সংবাদদাতা, কৃষ্ণনগর: কৃষ্ণনগরের মালোপাড়ার জগদ্ধাত্রী পুজো আজও বহন করছে রাজ ঐতিহ্যের গর্ব। কৃষ্ণনগর রাজবাড়ির প্রায় সমসাময়িক এই পুজো আজও শুরু হয় কৃষ্ণনগরের রানিমার অনুমতি ও আশীর্বাদ নিয়ে। প্রথা মেনে রাজবাড়ি থেকে আজও আসে ১৫ টাকা অনুদান, যা প্রজন্মের পর প্রজন্ম ধরে এই পুজোর গৌরবের প্রতীক হয়ে আছে। এই পুজোর অন্যতম আকর্ষণ ‘জল সাঁঝা’। পুজোর আগের দিন মধ্যরাতে মালোপাড়ার যুবকরা মেয়ে সেজে নদী থেকে পবিত্র জল আনতে যান। যেহেতু ব্রিটিশ আমলে মেয়েদের ঘরের বাইরে পা দেওয়ার রেহওয়াজ ছিল না, তাই পুজোর শুরু থেকে আজও ছেলেরাই শাড়ি পরে মেয়ে সেজে জল সাঁঝতে যান। মালোপাড়া বারোয়ারির হিসাব পরীক্ষক নিমাই হালদার বলেন, আমাদের পুজো রাজবাড়ির পুজোর সমসাময়িক। আগে আমাদের মালো সম্প্রদায়ের লোকেরা রাজবাড়ির মা রাজ রাজেশ্বরী দেবীকে জোড়া নৌকা করে বিসর্জন দিতে যেত। মহারাজ কৃষ্ণচন্দ্র জগদ্ধাত্রী পুজো সূচনার পর তিনি পুজোটাকে তাঁর প্রজাদের মধ্যে ছড়িয়ে দিতে চেয়েছিলেন। সেই সময় কিছু বারোয়ারি পুজো করার অনুমতি পায়, আর আমাদের অনুমতি দেন স্বয়ং মহারানি। সেই থেকে প্রতি বছর পুজোর আগে রানিমার থেকে অনুমতি নেওয়া হয়। মেলে পুজো করার অনুদানও। প্রথমবার রাজবাড়ি থেকে মন্দিরে এসে অনুদান দিয়ে গিয়েছিলেন রানি ভুবনেশ্বরী দেবী। তৎকালীন সময়ে অনুদান বাবদ ১৫ টাকা আসত, এখনও সেই প্রথা ১৫ টাকা দিতে আসেন রাজবাড়ির বর্তমান সদস্যরা। আমাদের মা জ্বলেশ্বরী দেবীর সঙ্গে থাকেন তার দুই সখী জয়া ও বিজয়া। মায়ের বাহন সিংহের লেজে থাকে গিনী, যা রাজবাড়ি থেকেই প্রাপ্ত। মায়ের সাজ হয় রাংতার ডাকের সাজে। চুমকি, মাটির কল্কা মায়ের সাজের বৈশিষ্ট্য। মালোপাড়া মায়ের ভোগের প্রধান উপকরণ হচ্ছে ফলমূল। যেমন আদা, মুলো, কলা আর চাল। আমাদের কৃষ্ণনগরের পুজো এক দিনের। ষষ্ঠীতে মাকে দেওয়া হয়, চিঁড়ে, মুরকি, দই ,পাঁচ রকম মিষ্টি। সপ্তমী এবং অষ্টমীতে থাকে পাঁচরকম ভাজা, পায়েস, পোলাও। নবমীতে দেওয়া হয় মহাভোগ, সেই সময়ে সিংহাসন থেকে নারায়ণকে সরিয়ে নিয়ে মাটির হাড়িতে দেওয়া হয় সাদা ভাত, মাছ, সেই সঙ্গে আগের সব ভোগও থাকে। সকল মানুষের জন্য অন্ন মহোৎসবের আয়োজন করা থাকে। আমাদের পুজোর আরও একটি বৈশিষ্ট্য হল ধুনো পোড়ানো। অসংখ্য মানুষ পরিবারের সুখ সমৃদ্ধি ও কঠিন ব্যাধি থেকে মুক্ত হতে এই ধুনো পোড়ানোতে অংশ নেন।
মালোপাড়া বারোয়ারির সেক্রেটারি সুকুমার হালদার বলেন, আমাদের বড়রা যেভাবে এই পুজো শুরু করেছিলেন, আমরা আজও সেই রীতিই মেনে চলি। মায়ের পুজোর আগের দিন হয় অধিবাস। রাজবাড়ির অনুদান ও অনুমতি ছাড়া পুজো শুরু হয় না, এটাই আমাদের বিশ্বাস ও গর্ব।