দিব্যেন্দু বিশ্বাস, নয়াদিল্লি: জার্নির দু’মাস আগেও দূরপাল্লার ট্রেনের স্লিপার ক্লাসে ওয়েটিং লিস্ট ২০০য়েরও বেশি! কেন্দ্রে দ্বিতীয়বার ক্ষমতায় আসার পর মোদি সরকার ঘোষণা করেছিল, প্রত্যেক রেল যাত্রী কনফার্মড টিকিট পাবেন। কিন্তু সাধারণ মেল, এক্সপ্রেস ট্রেনের সংখ্যা বৃদ্ধি করে ওয়েটিং লিস্ট শূন্যে নামিয়ে আনার প্রক্রিয়া আপাতত বিশ বাঁও জলেই রয়ে গিয়েছে। পরিবর্তে ক্রমশ দীর্ঘ হচ্ছে এর তালিকা। ‘পিক সিজনে’ তো বটেই। তথাকথিত ‘অফ সিজনে’ও পরিস্থিতির বিশেষ পরিবর্তন হচ্ছে না বলেই অভিযোগ যাত্রীদের একাংশের। এহেন অবস্থা সামাল দিতে এবার টিকিটের ‘অটো আপগ্রেডেশন’ পদ্ধতিকেই হাতিয়ার করছে রেলমন্ত্রক। অর্থাৎ, ট্রেনের কনফার্মড টিকিটধারীরা এই পদ্ধতিতে এক ধাপ অপেক্ষাকৃত উঁচু শ্রেণিতে ‘আপগ্রেড’ হয়ে যাবেন। এর ফলে ট্রেনে নিশ্চিত টিকিট পাবেন অপেক্ষমান রেল যাত্রীরা। এই ‘আপগ্রেডেশনে’র জন্য সংশ্লিষ্ট যাত্রীকে কোনও বাড়তি মূল্য চোকাতে হয় না। শর্ত একটাই। তা হল, টিকিট বুকিংয়ের সময় সংশ্লিষ্ট রেল যাত্রীকে ‘অটো আপগ্রেডেশন’ পদ্ধতিতে সম্মতি জানাতে হয়। একটি আরটিআইয়ের জবাবে দেখা যাচ্ছে, বিগত চারটি আর্থিক বছরে এভাবে ১ কোটি ৮৩ লক্ষ ৭২ হাজার ৭৯ জন যাত্রীর ‘অটো-আপগ্রেডেশন’ করেছে রেল। তাতেও অবশ্য সমস্যার স্থায়ী সুরাহার কোনও সম্ভাবনা দেখা যাচ্ছে না। স্লিপার শ্রেণিতেও ‘বুকিং উইন্ডো’ খোলার দু’মিনিটের মধ্যেই ওয়েটিং লিস্ট ২০০ পেরিয়ে যাচ্ছে। প্রশ্ন উঠছে, প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির আত্মনির্ভর ভারতে কি এবার ডিজিটাল দালালরাজের শিকার হচ্ছেন সাধারণ রেল যাত্রীরা?
বর্তমানে দূরপাল্লার মেল, এক্সপ্রেস ট্রেনে সংরক্ষিত শ্রেণিতে সর্বোচ্চ দু’মাস আগে টিকিট বুকিং করতে পারেন যাত্রীরা। সেইমতো কোনও যাত্রী যদি আগামী ২৪ ডিসেম্বর দার্জিলিং মেলে শিয়ালদহ থেকে উত্তরবঙ্গ যেতে চান, তাহলে ২৫ অক্টোবর থেকে তাঁর ‘বুকিং উইন্ডো’ খুলবে। দেখা যাচ্ছে, ২৫ অক্টোবর সকাল ৮টা ২ মিনিটে একজন যাত্রী যখন দার্জিলিং মেলের স্লিপার ক্লাসে তিনটি টিকিট বুকিং করছেন, তখন তাঁর ওয়েটিং লিস্ট দাঁড়াচ্ছে যথাক্রমে ২০৫. ২০৬ এবং ২০৭য়ে। প্রসঙ্গত, সকাল ৮টায় ই-টিকিট বুকিং শুরু হয়। এক্ষেত্রে দু’মিনিটের মধ্যে ওয়েটিং লিস্ট কোন সমীকরণে ২০০ পেরিয়ে যেতে পারে, সেই অঙ্কই মেলাতে পারছেন না রেল যাত্রীরা। এই প্রেক্ষিতেই ডিজিটাল দালালরাজের আশঙ্কা আরও বেশি তীব্র হয়ে উঠছে।
রেল অবশ্য যাবতীয় অভিযোগ অস্বীকার করেছে। পাশাপাশি রেল সূত্রের ব্যাখ্যা, ‘অটো-আপগ্রেডেশন’ পদ্ধতিতে আরও বেশি যাত্রীকে কনফার্মড টিকিট পাইয়ে দেওয়ার চেষ্টা চলছে। কী এই পদ্ধতি? এক্ষেত্রে এক ধাপ অপেক্ষাকৃত উঁচু শ্রেণিতে ‘আপগ্রেড’ করা হয় নিশ্চিত আসন থাকা যাত্রীদের। অর্থাৎ, থার্ড এসি থেকে সেকেন্ড এসি। সেকেন্ড এসি থেকে ফার্স্ট এসি। স্লিপার থেকে থার্ড এসি কিংবা থার্ড ইকনমি। অথবা চেয়ার কার থেকে এগজিকিউটিভ চেয়ার কার। যাত্রী ইচ্ছুক না হলে অবশ্য ‘আপগ্রেড’ করে না রেল কর্তৃপক্ষ।