আজকাল ওয়েবডেস্ক: উত্তরপ্রদেশের কানপুরে এক বিভীষিকাময় ঘটনার সাক্ষী রইল শহর। মাত্র ২২ বছর বয়সী আইন বিভাগের ছাত্র অভিজিৎ সিং চাঁদেলকে নৃশংসভাবে কুপিয়ে গুরুতরভাবে আহত করা হয়েছে। মাথায় গভীর ক্ষত, হাতের দুটি আঙুল কাটা পড়া এবং পেটের ভেতরের নাড়িভুঁড়ি বেরিয়ে আসা অবস্থায় তাকে উদ্ধার করা হয়। এই মর্মান্তিক ঘটনায় এলাকায় চরম চাঞ্চল্য ছড়িয়েছে।
সূত্রের খবর অনুযায়ী, কানপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রথম বর্ষের এলএলবি ছাত্র অভিজিৎ শনিবার রাত প্রায় ৯টার সময় এক ওষুধের দোকানে গিয়েছিলেন ওষুধ কিনতে। সেখানে দোকানের মালিক অমর সিং-এর সঙ্গে টাকা-পয়সা নিয়ে বচসা বাধে। পরিস্থিতি মুহূর্তের মধ্যে হাতাহাতিতে গড়ায়, এরপর দোকান মালিকের ভাই বিজয় সিং এবং তাদের সহযোগী প্রিন্স রাজ শ্রীবাস্তব ও নিখিল ঘটনাস্থলে এসে ঝগড়ায় যোগ দেয়।
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানিয়েছেন, হামলাকারীরা ধারালো দা দিয়ে অভিজিৎকে বারবার আঘাত করে। আঘাতে তার মাথার খুলির হাড় ভেঙে যায়, পেট ফেটে যায়, এবং অন্ত্র বাইরে বেরিয়ে আসে। রক্তে ভেসে রাস্তায় লুটিয়ে পড়েন অভিজিৎ। হামলাকারীরা ঘটনাস্থল থেকে পালিয়ে যায়।
খবর পেয়ে ছুটে আসেন পরিবারের সদস্যরা। তাঁরা কাপড় দিয়ে পেটের ক্ষত বাঁধেন এবং একের পর এক চারটি হাসপাতালে নিয়ে যান অভিজিৎকে ভর্তি করানোর জন্য। কিন্তু চরম গুরুতর অবস্থার কারণে প্রথম তিনটি হাসপাতালই তাঁকে ভর্তি নিতে অস্বীকার করে। শেষ পর্যন্ত রিজেন্সি হাসপাতালে তাঁকে ভর্তি করা হয়।
চিকিৎসকরা প্রায় দুই ঘণ্টা ধরে অস্ত্রোপচার চালিয়ে মাথায় ১৪টি সেলাই দেন এবং কাটা আঙুল পুনরায় জোড়ার চেষ্টা করেন। হাসপাতাল সূত্রে জানা গেছে, আহতের অবস্থা এখনো সংকটজনক হলেও তিনি চিকিৎসাধীন।
অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে ক্ষোভ উগরে দিয়েছেন অভিজিতের মা নীলম সিং চাঁদেল। তাঁর অভিযোগ, “যাদের বিরুদ্ধে অভিযোগ করা হয়েছে, তারা স্থানীয় পুলিশের মদতে বেপরোয়া। উল্টে আমার ছেলের বিরুদ্ধেই তারা মিথ্যা চাঁদাবাজি ও ডাকাতির মামলা দায়ের করেছে, যাতে আসল অপরাধ ঢেকে ফেলা যায়।” তিনি আরও দাবি করেন, অভিযুক্ত প্রিন্স রাজ শ্রীবাস্তবের বিরুদ্ধে আগেও কাকাদেও থানায় চাঁদাবাজি ও জমি দখলের একাধিক মামলা রয়েছে।
অঞ্চলের সহকারী পুলিশ কমিশনার (এসিএপি) রণজিত কুমার জানিয়েছেন, “উভয় পক্ষের অভিযোগ নথিভুক্ত করা হয়েছে। প্রথমে আহত ছাত্রের পরিবারের পক্ষ থেকে এফআইআর দায়ের করা হয়, পরবর্তীতে অপর পক্ষ থেকেও একটি পাল্টা অভিযোগ জমা পড়ে। দুই পক্ষের অভিযোগই তদন্তাধীন, যথাযথ প্রমাণের ভিত্তিতে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।”
এদিকে এলাকায় আতঙ্ক ও ক্ষোভ ছড়িয়েছে এই নৃশংস হামলাকে ঘিরে। স্থানীয় বাসিন্দাদের অভিযোগ, পুলিশের নজরদারি এবং অপরাধীদের প্রতি শিথিলতা এমন ঘটনার পুনরাবৃত্তি ঘটাচ্ছে। অভিজিতের বন্ধুবান্ধব ও সহপাঠীরা দোষীদের দ্রুত গ্রেফতার ও কঠোর শাস্তির দাবি জানিয়েছেন। অভিজিৎ এখন কানপুরের রিজেন্সি হাসপাতালে মৃত্যুর সঙ্গে লড়ছেন, আর তাঁর পরিবার ন্যায়বিচারের আশায় দিন গুনছে।