেন তিনি। পরিবারের দাবি অনুযায়ী, শেষবার প্রতীকের সঙ্গে কথা হয়েছিল ২২ অক্টোবর। সেদিন তাঁর কথাবার্তায় কিছুটা অসঙ্গতি লক্ষ্য করেছিলেন পরিবারের সদস্যরা। মনে হয়েছিল, কোনও কারণে আতঙ্কে ছিলেন তিনি। তবে তখন বিষয়টি ততটা গুরুত্ব দেননি তাঁরা। এরপর শনিবার গভীর রাতে পারুই থানার মাধ্যমে পরিবার খবর পায়, উত্তরপ্রদেশের কানপুর জেলার গোবিন্দনগর থানা এলাকায় রেললাইনের ধারে প্রতীকের দেহ উদ্ধার হয়েছে। দেহে একাধিক আঘাতের চিহ্ন পাওয়া গিয়েছে। প্রাথমিকভাবে অনুমান, তাঁকে পিটিয়ে খুন করা হয়েছে।

    মৃতের পরিবারের দাবি, এটা কোনওভাবেই স্বাভাবিক মৃত্যু নয়। মৃতের স্ত্রী শর্মিলা হেমরম বলেন, “শেষবার ওঁর সঙ্গে যখন কথা হয়, মনে হয়েছিল আতঙ্কে রয়েছে। কিছু একটা লুকোচ্ছিল। তারপর আর ফোনে পাওয়া যায়নি। আমরা নিশ্চিত ওঁকে খুনই করা হয়েছে।” পরিবারের সদস্য নিমাই মুর্মু ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, “কাজ করতে গিয়েছিল চেন্নাই, অথচ মৃতদেহ মিলল উত্তরপ্রদেশে! কীভাবে ও এতদূর গেল তদন্ত করুক প্রশাসন।” এদিকে বীরভূম জেলা প্রশাসনের তরফে উত্তরপ্রদেশের সঙ্গে যোগাযোগ করা হয়েছে। সোমবার প্রতীকের দেহ রাজ্যে ফিরিয়ে আনা হবে।

    এদিকে বীরভূমের যুবকের মৃত্যুর ঘটনায় বাঙালি বিদ্বেষের অভিযোগ তুলেছে তৃণমূল। ডবল ইঞ্জিনের উত্তরপ্রদেশকে তোপ দেগে সোশাল মিডিয়ায় লেখা হয়েছে, ‘যোগী আদিত্যনাথ উত্তরপ্রদেশে তাঁর জঙ্গল রাজে বাঙালিদের উপর নিপীড়নকে এখন যেন রাজ্য রাজনীতির অংশ করে তুলেছেন। বিজেপির ‘ডবল ইঞ্জিন’ রাজ্যগুলিতে অন্যায়ভাবে বাঙালি নিপীড়ন এখন শুধুমাত্র আটক করা কিংবা দেশছাড়া করাতেই থেমে নেই, এখন সেটা হত্যার পর্যায়ে পৌঁছেছে। কানপুরে, এক বাঙালি আদিবাসী পরিযায়ী শ্রমিককে দিল্লি–কানপুর রেললাইনে নির্মমভাবে খুন করা হয়েছে, গোবিন্দনগর থানা থেকে সামান্য দূরত্বেই। এই হাড়হিম করা নৃশংসতা এক ভয়াবহ বাস্তবতাকে সামনে এনে দিয়েছে- পুলিশকে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে, যেন বিজেপির ভাড়াটে খুনিদের হাতে আমাদের বাংলার মানুষ নির্যাতিত হলেও তারা হস্তক্ষেপ না করে।’

    একইসঙ্গে লেখা হয়েছে, ‘বিজেপি এখন এমন একটা মিশনে নেমেছে, যেখানে গোটা দেশটাকেই বাঙালিদের জন্য বসবাসের অযোগ্য করে তোলা যায়। যাঁরা এই দেশের জন্য রক্ত ঝরিয়েছেন, আজ তাঁরাই বিতাড়িত হচ্ছেন, খুন হচ্ছেন। আর যদি এই ঘটনা আত্মসম্মানবোধ রয়েছে, এমন বাঙালিদের বিবেকে না নাড়া দেয়, তবে আর কী করা যাবে! এখন সময় এসেছে বুঝে নেওয়ার—আমাদের প্রকৃত শত্রু কারা, যারা আমাদের রক্ত চুষে খাচ্ছে, সেই সঙ্গে নিশ্চিত করার যে, বিজেপির পতন শুরু হোক এই বাংলার মাটি থেকেই, ২০২৬-এ।’
  • Link to this news (প্রতিদিন)