• মন-থা উত্তরমুখী হলে বৃষ্টির মাত্রা বাড়বে রাজ্যে
    বর্তমান | ২৭ অক্টোবর ২০২৫
  • নিজস্ব প্রতিনিধি, কলকাতা: তীব্র ঘূর্ণিঝড় ‘মন-থা’ আগামীকাল মঙ্গলবার সন্ধ্যা-রাত নাগাদ উত্তর অন্ধ্রপ্রদেশের কাকিনাড়ার আশপাশ দিয়ে উপকূল অতিক্রম করার পর  মতিগতি কেমন থাকবে তার উপরই নির্ভর করছে রাজ্যে এর জন্য বৃষ্টি কতটা মাত্রায় হবে। আবহাওয়াবিদরা জানিয়েছেন, এখনও পর্যন্ত যা ইঙ্গিত পাওয়া যাচ্ছে তাতে আজ সোমবার দক্ষিণ-পশ্চিম বঙ্গোপসাগরের উপর ঘূর্ণিঝড় ‘সুগন্ধি ফল’ (থাই ভাষায় মন-থা-র মানে) তৈরি হওয়ার পর এটি অভিমুখ কিছুটা পালটে উত্তর-পশ্চিম দিকে এগোবে। নিম্নচাপ তৈরির সময় থেকে এর গতিপথ ছিল পশ্চিম-উত্তর-পশ্চিম দিকে। আবহাওয়া দপ্তরের পূর্বাঞ্চলীয় অধিকর্তা হবিবুর রহমান বিশ্বাস জানান, উপকূল অতিক্রম করে স্থলভূমিতে ঢোকার পর ঘূর্ণিঝড় দুর্বল হয়ে উত্তর দিকে অধিক বাঁক নিয়ে অগ্রসর হলে রাজ্যে বৃষ্টির পরিমাণ বেশি হবে। আপাতত স্থলভূমিতে ঢোকার পর উত্তর-পশ্চিম অভিমুখে অগ্রসর হওয়া ধরে নিয়ে রাজ্যে আগামী কয়েকদিনের জন্য বৃষ্টির পূর্বাভাস দিয়েছে আবহাওয়া দপ্তর। কোথাও কোথাও ভারী বৃষ্টিও হতে পারে। সাধারণভাবে দক্ষিণবঙ্গের জেলাগুলিতে মঙ্গলবার থেকে  বৃহস্পতিবার পর্যন্ত ও উত্তরবঙ্গে বুধবার থেকে শুক্রবার পর্যন্ত ঘূর্ণিঝড়ের প্রভাবে  বৃষ্টির পূর্বাভাস দেওয়া হয়েছে। রবিবার কলকাতা ও দক্ষিণবঙ্গের কয়েকটি জেলার কোনও কোনও জায়গায় স্থানীয়ভাবে বজ্রগর্ভ মেঘ থেকে বৃষ্টি হয়েছে। বঙ্গোপসাগরের নিম্নচাপের সঙ্গে এর সরাসরি সম্পর্ক নেই বলে আবহাওয়াবিদরা জানিয়েছেন। এই সময়ে অসময়ের বৃষ্টি চাষবাসের পক্ষে ভালো নয় বলে বিশেষজ্ঞরা জানিয়েছেন। রাজ্যে কোথাও ফসল পরিণত হলে তুলে নেওয়ার পরামর্শও দিয়েছে আবহাওয়া দপ্তর। 

    ২ অক্টোবর বিজয়াদশমীর দিন বঙ্গোপসাগরে তৈরি হওয়া একটি অতিগভীর নিম্নচাপ অন্ধ্র উপকূল লাগোয়া দক্ষিণ ওড়িশার গোপালপুর দিয়ে স্থলভূমিতে ঢোকার পর স্বাভাবিক নিয়মে দুর্বল হতে শুরু করেছিল। কিন্তু ওড়িশা, ছত্তিশগড়, ঝাড়খণ্ড হয়ে এটি উত্তর-পূর্ব বিহারের উপর সাধারণ নিম্নচাপ হিসেবে আসার পর এর প্রভাবে উত্তরবঙ্গের পাহাড়ি এলাকায় ৪ অক্টোবর রাত থেকে  অতিভারী বৃষ্টি হয়। অতিবৃষ্টিতে ওই এলাকায় বিপর্যয় পরিস্থিতি তৈরি হয়। তখনও নিম্নচাপটির অভিমুখ ক্রমান্বয়ে উত্তরমুখী হয়েছিল। নিম্নচাপটি উত্তর-পশ্চিম দিকে গেলে পাহাড়ে ওই বিপর্ষয় হতো না বলেই জানিয়েছেন আবহাওয়াবিদরা।

    আপাতত কেন্দ্রীয় আবহাওয়া দপ্তর জানিয়েছে, উপকূল অতিক্রম করার ঘূর্ণিঝড় মন-থা দুর্বল হয়ে গভীর নিম্নচাপ হিসেবে উত্তর-পশ্চিম দিকে এগিয়ে অন্ধ্রপ্রদেশ অতিক্রম করে বুধবার ছত্তিশগড়ে উপর আসবে। তখন সেটি আরও কিছুটা দুর্বল হয়ে গভীর নিম্নচাপে পরিণত হবে। তারপর সেটি কোন দিকে যাবে সেই ব্যাপারে আবহাওয়া দপ্তর রবিবার পর্যন্ত কিছু জানায়নি। আবহাওয়া অধিকর্তা জানিয়েছেন, ঘূর্ণিঝড় দুর্বল হয়ে গভীর নিম্নচাপ থেকে সাধারণ নিম্নচাপ ও তারপর ঘূর্ণাবর্ততে পরিণত হয়। এর উপস্থিতি তখন আরও বড় এলাকা জুড়ে হয়।

    ঘূর্ণিঝড় উপকূলের কাছাকাছি আসার সময় থেকে ও স্থলভূমিতে ঢোকার পর এর পরোক্ষ প্রভাবে রাজ্যে বৃষ্টির পরিমাণ বাড়বে। কারণ বায়ুপ্রবাহের গতিপথ পরিবর্তন হওয়ার জন্য রাজ্যের বায়ুমণ্ডলে বেশি পরিমাণে জলীয় বাষ্প ঢুকে বৃষ্টির মেঘ তৈরি করবে। মঙ্গলবার পূর্ব মেদিনীপুর ও দক্ষিণ ২৪ পরগনার কোথাও কোথাও ভারী বৃষ্টি হতে পারে। পরের দু-দিন পশ্চিম মেদিনীপুর, ঝাড়গ্রাম, উত্তর ২৪ পরগনা, হাওড়া, পুরুলিয়া, দুই বর্ধমান, বীরভূম, মুর্শিদাবাদ জেলার কোনও কোনও স্থানে বৃষ্টি হতে পারে।  পুরীতে চলছে সতর্কতামূলক প্রচার। ছবি: পিটিআই
  • Link to this news (বর্তমান)