গত বছর আরজি কর। এ বার এসএসকেএম (পিজি) হাসপাতালে নাবালিকাকে ধর্ষণের অভিযোগে ফের প্রশ্নের মুখে পড়েছে হাসপাতালের নিরাপত্তা ব্যবস্থা। স্বাস্থ্য দফতরের কর্তারাই জানাচ্ছেন, আরজি করের পরে মেডিক্যালে নিরাপত্তা ও সুরক্ষা সংক্রান্ত যে পরিকাঠামো গড়ে তোলার কথা বলা হয়েছিল, সেখানে ফাঁক রয়েছে।
পর্যাপ্ত কর্মীর অভাবে কাটোয়া মহকুমা হাসপাতালে ১০০ শয্যার নতুন ভবন চালু করা যায়নি। গ্রামীণ, ব্লক বা প্রাথমিক স্বাস্থ্য কেন্দ্রগুলিতে নিজস্ব নিরাপত্তারক্ষী নেই। সর্বত্র সিভিক ভলেন্টিয়ারও নেই। ফলে, পুলিশের টহলদারির উপরেই দাঁড়িয়ে রয়েছে রাতেবিরেতে গ্রামীণ হাসপাতালগুলির নিরাপত্তা ও সুরক্ষা ব্যবস্থা। জেলা প্রশাসন ঠিক করেছে, প্রতিটি স্বাস্থ্যকেন্দ্র, হাসপাতাল, মেডিক্যাল কলেজের সিসি ক্যামেরার ফুটেজ সরাসরি পুলিশের কন্ট্রোল রুমে পৌঁছনোর ব্যবস্থা করা হবে।
পূর্ব বর্ধমানে ব্লক প্রাথমিক ও গ্রামীণ হাসপাতাল রয়েছে ২৪টি। একটি স্টেট জেনারেল হাসপাতালে উন্নীত হয়েছে। কাটোয়া ও কালনায় রয়েছে মহকুমা হাসপাতাল। কালনায় গড়ে উঠেছে সুপার স্পেশালিটি হাসপাতালও। কাটোয়া ও কালনা দু’টি জায়গাতেই স্থানীয় বাসিন্দারা ছাড়াও ভিন্ জেলার রোগীদের ভিড় লেগে থাকে। বিভিন্ন সময়ে নানা অভিযোগে হাসপাতাল বা চিকিৎসকের উপর হামলারও ঘটনা ঘটে।
চিকিৎসকদের একাংশের দাবি, দু’টি মহকুমা হাসপাতালেই পর্যাপ্ত নিরাপত্তার ব্যবস্থা নেই। স্বাভাবিক ভাবে গ্রামীণ, ব্লক ও প্রাথমিক স্বাস্থ্যকেন্দ্রেও নিরাপত্তার অভাব বোধ করেন মহিলা চিকিৎসক থেকে নার্সরা। তাঁদের একাংশের দাবি, জেলার দু’টি প্রাথমিক স্বাস্থ্যকেন্দ্র ছাড়া বাকি জায়গায় রোগী ভর্তি থাকে না। কিন্তু ব্লক স্বাস্থ্যকেন্দ্র বা গ্রামীণ হাসপাতালে রোগী ভর্তি, প্রসব, অস্ত্রোপচার হয়। চারদিকে খোলা জায়গার মধ্যে স্বাস্থ্যকেন্দ্র বা হাসপাতাল থাকার ফলে নিরাপত্তার অভাব তাঁরা বেশি বোধ করে থাকেন।
জেলা স্বাস্থ্য দফতর সূত্রে জানা যায়, কাটোয়া মহকুমা হাসপাতালে ১৯ জন নিরাপত্তারক্ষী রয়েছেন। ৯০টির মতো সিসি ক্যামেরা রয়েছে। এই হাসপাতালে আরও ১০ জন নিরাপত্তা রক্ষীর সঙ্গে ৩০টির মতো সিসি ক্যামেরার প্রয়োজন বলে স্বাস্থ্য দফতরে জানানো হয়েছে। কালনার সুপার স্পেশালিটি হাসপাতালের সিসি ক্যামেরা নিয়ন্ত্রণ হয় স্বাস্থ্য ভবন থেকে। সেখানে