• এসআইআরের পরই ৩ দফায় ভোট! কমিশনকে গেরুয়া চাপ, ৭-৮ দফায় হলে তৃণমূলের সুবিধা, দাবি বিজেপির
    বর্তমান | ২৭ অক্টোবর ২০২৫
  • রাজু চক্রবর্তী, কলকাতা:

    উৎসবের মরশুম শেষের পথে। এর মধ্যেই চড়তে শুরু করেছে বঙ্গ রাজনীতির নির্বাচনী পারদ। আগামী ছ’মাসের মধ্যে পশ্চিমবঙ্গবাসী পরবর্তী সরকার গঠনে সাংবিধানিক অধিকার প্রয়োগ করবে। কিন্তু তারও আগে ভোটার তালিকার ইন্টেনসিভ রিভিশন বা এসআইআর। এই মুহূর্তে এই একটি সমীকরণেই রাজনৈতিক বিরোধিতা চরম আকার ধারণ করেছে। আজ, সোমবার বিকেলে দিল্লিতে সাংবাদিক সম্মেলন ডেকেছে জাতীয় নির্বাচন কমিশন। সূত্রের খবর, সেখানে দেশের ১০ রাজ্যে এসআইআরের বিজ্ঞপ্তি ঘোষণা হতে পারে। সেই তালিকায় থাকতে পারে পশ্চিমবঙ্গের নামও। বিজেপির হর্তা-কর্তারা আগেই ঘোষণা করে দিয়েছিলেন, বাংলায় এসআইআরের পরই হবে ভোট। তৃণমূল প্রশ্ন তুলেছিল, নির্বাচন কমিশন স্বশাসিত সংস্থা। তাহলে কীভাবে বিজেপির নেতারা এ বিষয়ে নিশ্চিত হয়ে বিবৃতি দিচ্ছেন? ধীরে ধীরে অবশ্য সেই অঙ্কেই সিলমোহর পড়েছে। সেইসঙ্গে বেড়েছে বাংলার শাসক দলের অভিযোগের তীব্রতা। তারা সাফ দাবি করেছে, কমিশনকে প্রভাবিত করে বাংলায় ভোটে যেতে চাইছে গেরুয়া শিবির। আর এসআইআরেই এই প্রসঙ্গে ইতি টানা যাচ্ছে না। কারণ এবার সামনে আসছে ক’দফায় বঙ্গে ভোট হবে—সেই প্রশ্ন। সূত্রের দাবি, বঙ্গ বিজেপি নেতৃত্ব ২ থেকে ৩ দফায় ২০২৬ সালের বিধানসভা নির্বাচন শেষ করতে চাইছে। দলের সাধারণ সম্পাদক লকেট চট্টোপাধ্যায় রবিবার বলেন, ‘৭-৮ দফায় ভোট হলে তৃণমূলের সুবিধা। কারণ, ওরা যত বেশি সময় পাবে, রাজ্যের বিভিন্ন প্রান্তে ভোট ম্যানেজারদের ঘুরিয়ে ফিরিয়ে ব্যবহার করবে। উত্তরবঙ্গের দার্জিলিং সহ বিভিন্ন কেন্দ্রে ভুয়ো ভোট দিয়ে নামতে নামতে কাকদ্বীপে যাত্রা শেষ করে এই দুষ্কৃতীরা। তিন দফায় ভোট শেষ হলে এই অপকর্ম করা যাবে না।’

    যদিও লকেটদেবীর এই অভিযোগ উড়িয়ে দিয়েছেন নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক তৃণমূলের এক শীর্ষ পদাধিকারী। তাঁর বক্তব্য, ‘বিজেপি জাতীয় নির্বাচন কমিশন ও রাজ্যের নির্বাচনী আধিকারিকের অফিসকে চাপ দিয়ে অতীতেও ভোট করাতে গিয়েছিল। কিন্তু বাংলার মানুষ বিজেপির এই দখলদারির রাজনীতি প্রত্যাখ্যান করেছে। রাজ্যবাসী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের উন্নয়নের সঙ্গে রয়েছে। ওদের সঙ্গে জনতা বা সংগঠন—কিছুই নেই। তাই ওরা এসআইআর কিংবা কম দফায় ভোট করানো সহ নানা ছুতো খুঁজছে।’ এ প্রসঙ্গে রাজ্য নির্বাচন কমিশনের এক আধিকারিক বলেন, ক’দফায় বাংলায় ভোট হবে, তার সিদ্ধান্ত নেবে জাতীয় নির্বাচন কমিশন। এ বিষয়ে আমাদের কোনও বক্তব্য নেই। রাজ্যের আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতি সহ নির্বাচন সংক্রান্ত একাধিক বিষয় নিয়ে আলোচনা হবে। ভোটের আগে-পরে কত সংখ্যক কেন্দ্রীয় বাহিনী পাওয়া যাবে, যাবতীয় বিষয় বিশ্লেষণ করে দফা নির্ধারণ হবে। তবে ওই কর্তা সাফ জানিয়েছেন, ৩ দফায় ভোট পশ্চিমবঙ্গে করা যেতেই পারে।

    পড়শি রাজ্য বিহারে আগামী মাসেই ভোট। ২৪৩টি বিধানসভা বিশিষ্ট আসনের জন্য ৬ ও ১১ নভেম্বর ভোটের নির্ঘণ্ট জারি করেছে কমিশন। ১৪ নভেম্বর বিহার ভোটের ফলাফল ঘোষণা। সেই হিসেবে বাংলার ২৯৪টি আসনের জন্য কত দফা বরাদ্দ হয়, তা নিয়ে রাজনৈতিক দলগুলির মধ্যে এখন থেকেই দ্বন্দ্ব শুরু হয়ে গিয়েছে। ২০১১ সালে ৮ দফায় ভোট হয়েছিল। সেই নির্বাচনে ৩৪ বছরের বামফ্রন্ট সরকারের পতন হয়। রাজ্যের প্রথম মহিলা মুখ্যমন্ত্রী হিসেবে শপথ নিয়েছিলেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। তারপর ২০১৬ ও ২০২১ সালের ভোট হয়েছিল ৬ দফায়। জনতার রায় মমতার পক্ষেই গিয়েছিল। এবার কি তাই ‘দফা’ নিয়েও অশনিসংকেত দেখছে বিজেপি?
  • Link to this news (বর্তমান)