• ভুয়ো সুইসাইড নোট লিখে স্ত্রীকে হত্যা, হাড়হিম কাণ্ডে থ পুলিশ!
    প্রতিদিন | ২৭ অক্টোবর ২০২৫
  • অর্ণব আইচ: চিরকুটটি হাতে পেয়েই হতবাক হয়ে গিয়েছিলেন পুলিশ আধিকারিকরা। এটি যদি সুইসাইড নোট হয়েই থাকে, তবে ‘আমাদের’ কথাটি উল্লেখ কেন? তাহলে ওই গৃহবধূর স্বামী কোথায়? তিনিও কি বাড়ির ভিতর আত্মহত্যার চেষ্টা করেছেন, না কি অন্য কোথাও গিয়ে আত্মঘাতী হয়েছেন? একের পর এক প্রশ্ন সামনে রেখেই ফেলুদা-ব্যোমকেশের ভূমিকায় অবতীর্ণ হলেন উত্তর কলকাতার শ্যামপুকুর থানার আধিকারিকরা। কোথায় যেন খটকা রয়েছে। এর মধ্যেই থানায় এসে অজ্ঞাতপরিচয় ব্যক্তির বিরুদ্ধে মেয়েকে খুনের অভিযোগ দায়ের করেছেন গৃহবধূর মা।

    রহস্য নতুন মোড় নেয় রবিবার বিকেলে। উত্তর মেলে ‘খটকা’র। ময়নাতদন্তের পর প্রাথমিকভাবে চিকিৎসকরা পুলিশ আধিকারিকদের জানান, এটি আত্মহত্যার ঘটনা আদৌ নয়। নৃশংসভাবে গলা টিপে খুন করা হয়েছে গৃহবধূকে। এর পরই পুলিশের ধারণা, বধূকে খুন করে উধাও হয়ে গিয়েছেন তাঁরই স্বামী। আর পালানোর আগে বিভ্রান্তি তৈরি করতেই স্ত্রীর হাতের লেখা ঘরের মধ্যে পড়ে রয়েছে গৃহবধূর দেহ। পাশেই একটি চিরকুটে লেখা ‘আমাদের মৃত্যুর জন্য কেউ দায়ী নয়।’

    নকল করার চেষ্টা করে লিখে গিয়েছেন ভুয়া সুইসাইড নোট। তারই ভিত্তিতে তদন্ত করে পুলিশ জেনেছে, স্ত্রীর বিবাহবহির্ভূত সম্পর্ক রয়েছে, এমনই সন্দেহ করতেন স্বামী। আর সেই সম্পর্কের টানাপোড়েনের জেরেই স্ত্রীকে নৃশংসভাবে খুন করে পালান তিনি। শনিবার পড়ন্ত বিকেলে হাড়হিম করা এই ঘটনাটি ঘটেছে শ্যামপুকুর থানা এলাকার ডিসপেনসারি লেনে।

    পুলিশ জানিয়েছে, প্রায় দশ বছর আগে শ্যামপুকুর এলাকার দুর্গাচরণ মুখার্জি স্ট্রিটের বাসিন্দা বাসুদেব দেবনাথের মেয়ে পূজার সঙ্গে বিয়ে হয় ওই এলাকারই ডিসপেনসারি লেনের বাসিন্দা সুমিত পুরকায়েতের। ওই দম্পতির এক কন্যাসন্তানও রয়েছে। সুমিত বারাকপুরের একটি বেসরকারি সংস্থায় চাকরি করতেন। চাকরিতে সমস্যা হওয়ায় পরে তিনি নিউ টাউনের একটি বেসরকারি সংস্থায় যোগ দেন। প্রায় প্রত্যেকদিনই পূজা পুরকায়েতের সঙ্গে দেখা হত বা ফোনে কথা হত তাঁর মা স্বপ্না দেবনাথের। কিন্তু শনিবার বেলার দিক থেকেই মেয়ের সঙ্গে ফোনে কোনওভাবে যোগাযোগ করতে পারছিলেন না মা ও বাবা। শেষ পর্যন্ত সন্দেহের বশে শনিবার সন্ধ্যার আগে হাজির হন মেয়ের বাড়িতে। ঘরের ভেজানো দরজা খুলেই আঁতকে ওঠেন স্বপ্না দেবনাথ। দেখেন, ঘরের বিছানায় পড়ে আছেন মেয়ে পূজা। এমনভাবে পুরো ‘ক্রাইম সিন’ সাজানো হয়েছে, যাতে দেখে মনে হয় পূজা আত্মঘাতীই হয়েছেন। পাশে রয়েছে ‘সুইসাইড নোট’টিও। অচেতন অবস্থায় পূজাকে উত্তর কলকাতার একটি বেসরকারি হাসপাতালে নিয়ে যান পরিবারের লোকেরা। তাঁকে মৃত বলে ঘোষণা করা হয়। তদন্তে পুলিশ আধিকারিকদের হাতে আসে ‘সুইসাইড নোট’টি। সেটি দেখে পূজার পরিবারের লোকেদেরও সন্দেহ হয়। তাঁরাও নোটটি তাঁদের মেয়ের লেখা কি না, তা নিয়ে সন্দেহ প্রকাশ করেন।

    সুইসাইড নোটে ‘আমাদের মৃত্যুর জন্য কেউ দায়ী নয়’ কেন লেখা তা নিয়ে তদন্ত করতে শুরু করেন পুলিশ আধিকারিকরা। একই সঙ্গে দেখা যায়, পূজার স্বামী সুমিতের মোবাইল ফোন বন্ধ। কেন ও কোথায় সুমিত পালালেন, তা নিয়ে ওঠে প্রশ্ন। এর মধ্যেই শনিবার বেশি রাতে শ্যামপুকুর থানায় গিয়ে হাজির হন স্বপ্না দেবনাথ। তিনি লিখিতভাবে পুলিশের কাছে অভিযোগ জানান যে, তাঁর মেয়েকে অজ্ঞাতপরিচয় ব্যক্তি খুন করেছে। রবিবার ময়নাতদন্তের পর মোড় ঘোরে তদন্তের।

    পুলিশ জানতে পারে যে, নৃশংসভাবে খুন হয়েছেন বধূ। আর এর পরই তদন্তে উঠে আসে যে, সুমিত স্ত্রী পূজাকে সন্দেহ করতেন। সুমিত ঘনিষ্ঠদের কাছে জানিয়েছিলেন যে, তাঁর স্ত্রী বিবাহবহির্ভূত সম্পর্কে জড়িয়েছেন। বিষয়টি নিয়ে দম্পতির মধ্যে একাধিকবার কলহ হয়। পুলিশের ধারণা, শনিবার বিষয়টি চরমে যায়। তার পরই গলা টিপে স্ত্রীকে সুমিত খুন করে। নিজেকে বাঁচাতে ঘরের মধ্যেই আত্মহত্যার ঘটনা সাজায়।
  • Link to this news (প্রতিদিন)