• চালু কৃষি কলেজ, ইতিহাসের সাক্ষী হয়ে উচ্ছ্বসিত মেয়েরা
    আনন্দবাজার | ২৭ অক্টোবর ২০২৫
  • প্রেক্ষাগৃহে উপস্থিত ছাত্রীদের দিকে তাকিয়ে পুরুলিয়া রামকৃষ্ণ মিশন বিদ্যাপীঠের প্রাক্তনী, বর্তমানে সুপ্রিম কোর্টের বিচারপতি এন কোটেশ্বর সিংহ প্রথমেই বলেন, “ছাত্রীদেরও দেখতে পাচ্ছি এখানে। আগে শুধু ছাত্রদের দেখতাম। এটা বৈপ্লবিক পরিবর্তন।” বিপ্লবই বটে। রাজ্যে এই প্রথম পুরুলিয়া রামকৃষ্ণ মিশন বিদ্যাপীঠের তত্ত্বাবধানে পথচলা শুরু করা কৃষি কলেজে চালু হল সহশিক্ষা। প্রথম বর্ষে ভর্তি হওয়া পড়ুয়াদের মধ্যে যেখানে ছাত্রীদেরই সংখ্যা বেশি।

    গত বছরের জুলাইয়ে পুরুলিয়ার বোঙাবাড়িতে বিদ্যাপীঠের উল্টো দিকে পুরুলিয়া-বরাকর রাজ্য সড়কের পাশে কলেজের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপিত হয়েছিল। শনিবার সেই কলেজের উদ্বোধন করেন রামকৃষ্ণ মঠ ও মিশনের সাধারণ সম্পাদক স্বামী সুবীরানন্দ। অনুষ্ঠানে ছিলেন রাজ্যের পঞ্চায়েত ও গ্রামোন্নয়ন দফতরের মন্ত্রী প্রদীপ মজুমদার, পশ্চিম বর্ধমানের রানিগঞ্জের বিধায়ক তাপস বন্দ্যোপাধ্যায়, পুরুলিয়া জেলা পরিষদের সভাধিপতি নিবেদিতা মাহাতো, বিধানচন্দ্র কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় ও সিধো-কানহো-বীরসা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যযথাক্রমে অশোককুমার পাত্র ও পবিত্রকুমার চক্রবর্তী, আসানসোলের রামকৃষ্ণ মিশনের সম্পাদক স্বামী সোমাত্মানন্দ, সিধো-কানহো-বীরসা বিশ্ববিদ্যালয়ের পরীক্ষা নিয়ামক সুবলচন্দ্র দে প্রমুখ।

    স্বাগত ভাষণে পুরুলিয়া রামকৃষ্ণ মিশন বিদ্যাপীঠের সম্পাদক স্বামী শিবপ্রদানন্দ কৃষি কলেজ তৈরির ভাবনা ব্যাখ্যা করেন। স্বামী সুবীরানন্দ জানান, বিদ্যাপীঠের তত্ত্বাবধানে চলা প্রথম কৃষি কলেজ তামিলনাড়ুর কোয়েম্বত্তুরে চালু হয়েছে। তাঁর কথায়, “চেরাপুঞ্জি, অরুণাচল প্রদেশ, কোয়েম্বত্তুরে অনেক আগেই সহশিক্ষা শুরু হয়েছে। কলকাতার সরিষায় গার্লস স্কুল চলে। বিদ্যাপীঠের তত্ত্বাবধানে দেশে দ্বিতীয় পুরুলিয়ার এই কলেজেই সহশিক্ষা শুরু হল।”

    মন্ত্রী প্রদীপ মজুমদার বলেন, “শুধু পড়াশোনা, গবেষণায় আটকে থাকলে হবে না। এই মহাবিদ্যালয় হবে কাঁধে গামছা নিয়ে যে চাষি মাঠে চাষ করেন, তাঁর পাশে দাঁড়ানোর জন্য।” যখন কৃষিবিজ্ঞান নিয়ে পড়াশোনা করতেন, সেই ১৯৬৬-৭০ সালে কোনও সহপাঠিনী ছিলেন না জানিয়ে তাঁর সংযোজন, “এখন কৃষি কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয়গুলিতে ছাত্রীদের সংখ্যা অনেক বেশি। কৃষি দফতরেও মহিলা আধিকারিকদের সংখ্যা বৃদ্ধি পাচ্ছে।” কৃষিক্ষেত্রে যত বেশি করে মহিলারা আসবেন, ততই দেশ এগোবে, মত সভাধিপতির।

    কৃষি কলেজে ভর্তির সুযোগ পেয়ে উচ্ছ্বসিত ছাত্রীরাও। পশ্চিম মেদিনীপুরের বীরসিংহের বাসিন্দা নিশা ঘোষ, বাঁকুড়ার কোতুলপুরের মনামি মণ্ডলেরা জানান, “ইতিহাসের সাক্ষী হতে পারা বড় পাওনা। কলেজের পাঠ সম্পূর্ণ করে মাঠে কাজ করা মহিলা শ্রমিকদের পাশে দাঁড়ানোই লক্ষ্য হবে।” অন্যরাও জানান, সবাই যদি চিকিৎসক, বাস্তুকার হতে চান, খাদ্য ব্যবস্থায় কী ভাবে আরও স্বনির্ভর হওয়া সম্ভব! কলেজের শিক্ষাকে কাজে লাগিয়ে ধান, আনাজের চিকিৎসকহতে চান তাঁরা।
  • Link to this news (আনন্দবাজার)