অর্ণব আইচ: চোরের উপর বাটপাড়ি করতে গিয়েই কি পার্ক স্ট্রিটের হোটেলের ঘরে খুন যুবক? কোনও মূল্যবান চুরির সামগ্রী হাতানোর উদ্দেশ্যেই পার্ক স্ট্রিটের রফি আহমেদ কিদওয়াই রোডের হোটেলে যুবক রাহুল লালকে দুই আততায়ী খুন করে পালায়, এমন সম্ভাবনা রয়েছে বলে অভিমত পুলিশের। এমনকী, এই খুনের পিছনে আন্তঃরাজ্য কোনও অ্যান্টিক চক্র থাকতে পারে, এমন সম্ভাবনাও পুলিশ উড়িয়ে দিচ্ছে না। হোটেলের সিসিটিভির ফুটেজের সূত্র ধরে দুই আততায়ীর মুখের অবয়ব পুলিশের কাছে এসেছে। ওই দুই আততায়ী ওড়িশার বাসিন্দা ও ওড়িশায় তাদের বিরুদ্ধে অভিযোগ রয়েছে বলেই ধারণা পুলিশের। দুই খুনির সন্ধানে ওড়িশা গিয়েছে কলকাতা পুলিশের একটি টিম।
গত শুক্রবার পার্ক স্ট্রিটের একটি হোটেলের ৩০২ নম্বর রুমের বিছানার বক্স খাটের ভিতর থেকে উদ্ধার হয় রাহুল লাল নামে এক যুবকের দেহ। তাঁকে বিছানার চাদর দিয়ে শ্বাসরোধ করে খুন করা হয় বলে পুলিশের সন্দেহ। গত বুধবার রাতের মধ্যে যুবককে খুন করা হয় বলে জানতে পারে পুলিশ। পুলিশের সূত্র জানিয়েছে, আগে চুরি ও প্রতারণার ঘটনায় গ্রেপ্তার হন রাহুল লাল নামে ওই যুবক। পার্ক স্ট্রিট থানায় তাঁর বিরুদ্ধে একাধিক অভিযোগ ছিল। চুরির সামগ্রী তিনি ভিনরাজ্যের চোরাই চক্রের কাছেও বিক্রি করতেন। এমনকী, অ্যান্টিক চুরি করেও ভিনরাজ্যে পাচার করতেন, এমন খবরও রয়েছে পুলিশের কাছে। এভাবে অ্যান্টিক চক্র ও চোরাই চক্রের কাছে সামগ্রী বিক্রি করে মোটা টাকা লাভ করতেন ওই ব্যক্তি। পুলিশের মতে, সম্প্রতি কোনও মূল্যবান চোরাই বস্তু বা অ্যান্টিক সামগ্রী সংগ্রহ করেন রাহুল। সেই বস্তু ভিনরাজ্যে বিক্রির জন্যই যোগাযোগ করেন ওড়িশার চোরাই চক্রের সদস্যদের সঙ্গে। ওই সামগ্রীগুলি পাচার করার উদ্দেশ্য নিয়েই সেগুলি দেখানোর জন্য হোটেলের ঘর ভাড়া করা হয়। যখন ওই দু’জনকে ডেকে হোটেলের ঘরে রাহুল ঢোকেন, তখন তাঁর সঙ্গে মূল্যবান সামগ্রী ছিল বলেই ধারণা পুলিশের।
অনুমান, এরপর তিনজন মদ্যপান করেন। তার মধ্যে দরাদরিও হয়। পুলিশের ধারণা, একজন টাকা আনার নাম করে হোটেলের বাইরে যায়। কিন্তু তাদের আসল উদ্দেশ্য ছিল ‘চোরের উপর বাটপাড়ি’। ওই চোরাই বা অ্যান্টিক সামগ্রী হাতিয়ে নেওয়াই ছিল তাদের ‘টার্গেট’। তার জন্য তারা রাহুলকে খুনের ছকই কষে। পুলিশের মতে, বিছানার চাদর বা কোনও বস্তু দিয়ে একজনই পিছন থেকে শ্বাসরোধ করে রাহুলকে খুন করে। এর পর দ্বিতীয় ব্যক্তিকে রাত ১১টা ২০ মিনিট নাগাদ সে ডেকে নেয়। দু’জন মিলে রাহুলের দেহটি বক্স খাটের ভিতর পুরে বন্ধ করে দেয়। এর পর খুনিরা রাহুলের কাছ থেকে ওই মূল্যবান সামগ্রী হাতিয়ে নেয়। রুমের দরজা বন্ধ করে পালিয়ে যায় তারা। সম্ভবত সেই রাতে বা পরের দিন ভোরে বাস বা ট্রেনে করে ওড়িশায় পালায় খুনিরা। ওই মূল্যবান বস্তুটি কী, তা জানার চেষ্টা হচ্ছে বলে জানিয়েছে পুলিশ।