আধুনিক নিয়ম মেনে সিসি ক্যামেরা লাগানো রয়েছে বলে জেলা স্বাস্থ্য ভবনের দাবি। পর্যাপ্ত নিরাপত্তারক্ষী রয়েছে বলেও জানা যায়। কাটোয়া ও কালনায় চুক্তভিত্তিক কর্মী রয়েছেন ৩৩ জন ও ১৩০ জন। ওই দুই হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের দাবি, নিরাপত্তারক্ষীদের ‘পুলিশ ভেরিফিকেশন’ হয়েছে। অস্থায়ী কর্মীদেরও ‘পুলিশ ভেরিকেশন’ করার জন্য সংশ্লিষ্ট ঠিকাদারদের বলা হয়েছে।
বর্ধমান মেডিক্যালে সব মিলিয়ে ৩০০ জন নিরাপত্তা রক্ষী ও ৩৩০ জন অস্থায়ী কর্মী রয়েছেন। ‘রাত্রির সাথী’ প্রকল্প থেকে গত বছর কয়েকজনের পুলিশ ভেরিফিকেশন হয়েছে। আজ, সোমবার ঠিকাদারদের সঙ্গে বৈঠক করে সবার পুলিশ ভেরিফিকেশন করে জমা দেওয়ার জন্য নির্দেশ দেবেন সুপার তাপস ঘোষ। তাঁর কথায়, “বৈঠকের পরে সমস্ত বিষয়টা ধরে ফের অডিট করে দেখব কোথায় কোথায় ফাঁক রয়েছে। পুলিশের কথা মতো কোথায় কোথায় আরও সিসি ক্যামেরা প্রয়োজন, আলোর প্রয়োজন, তা জেনে নিয়ে ফাঁক পূরণের চেষ্টা করা হবে। স্বাস্থ্য দফতরেও রিপোর্ট দেওয়া হবে।” মেডিক্যাল-মহকুমাস্তরে নজর থাকলেও বেহাল নিরাপত্তা গ্রামীণ এলাকায়। স্বাস্থ্য ভবন সূত্রে জানা যায়, ২০১৭ ও ২০১৯ সালে রাজ্য সরকার স্বাস্থ্য প্রতিষ্ঠানগুলিতে অতিরিক্ত রক্ষী নিয়োগের জন্য নির্দেশিকা জারি করে। তাতে জানানো হয়, বিপর্যয় মোকাবিলা দফতরের কর্মী ও অবসরপ্রাপ্ত পুলিশকর্মীদের নিয়ে নিরাপত্তারক্ষীর বাহিনী তৈরি করা হোক। ওই সব হাসপাতালে ন্যূনতম ৫ জন করে রক্ষী নিয়োগ করা হবে। কিন্তু সেই প্রস্তাব কার্যকর হয়নি। কালনা ২ বিপিএইচসি ছাড়া জেলার সব বিপিএইচসি ও গ্রামীণ হাসপাতালে সিসি ক্যামেরা রয়েছে। কিছু জায়গায় স্থানীয়ভাবে আলোর ব্যবস্থা করা হয়েছে। তবে তা পর্যাপ্ত নয় বলে চিকিৎসক থেকে কর্মীদের দাবি। ব্লক ও গ্রামীণ স্বাস্থ্যকেন্দ্রের নার্স ও মহিলা কর্মীদের দাবি, রাতের বেলা দু-এক জন স্বাস্থ্যকর্মী, দু'জন নার্সকে ডিউটি করতে হয়। অনেক সময় রোগীর আত্মীয়েরা নানা কারণে দুর্ব্যবহার করেন। অনেকে মদ্যপ অবস্থায় হাসপাতালে আসেন। ওয়ার্ডের ভিতর অবাধে প্রবেশ করেন রোগীর আত্মীয়রা।
সিএমওএইচ জয়রাম হেমব্রম বলেন, “গ্রামীণ হাসপাতাল বা স্বাস্থ্যকেন্দ্রে নিরাপত্তা নিয়ে সামনের সপ্তাহে আলোচনা করা হবে। ওই সব জায়গাতে পুলিশ টহল দেয়।”