এবার জগদ্ধাত্রী পুজোয় প্রথমবার ভার্চুয়ালি উপস্থিত থাকবেন মুখ্যমন্ত্রী
বর্তমান | ২৭ অক্টোবর ২০২৫
নিজস্ব প্রতিনিধি, কৃষ্ণনগর: প্রথমবার কৃষ্ণনগরের জগদ্ধাত্রী পুজোর সঙ্গে যুক্ত হচ্ছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। রাজ্যের প্রশাসনিক সদর দপ্তর নবান্ন থেকে তিনি একযোগে চন্দননগর ও কৃষ্ণনগরের পুজো মণ্ডপ ভার্চুয়ালি পরিদর্শন করবেন। এহেন উদ্যোগে শহরজুড়ে উচ্ছ্বাস ছড়িয়েছে। সূত্রের খবর, আগামী ২৯ অক্টোবর মুখ্যমন্ত্রীর এই ভার্চুয়াল কর্মসূচি নির্ধারিত হয়েছে। নবান্ন থেকে সরাসরি সংযোগ থাকবে কৃষ্ণনগরের দুই পুজোর সঙ্গে। তারমধ্যে রয়েছে কৃষ্ণনগর শহরের চাষাপাড়া বারোয়ারির ঐতিহ্যবাহী বুড়িমা পুজো। সেইসঙ্গে পাত্রবাজার স্বীকৃতি ক্লাবের জগদ্ধাত্রী পুজোতেও মুখ্যমন্ত্রী ভার্চুয়ালি থাকবেন। অনেকেই মনে করছেন, কৃষ্ণনগরের জগদ্ধাত্রী পুজোর ইতিহাসে এ এক নতুন অধ্যায়। শহরের পুজো উদ্যোক্তারা বলছেন, মুখ্যমন্ত্রী নিজে ভার্চুয়ালি দর্শন করবেন। এর চেয়ে বড় সম্মান আর কী হতে পারে! কৃষ্ণনগরের পুজো এখন গোটা রাজ্যের নজরে। প্রশাসনের পক্ষ থেকেও প্রস্তুতি শুরু হয়েছে। জেলা প্রশাসন ও পুলিশ সংশ্লিষ্ট ক্লাব ও বারোয়ারির সঙ্গে বৈঠক চলছে। ওইদিন পুজো মণ্ডপে বড়পর্দায় ভিডিও কনফারেন্সের ব্যবস্থা করা হবে। সেখানে উপস্থিত থাকবেন জেলা প্রশাসনের কর্তা, জনপ্রতিনিধি এবং পুজো উদ্যোক্তারা। মুখ্যমন্ত্রীর ভার্চুয়াল উপস্থিতি ঘিরে নিরাপত্তা ও প্রযুক্তিগত ব্যবস্থা জোরদার করা হচ্ছে। নির্বিঘ্ন সম্প্রচারের জন্য বিশেষ দল তৈরি করেছে জেলা প্রশাসন। নেটওয়ার্ক সংযোগ, ক্যামেরা, স্ক্রিন ও সাউন্ড সিস্টেমের পরীক্ষা চলছে জোরকদমে। নদীয়ার জেলাশাসক অনীশ দাশগুপ্ত বলেন, মুখ্যমন্ত্রী কৃষ্ণনগরের দু’টি জগদ্ধাত্রী পুজোর সঙ্গে ভার্চুয়ালি থাকবেন। আমরা সেইমতো সমস্ত রকম ব্যবস্থা করছি। কৃষ্ণনগর লোকসভার সাংসদ মহুয়া মৈত্র বলেন, এই শহরের ঐতিহ্যবাহী জগদ্ধাত্রী পুজোর বিশাল ব্যাপ্তি। মৃৎশিল্পের শহরে মহা ধুমধামে জগদ্ধাত্রী পুজো হয়। আমাদের মুখ্যমন্ত্রী কৃষ্ণনগরের জগদ্ধাত্রী পুজোয় ভার্চুয়ালি থাকছেন। এটা আমাদের কাছে বড় পাওনা।
চাষাপাড়া বারোয়ারির সম্পাদক গৌতম ঘোষ বলেন, বুড়িমার পুজো ২৫৩ বছরে পদার্পণ করছে। আমরা কখনোই কাউকে দিয়ে পুজো উদ্বোধন করাইনি। তবে এবছর মুখ্যমন্ত্রী আমাদের পুজোয় ভার্চুয়ালি থাকছেন। খুব ভালো লাগছে। উনি এসে পুজোর উদ্বোধন করলে আরও ভালো লাগত।
স্বীকৃতি ক্লাবের সদস্য সৌমাল্য ঘোষ বলেন, আমরা মণ্ডপ তৈরির কাজ দ্রুত গতিতে করছি। যাতে নির্দিষ্ট দিনের মধ্যে কাজ শেষ করা যায়। মুখ্যমন্ত্রী আমাদের পুজোয় থাকছেন, এটা আমাদের কাছে গর্বের ও আনন্দের বিষয়।
বিগত কয়েক বছর ধরে মুখ্যমন্ত্রীর হাতেই কৃষ্ণনগর শহরের দুর্গাপুজোর ভার্চুয়াল উদ্বোধন হয়ে আসছে। তবে এবছর সেই পরম্পরায় যুক্ত হতে চলেছে নতুন অধ্যায়। প্রথমবার মুখ্যমন্ত্রী যুক্ত হচ্ছেন কৃষ্ণনগরের মূল উৎসব—জগদ্ধাত্রী পুজোয়। যদিও এর আগে মুখ্যমন্ত্রী চন্দননগরের জগদ্ধাত্রী পুজোর উদ্বোধন করেছেন। তবুও এতদিন পর্যন্ত সেই তালিকা থেকে কৃষ্ণনগর ব্রাত্যই ছিল। এবার সেই অপেক্ষার অবসান। মুখ্যমন্ত্রীর ভার্চুয়াল দর্শনের তালিকায় ঢুকে গেল রাজা কৃষ্ণচন্দ্রের শহরও।
নদীয়া জেলার কৃষ্ণনগর শহরের উৎসবের রূপরেখা বরাবরই কলকাতা-কেন্দ্রিক পুজোর থেকে ভিন্ন। দুর্গাপুজোয় শহরের জাঁকজমক তুলনামূলকভাবে কিছুটা কম হলেও জগদ্ধাত্রী পুজোয় ছবিটা বদলে যায়। সেই সময় গোটা শহর যেন আলোকসজ্জা ও মণ্ডপে মোড়া এক উৎসবনগরী। প্রতিবছর শহরজুড়ে কয়েকশো জগদ্ধাত্রী পুজো হয়। তাই চন্দননগর ও কৃষ্ণনগরের জগদ্ধাত্রী পুজোর মধ্যে বরাবরই এক নিঃশব্দ প্রতিদ্বন্দ্বিতা রয়েছে।