দলের নির্দেশ, ইস্তফা হাওড়ার পুর প্রশাসকমণ্ডলীর ভাইস চেয়ারপার্সনের
আনন্দবাজার | ২৭ অক্টোবর ২০২৫
হাওড়া পুরসভার প্রশাসকমণ্ডলী থেকে পদত্যাগ করলেন দক্ষিণ হাওড়ার গুরুত্বপূর্ণ তৃণমূল নেতা তথা দক্ষিণ হাওড়ার ব্লক সভাপতি এবং পুর প্রশাসকমণ্ডলীর ভাইস চেয়ারপার্সন সৈকত চৌধুরী। হাওড়া পুরসভা সূত্রে জানা গিয়েছে, তাঁর পদত্যাগপত্র গৃহীত হয়েছে। তাঁর এই পদত্যাগকে কেন্দ্র করে চাঞ্চল্য ছড়িয়েছে রাজনৈতিক মহলে।
দীর্ঘ এক দশকেরও বেশি সময় ধরে সৈকত হাওড়া পুরসভার পদ্মপুকুর জল প্রকল্প এবং শহরে জল সরবরাহ ব্যবস্থার দায়িত্ব সামলেছেন। তাঁর ইস্তফার ফলে পুরসভার প্রশাসকমণ্ডলীতে সদস্য সংখ্যা দাঁড়াল ন’জন। পুরসভা সূত্রে জানা গিয়েছে, এখন থেকে পদ্মপুকুর জল প্রকল্পের দায়িত্ব সামলাবেন প্রশাসকমণ্ডলীর চেয়ারপার্সন সুজয় চক্রবর্তী নিজে। জেলা তৃণমূল সূত্রের খবর, গত লোকসভা নির্বাচনে দক্ষিণ হাওড়ায় নিজের ব্লকেই হেরে গিয়েছিলেন সৈকত। সেই কারণেই দল তাঁকে পুর প্রশাসকমণ্ডলীর ভাইস চেয়ারম্যানের পদ থেকে সরে যেতে বলেছে। যদিও সরকারি ভাবে হাওড়া জেলা তৃণমূল নেতৃত্ব এ কথা স্বীকার করেননি।
জেলা তৃণমূল সূত্রের খবর, পুজোর আগেই দলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় পুর প্রশাসনে ‘পারফরম্যান্স’-এর ভিত্তিতে রদবদল করার বার্তা দিয়েছিলেন। সেই সঙ্গে গত লোকসভা নির্বাচনের ফলাফলের ভিত্তিতে শহরাঞ্চলে দলের ‘গ্রহণযোগ্যতা’ পুনরুদ্ধারে প্রশাসনিক দায়িত্বে থাকা নেতাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার ইঙ্গিতও দল থেকে দেওয়া হয়েছিল। সেই কারণেই হাওড়া জেলা তৃণমূল নেতৃত্ব সৈকতকে সরিয়ে দিলেন বলে বৃহত্তর অংশের মত। হাওড়ায় দলীয় নেতাদের একাংশের ধারণা, প্রশাসকমণ্ডলী থেকে সৈকতের পদত্যাগেই বিষয়টি শেষ হবে না। ওই একই কারণে পুর প্রশাসকমণ্ডলী থেকে আরও তিন-চার জনকে সরানো হতে পারে বলে দলীয় সূত্রের খবর। দলীয় নেতৃত্বের নির্দেশ মাথায় রেখে দলের পক্ষ থেকে তেমনটাই ভাবা হচ্ছে।
নিজের পদত্যাগ প্রসঙ্গে সৈকত বলেন, ‘‘আমি দলের নির্দেশ মেনে পদত্যাগ করেছি। সামনে বিধানসভা নির্বাচন। দল চাইছে, আমি ওই গুরুত্বপূর্ণ প্রশাসনিক পদে না থেকে দলের হয়ে বেশি কাজ করি। তাই দলকে এখন থেকে আমি বেশি সময় দেব।’’ এ বিষয়ে তৃণমূলের জেলা সভাপতি গৌতম চৌধুরী বলেন, ‘‘দল মনে করেছে, ওঁকে প্রশাসনিক পদ থেকে সরিয়ে দলের কাজ করতে দেওয়া হবে। তাই এমন সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। কী কারণে তাঁকে সরে যেতে হল, তা সম্পূর্ণ দলের অভ্যন্তরীণ বিষয়।’’
হাওড়া পুরসভার ৫০টি ওয়ার্ডে জল সরবরাহের ক্ষেত্রে গত এক দশকে অনেক অভিজ্ঞতা সঞ্চয় করেছেন সৈকত। শহরে জল সরবরাহে সমস্যা হলে তাঁকে সঙ্গে সঙ্গে ব্যবস্থা নিতে দেখা গিয়েছে। ২০১৩ সালে হাওড়া পুরসভা বামফ্রন্টের হাত থেকে ছিনিয়ে নিয়ে তৃণমূল বোর্ড গঠন করার পর থেকেই নানা সময়ে সৈকতকে গুরুত্বপূর্ণ দফতর সামলাতে দেখা গিয়েছে। তাঁর পদত্যাগের ফলে হাওড়ায় জল সরবরাহ ব্যবস্থায় নজরদারির ক্ষেত্রে কি কোনও সমস্যা হবে? পুর প্রশাসকমণ্ডলীর চেয়ারপার্সন বলেন, ‘‘সৈকতকে পদত্যাগ করতে বলাটা রাজনৈতিক সিদ্ধান্ত। এ বিষয়ে আমার কিছু বলার নেই। এখন থেকে আমিই পুরসভার জল সরবরাহের বিষয়টা দেখব।’’