• হাসপাতালের ‘দালাল চক্র’ চিহ্নিত করে কড়া ব্যবস্থা, নির্দেশ রাজ্যে
    বর্তমান | ২৭ অক্টোবর ২০২৫
  • সুখেন্দু পাল, বর্ধমান:

    পিজি হাসপাতালে নাবালিকা ধর্ষণ-কাণ্ডের প্রেক্ষিতে সরকারের কড়া অবস্থান জানিয়ে দিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। এমনকি, ভবিষ্যতে পুলিশের ছাড়পত্র ছাড়া কোনও বেসরকারি নিরাপত্তাকর্মীকে হাসপাতালে নিয়োগ করা যাবে না বলেও জানিয়ে দেওয়া হয়েছে। তবে এখানেই শেষ নয়! রাজ্যের প্রতিটি হাসপাতালে ‘দালাল চক্র’ চিহ্নিত করে তাদের বিরুদ্ধে কড়া ব্যবস্থা নেওয়ার নির্দেশ দিয়েছে স্বাস্থ্যদপ্তর। শুক্রবার মেডিকেল কলেজ সহ বিভিন্ন হাসপাতাল কর্তৃপক্ষকে ফোন করে একথা জানিয়ে দেওয়া হয়েছে। মূলত মেডিকেল কলেজ হাসপাতালগুলিতে দালাল-দৌরাত্ম্য সব থেকে বেশি। রোগীর আত্মীয় সেজে তারা ঘুরে বেড়ায়। ফলে তাদের আসল উদ্দেশ্য আঁচ করা যায় না। তাছাড়া, হাসপাতালের এক শ্রেণির কর্মীর সঙ্গে তাদের সুসম্পর্ক রয়েছে। বর্ধমান মেডিকেল কলেজই হোক বা রাজ্যের অন্য যে কোনও বড় হাসপাতাল—চিত্রটা কমবেশি এক। 

    ভুক্তভোগীদের অভিযোগ, হাসপাতালের এক শ্রেণির কর্মী ও চিকিৎসক রোগীদের সঙ্গে সহযোগিতা করেন না। সেই সুযোগটাই নেয় দালালরা। তারা অত্যন্ত প্রভাবশালী। সমস্ত ওয়ার্ডে অবাধ বিচরণ। স্বাস্থ্যকর্মীদের সঙ্গে এতটাই ঘরোয়াভাবে কথা বলে যে মনে হবে, হাসপাতালেরই কোনও স্টাফ। এভাবেই তারা ‘শিকার’ ধরছে দিনের পর দিন। বর্ধমান মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের এমএসভিপি তাপস ঘোষ বলছিলেন, ‘অভিযোগ এলে সঙ্গে সঙ্গে পদক্ষেপ করা হয়। হাসপাতালে পুলিশ ক্যাম্পও রয়েছে। তাদের আরও সক্রিয় হতে বলা হয়েছে। বিভিন্ন জায়গায় লাগানো সিসি ক্যামেরায় সন্দেহজনকভাবে কাউকে ঘোরাঘুরি করতে দেখলে দ্রুত ব্যবস্থা নেওয়ার নির্দেশও দেওয়া হয়েছে।’ 

    এই হাসপাতালে দিদির চিকিৎসা করাতে এসেছিলেন রূপা মণ্ডল। তিনি বলেন, ‘ইমার্জেন্সি ওয়ার্ডের সামনে একজন এসে আগবাড়িয়ে পরিচয় করল। সরাসরি নার্সিংহোমে যাওয়ার জন্য বলেনি। কিন্তু বারবার বোঝানোর চেষ্টা করছিল, মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের চেয়ে শহরের একটি নার্সিংহোমে অনেক ভালো চিকিৎসা হয়। দালালদের সম্পর্কে আগে থেকেই জানতাম বলে গুরুত্ব দিইনি। কিন্তু প্রত্যন্ত এলাকা থেকে চিকিৎসার জন্য আসা অনেকের মগজ ধোলাই সহজেই করে ফেলে তারা।’ 

    আর এক রোগীর আত্মীয় অর্পণ বারুই বলেন, ‘দালালরা সবসময় ঘুরে বেড়াচ্ছে। যত কড়াকড়ি আমাদের জন্য।’ স্বাস্থ্যদপ্তরের এক আধিকারিক বলেন, ‘দালালরা যাতে হাসপাতালে ঢুকতে না পারে, সেই ব্যবস্থা করতে বলা হয়েছে। কে দালাল, নিরাপত্তারক্ষীরা ভালোই জানেন। তাঁরা চেষ্টা করলেই দালাল চক্র বন্ধ হয়ে যাবে। তাদের সক্রিয় হওয়ার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।’ ওই আধিকারিকের আরও দাবি, ‘এক সময় দালালরা হাসপাতাল নিয়ন্ত্রণ করত। এখন ততটা দাপট না থাকলেও নির্মূল করা যায়নি।’ একাধিক রোগীর আত্মীয়ের অবশ্য দাবি, দালালকে টাকা দিলে সহজে বেড পাওয়া যায়। অন্যান্য শারীরিক পরীক্ষাও সহজে হয়ে যায়। হাসপাতালের কর্মীরা সহযোগিতা করলে দালাল চক্রের দাপট অনেকটা কমে যাবে।
  • Link to this news (বর্তমান)