কৃষ্ণনগরের জগদ্ধাত্রী পুজোর থিমে প্রাধান্য বাংলা ভাষাকে
বর্তমান | ২৭ অক্টোবর ২০২৫
নিজস্ব প্রতিনিধি, কৃষ্ণনগর: সম্প্রতি বাংলা ভাষা রাজ্যের রাজনীতিতে একটি গুরুত্বপূর্ণ ইস্যু হয়ে উঠেছে। পশ্চিমবঙ্গের বাইরে একের পর এক অপ্রীতিকর ঘটনা আঘাত হেনেছে ঐতিহ্যবাহী এই ভাষার গরিমায়। এই প্রেক্ষাপটেই কৃষ্ণনগর শহরের একাধিক জগদ্ধাত্রী পুজোর থিম এবারে বাংলা ভাষা ঘিরেই। কোথাও পুজোর থিম ‘মোদের গরব মোদের আশা’, আবার কোথাও ‘আ মরি বাংলা ভাষা’। অনেকের বক্তব্য, এই থিমের মাধ্যমে তাঁরা শুধু বাংলা শিল্প ও সংস্কৃতি তুলে ধরছেন না, পাশাপাশি রাজ্যের বাইরে বাংলা ভাষাকে হেয় করার প্রবণতার বিরুদ্ধে এক সাংস্কৃতিক প্রতিবাদের মঞ্চ তৈরি করছেন। আবার কেউ বাংলা ভাষার পুরোনো ঐতিহ্যকে খুঁজতে চাইছেন থিমের মাধ্যমে। গোলাপটি বারোয়ারির এবারের জগদ্ধাত্রী পুজোর থিম— ‘মোদের গরব মোদের আশা’। মাতৃভাষার গৌরব, ইতিহাস এবং ঐতিহ্যকে কেন্দ্র করেই গড়ে উঠছে গোটা পুজো মণ্ডপের সাজসজ্জা। মণ্ডপের বাইরে আঁকা হচ্ছে জীবনানন্দ দাশের রূপসী বাঙলা, সঙ্গে থাকবে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের গীতাঞ্জলির ছোঁয়া। পাশাপাশি ফুটে উঠবে ভাষা আন্দোলনের স্মৃতি— তৈরি হচ্ছে ভাষা শহিদদের বেদি। সংবাদপত্রের কাটিং দিয়ে সাজানো হবে একটি বিশাল শব্দছক, যা ভাষার শক্তিকে প্রতীকীভাবে প্রকাশ করবে। মণ্ডপের প্রবেশপথে সাজানো হচ্ছে সবুজ গাছের সারি, প্রতিটি পাতায় ফুটে উঠবে বাংলা ভাষার নানা সৃষ্টির প্রতিচ্ছবি। মাথা তুললেই দেখা যাবে বাংলার অক্ষরমালা, মণ্ডপের গায়ে লেখা থাকবে প্রবাদ, বাগধারা এবং বাংলা ভাষার উজ্জ্বল ঐতিহ্যের নিদর্শন। স্বাধীনতা আন্দোলনে বাংলা ভাষার অবদানও তুলে ধরা হচ্ছে— বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়ের ‘আনন্দমঠ’ এবং দ্বিজেন্দ্রলাল রায়ের ‘ধন ধান্যে পুষ্পে ভরা’ গানের মাধ্যমে। এছাড়াও মণ্ডপে স্থান পাচ্ছেন বাংলার মহাকবি ও সাহিত্যিকদের মূর্তি, সঙ্গে থাকবে ভাষা শহিদদের অবয়ব। দর্শনার্থীরা মণ্ডপের ভিতরে দেখতে পাবেন শৈশবের বাংলা শিক্ষার প্রতীক— কিশলয়, সহজ পাঠ, ও আদর্শ লিপির স্মৃতি। সত্যজিৎ রায়ের সন্দেশ পত্রিকার কভার দিয়ে তৈরি করা হচ্ছে এক বিশেষ মিষ্টির বাক্স— বোঝাতে, ‘বাংলা ভাষাই বিশ্বের সবচেয়ে মিষ্টি ভাষা।’ পুজো মণ্ডপে স্থান পাচ্ছে কৃত্তিবাসী রামায়ণের অংশও। বাংলা ভাষার ইতিহাস ও ঐতিহ্য তুলে ধরতে তথ্যচিত্র ও আলোকসজ্জায় মণ্ডপ হবে এক চলমান পাঠশালা।