আন্টার্কটিকায় বরফ জমতেই ভারতে বর্ষার সূচনা, সাড়ে তিন কোটি বছর আগের তথ্য মিলল গবেষণায়
বর্তমান | ২৭ অক্টোবর ২০২৫
কৌশিক ঘোষ, কলকাতা:
আন্টার্কটিকা। এই নাম শুনলেই বরফঢাকা এক মহাদেশের কথা ভেসে ওঠে আমাদের মনে। কিন্তু একসময় সেখানে বরফের লেশমাত্র ছিল না। সেটা সাড়ে ৩ কোটি বছর আগের কথা। ধীরে ধীরে সেখানে বরফ জমতে শুরু করে, হিমবাহ তৈরি হয়। আর তার হাত ধরেই বর্ষার মরশুমের সূচনা হয় ভারতে। কেন্দ্রীয় বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি মন্ত্রকের অধীনস্থ লখনউয়ের বীরবল সাহানি ইনস্টিটিউট অব প্যালিওসায়েন্স এবং দেরাদুনের ওয়াদিয়া ইনস্টিটিউট অব হিমালয়ান জিওলজির সাম্প্রতিক এক গবেষণা রিপোর্টে এমনই চাঞ্চল্যকর তথ্য উঠে এসেছে। নেপথ্যে কিছু গাছের পাতার ফসিল। ৩ কোটি ৪০ লক্ষ বছর পুরোনো।
লাইসং ফর্মেশনে অতি যত্নে সংরক্ষিত ওই ফসিল উদ্ধার হয়েছিল নাগাল্যান্ডের এক প্রত্যন্ত পাহাড়ে। গবেষণা বলছে, আন্টার্কটিকায় যখন বরফের চাদর জমতে শুরু করেছে, সেই সময়ের পাতা এটি। তখন নাগাল্যান্ডের আবহাওয়া উষ্ণ এবং আর্দ্র। ধীরে ধীরে ভারতের উত্তর-পূর্বের এই অংশে বৃষ্টিপাতের পরিমাণ বাড়তে থাকে। এই ধরনের ক্রান্তীয় পরিবেশের কারণ কী ছিল, তা অনুসন্ধান করতে গিয়ে বিজ্ঞানীরা জানতে পারেন, ওই সময় আন্টার্কটিকায় বরফের চাঁই বা স্তূপ তৈরি হতে শুরু হয়েছে। সংশ্লিষ্ট গবেষণাপত্রে বলা হয়েছে, আন্টার্কটিকায় বরফ জমতে শুরু করার পর বিশ্বব্যাপী বায়ু প্রবাহ ও বৃষ্টিপাতের চরিত্রগত পরিবর্তন হয়। বদলে যায় জলবায়ুর ধারা। কারণ, বড় ধরনের বৃষ্টি বলয় ‘ইন্টারট্রপিক্যাল কনভারজেন্স জোন’ (আইটিসিজেড) দক্ষিণ মেরুর দিক থেকে ট্রপিক্যাল এলাকার দিকে সরে আসে। এর জন্য ভারতে বেশি মাত্রায় বৃষ্টি ও তাপমাত্রার পরিবেশ তৈরি হয়। এই থেকেই দেশে বর্ষার মরশুমের সূচনা হয়।
বিষয়টি প্রমাণ করতে বিশেষ প্রযুক্তির সাহায্যে ফসিলটি (পাতার আকার, গঠন) বিশ্লেষণ করেন বিজ্ঞানীরা। নাম ক্লাইমেট লিফ অ্যানালিসিস মাল্টিভ্যারিয়েট প্রোগাম বা ক্ল্যাম্প। তাতে দেখা যায়, বর্তমানের তুলনায় সেসময় বৃষ্টিপাতের পরিমাণ ও তাপমাত্রা বেশি ছিল নাগাল্যান্ডে। কিন্তু সাম্প্রতিক সময়ে তা ক্রমে নিম্নমুখী। কারণ, আন্টার্কটিকার হিমবাহগুলি গলতে শুরু করেছে। আবহাওয়া দপ্তরের পূর্বাঞ্চলীয় অধিকর্তা হবিবুর রহমান বিশ্বাস বলেন, ‘দেশে বর্ষা আসার বিষয়টি বিভিন্ন বিষয়কে প্রভাবিত করে। বর্ষার উপর নানা গবেষণা চলছে। তার থেকে নতুন তথ্য আসছে।’
কিন্তু গবেষণার এই ফলাফলে নয়া তথ্যের পাশাপাশি উদ্বেগও তৈরি হয়েছে। আন্টার্কটিকার বরফ দ্রুত গলতে শুরু করায় ‘আইটিসিজেড’ ফের তার অবস্থান পরিবর্তন করতে পারে, এমন আশঙ্কা উঁকি দিচ্ছে। সেক্ষেত্রে ভারতে বর্ষার সময় ও চরিত্রগত পরিবর্তন হবে কি না, তা নিয়ে প্রশ্ন দেখা দিয়েছে গবেষকদের মধ্যে। ভারতে দক্ষিণ-পশ্চিম মৌসুমি বায়ুর প্রভাবে যে বর্ষার আগমন হয়, তার কোনও পরিবর্তন হলে শুধু পরিবেশ নয়, অর্থনীতির উপরও বড় ধরনের নেতিবাচক প্রভাব পড়বে বলে আশঙ্কা। তাই বিজ্ঞানীদের আর্জি, নিজেদের স্বার্থেই পরিবেশ রক্ষা করুক মানবজাতি।