ভোটার সমীক্ষায় বাদ গেলেও সিএএ’র মাধ্যমে নাগরিকত্ব!
বর্তমান | ২৭ অক্টোবর ২০২৫
সংবাদদাতা, বনগাঁ: ভোটার তালিকার ইন্টেনসিভ রিভিশন বা এসআইআর কি ধর্মসংকটে ফেলেছে বিজেপিকে? অনুপ্রবেশ হাওয়া তুলে ভোটের বাজার গরম করা গেরুয়া শিবিরের চিরাচরিত ট্রেন্ড। সেই লোহায় আঘাত করার জন্যই ভোটের আগে এসআইআরের তোড়জোড়। বাংলাদেশি অনুপ্রবেশকারী, রোহিঙ্গা মুসলিমদের নিশানায় রেখে লাগাতার হুমকি-হুঁশিয়ারি দিয়ে চলেছেন বিজেপির বড় থেকে মাঝারি সব নেতাই। কিন্তু হিন্দু উদ্বাস্তু বা নমঃশূদ্র ভোটারদের কী হবে? এসআইআর কিন্তু তাঁদের মধ্যেও কাঁপুনি ধরিয়েছে। ‘সঠিক নথি’র অভাবে এক মুহূর্তে তাঁরা দেশহারা হয়ে যাবেন না তো? সবচেয়ে বড় কথা, এই শ্রেণিকে বিজেপি নিজেদের ভোটব্যাংক বলেই মনে করে। অতীতের কয়েকটি নির্বাচনে তার প্রমাণও মিলেছে। তাই এসআইআর বিতর্কের মাঝেও এই একটি ভোটব্যাংক ধরে রাখতে মরিয়া হয়ে উঠেছে গেরুয়া শিবির। আসরে নেমে পড়েছেন কেন্দ্রীয় মন্ত্রী শান্তনু ঠাকুরও। তাঁর মতুয়া ভোটব্যাংক উত্তর ২৪ পরগনা ও নদীয়ার সীমান্ত এলাকায় বড় ভূমিকা নিয়ে থাকে। তাই কেন্দ্রীয় মন্ত্রী এখন আশ্বাস দিয়ে বেড়াচ্ছেন, এসআইআরে নাম বাদ গেলেও কুছ পরোয়া নেই। ‘সিএএ’ তো আছে! অর্থাৎ, নাগরিকত্ব সংশোধনী আইনের টোপ ফের সামনে।
রবিবার ‘মতুয়া গড়’ ঠাকুরনগর ঠাকুরবাড়িতে আন্তর্জাতিক মতুয়া গোঁসাই সম্মেলনের আয়োজন করেছিল বিজেপি সমর্থিত অল ইন্ডিয়া মতুয়া মহাসংঘ। এখানে কিছুটা অসহায়তাই ধরা পড়ে কথা সংঘাধিপতি তথা জাহাজ মন্ত্রকের রাষ্ট্রমন্ত্রী শান্তনু ঠাকুরের কণ্ঠে। ড্যামেজ কন্ট্রোলে তিনি বলেন, ‘এসআইআরে নাম বাদ গেলে সিএএর মাধ্যমে নাগরিকত্ব পাবেন মতুয়ারা। আপনারা সিএএতে আবেদন করুন। আমরা নির্বাচন কমিশনের কাছে আবেদন করব, ২০০২ সালের ভোটার তালিকায় নাম না থাকলেও কারও নাম যাতে বাদ না যায়।’ এক্ষেত্রে শান্তনুবাবু জানান, কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ আগেই বলে দিয়েছেন, ২০১৪ সালের ৩১ ডিসেম্বরের মধ্যে নয়, ২০২৪ সালের ৩১ ডিসেম্বর পর্যন্ত যাঁরা ভারতে এসেছেন, তাঁরা ভারতেই থাকবেন। তাঁদের কেউ বাংলাদেশ, পাকিস্তান, আফগানিস্তানে পাঠাতে পারবে না। তবে, এসআইআরে নাম বাদ গেলে কি সিএএর মাধ্যমে নাগরিকত্ব দেওয়া সম্ভব? প্রশ্নের উত্তরে মন্ত্রী বলেন, ‘এসআইআর নির্বাচন কমিশনের আওতাধীন। আর সিএএ কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রকের। এসআইআরে নাম বাদ গেলেও সিএএর মাধ্যমে নাগরিকত্ব মিলতেই পারে। এবং নাগরিক হলে তাঁর ভোটার কার্ডও হয়ে যাবে। তাই এসআইআরে নাম বাদ গেলেও আমরা নাগরিকদের ভোটার তালিকায় নাম তোলার জন্য আবেদন জানাব।’ ওয়াকিবহাল মহলের একাংশের দাবি, শান্তনুবাবুর এই যুক্তি যে সম্পূর্ণ রাজনৈতিক, তা স্পষ্ট। সবটাই ভোটব্যাংক দখলের কৌশল। এসআইআরে নাম বাদ গেলে কীভাবে সিএএর আওতায় আবেদন সম্ভব, সে ব্যাপারে ধোঁয়াশা রয়েছে। বনগাঁ সাংগঠনিক জেলা তৃণমূলের সভাপতি বিশ্বজিৎ দাস বলেন, ‘বিজেপি ভালোভাবেই জানে, এসআইআর হলে মতুয়াদের নাম বেশি বাদ যাবে। সেই ক্ষতে প্রলেপ দিতে মতুয়াদের আবারও মিথ্যা প্রতিশ্রুতি দিচ্ছেন শান্তনু ঠাকুর। ওদের আসল লক্ষ্য মানুষকে হয়রান করা। ভোট এলেই নাগরিকত্বের তাস খেলে। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় মতুয়াদের পাশে থাকেন সব সময়। সেই কারণেই তিনি এসআইআরের বিরোধিতা করছেন।’ সিপিএম নেতা সমিত কর বলেন, ‘এসআইআরের নামে নাগরিকত্ব বাতিলের পর সিএএ করাতে বাধ্য করার এটা বিজেপির কৌশল।’