সংবাদদাতা, রামপুরহাট: যাত্রীদের উপর বাড়তি বোঝা চাপাল রেল। এবার থেকে বন্দে ভারত এক্সপ্রেসে লাঞ্চ, ডিনার বাধ্যতামূলক করা হল। টিকিট বুকিংয়ে ‘নো ফুড’ অপশনটি তুলে দেওয়া হয়েছে। রেলের এই সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে যাত্রীদের ক্ষোভ চরমে উঠেছে। যদিও আইআরসিটিসি জানিয়েছে, আইআরসিটিসির ওয়েবসাইটে গিয়ে লগইন করলে ‘আই ডোন্ট ওয়ান্ট ফুড/বেভারেজ’ অপশন পাওয়া যাবে। যদিও সাধারণ মানুষের বক্তব্য, স্মার্টফোনের অ্যাপ থেকে টিকিট বুক করতে গেলে ওই অপশন পাওয়া যাচ্ছে না। শুধুমাত্র বন্দে ভারত নয়, শতাব্দী, রাজধানী এক্সপ্রেসের মতো যে সব বিলাসবহুল ট্রেনে খাবারের ব্যবস্থা রয়েছে, সেই সব ট্রেনে টিকিট কাটতে গেলেও এমন সমস্যায় পড়তে হচ্ছে সাধারণ মানুষকে। ২০২২ সালের ডিসেম্বর মাসে বীরভূমের উপর দিয়ে হাওড়া-নিউ জলাপাইগুড়ি বন্দে ভারত এক্সপ্রেস চলাচল শুরু হয়। গতবছরের সেপ্টেম্বরে এই রুটে চালু হয় হাওড়া-ভাগলপুর বন্দে ভারত এক্সপ্রেস। বর্তমানে যা জামালপুর পর্যন্ত করা হয়েছে। সেইসময় এই ট্রেন দুটি চালু হওয়ায় যাত্রীদের মধ্যে ব্যাপক উৎসাহ উদ্দীপনা লক্ষ করা গিয়েছিল। কিন্তু বর্তমানে রেলের সিদ্ধান্তে ক্ষুব্ধ এই ট্রেনযাত্রীরা।
রেলের টিকিট বুকিং ব্যবস্থায় একটি নতুন আপডেট এসেছে, যা বহু যাত্রীর কাছে সমস্যার কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। এতদিন অ্যাপ ও সাইটে যাত্রীরা টিকিট বুক করার সময় ‘নো ফুড’ অপশনটি বেছে নিতে পারতেন। কিন্তু যাত্রীদের অভিযোগ, আইআরসিটিসি অ্যাপে সেই অপশনটি সরিয়ে দিয়েছে। রেল সূত্রে জানা গিয়েছে, আগে আইআরসিটিসির সাইটে ও অ্যাপে টিকিট বুক করার সময় ভেজ, নন-ভেজের পাশাপাশি নো-ফুড অর্থাৎ খাবার লাগবে না এমন অপশনগুলি বেছে নিতে পারতেন। এখন শুধুই ওয়েবসাইটে। অর্থাত্ অ্যাপ থেকে টিকিট কাটলে, হাওড়া থেকে রামপুরহাট পর্যন্ত নো-ফুড যাত্রীদের ট্রেন ভাড়া বাবাদ গুনতে হতো ৬১০ টাকা। এখন খাবারসহ ভাড়া ৯১০ টাকা। কিন্তু এবার সেই খাবার বাধ্যতামূলক করা হল। অর্থাৎ, খাবার থাক বা না থাক ভাড়া বাবদ গুনতে হবে ৯১০ টাকাই।
এতেই যাত্রীদের মধ্যে ক্ষোভের সৃষ্টি হয়েছে। তাঁদের মতে, অনেক যাত্রীই শারীরিক অসুস্থতা বা অন্য কারণে বাইরের খাবার পছন্দ করেন না। বাড়ি থেকে আনা খাবারই তাঁরা খান। মাথাপিছু ৩১০ টাকা করে সাশ্রয়ও করতে পারতেন। কিন্তু এবার থেকে সেই সুবিধা পাবেন না যাত্রীরা। খাবার বাধ্যতামূলক হওয়ায় অতিরিক্ত টাকা খরচ করতে হবে। রামপুরহাটের আইআরসিটিসির এজেন্ট অনিল বোথরা বলেন, ‘আগে নো ফুড অপশন ছিল। শনিবার এক যাত্রীর টিকিট বুক করতে গিয়ে দেখি, সেই অপশন তুলে দেওয়া হয়েছে। শুধু রয়েছে ভেজ, নন-ভেজ, জৈন মিল ও ভেজ (ডায়াবেটিক) অপশন। এতে বন্দে ভারতের যাত্রী সংখ্যা কমে আসবে। এটা পুনর্বিবেচনা করা উচিত।’ সপ্তাহে দু-দিন বন্দে ভারতে কলকাতা থেকে যাতায়াত করেন রামপুরহাট মেডিকেল কলেজের অধ্যক্ষ করবী বড়াল। তিনি বলেন, ‘কিছু লোকের পক্ষে সুবিধা হলেও যারা পরিবার, আত্মীয়স্বজন নিয়ে সফর করেন তাঁদের প্রত্যেকের জন্য খাবার নেওয়া তো সম্ভব নয়। তার জন্য বাড়ি থেকে খাবার নিয়ে আসেন। এই সিদ্ধান্তের ফলে তাঁদের উপর বাড়তি বোঝা চাপিয়ে দেওয়া হল।’ এই ব্যাপারে পূর্ব রেলের জনসংযোগ আধিকারিক দীপ্তিময় দত্ত বলেন, ‘খাবারের অপশন রেল কর্তৃপক্ষ দেখে না। আইআরসিটিসি করে। তাই এই বিষয়ে যা বলার আইআরসিটিসি-ই বলবে।’ অন্যদিকে, আইআরসিটিসির কলকতা অফিসে একাধিকবার ফোন করা হলেও কেউ তা রিসিভ করেননি।