ঘটনার দিন প্রথম নয়, তার আগের কয়েক দিনও অভিযুক্ত অমিত মল্লিক এসএসকেএম হাসপাতালে গিয়েছিল বলে পুলিশ সূত্রের খবর। লালবাজারের খবর, ১৭ অক্টোবর শম্ভুনাথ পণ্ডিত হাসপাতাল এবং এসএসকেএম হাসপাতালে তাকে দেখা গিয়েছিল। কেন সেখানে ঘুরঘুর করছিল, তা খতিয়ে দেখছেন তদন্তকারীরা। ইতিমধ্যেই অমিতের মোবাইল ফোনের কল ডিটেলস সংগ্রহ করেছেন তদন্তকারীরা। মিলেছে ডেটা রেকর্ডও। সেই ফোনের সূত্র ধরেই, কারও প্রশ্রয়ে অমিত এসএসকেএম হাসপাতালে গিয়েছিল কি না, তা খুঁজছে পুলিশ। একই সঙ্গে চিকিৎসকদের পোশাক কী ভাবে অমিতের কাছে গেল, সে ব্যাপারেও খোঁজ শুরু করেছেন তদন্তকারীরা।
লালবাজারের একটি সূত্রের দাবি, ঘটনার পরে কয়েক জনের সঙ্গে ফোনে কথা বলেছিল অমিত। প্রয়োজনে তাঁদের ডেকে কথা বলতে পারে পুলিশ। ধৃতের মোবাইল থেকে কয়েকটি ভিডিয়ো উদ্ধার হয়েছে। সেগুলিও খতিয়ে দেখা হচ্ছে। অমিতকে লাগাতার জেরা করা হচ্ছে বলেও সূত্রের দাবি।
গত মাস দুয়েক ধরে এনআরএস হাসপাতালে নিরাপত্তারক্ষীর কাজ করছিল অমিত। হাসপাতালের জরুরি বিভাগের মূল গেটে মূলত নিরাপত্তার দায়িত্বে থাকত সে। তবে ইদানীং এই কাজ ছেড়ে অন্যত্র কাজের খোঁজ করছিল বলেও জানা গিয়েছে। সূত্রের খবর, ১৬ অক্টোবর এনআরএস হাসপাতালে শেষ কাজে গিয়েছিল অমিত। পরের দু’দিন অমিতের মোবাইল ফোন বন্ধ ছিল। যোগাযোগ করতে না পেরে তার জায়গায় অন্য আর এক জনকে ‘রস্টারে’ নিয়ে আসা হয়। এনআরএস হাসপাতালে কর্তব্যরত এক নিরাপত্তারক্ষীর কথায়, ‘‘হাত ভর্তি বালা ছিল। ডিউটিতে এলেও সে ভাবে কারও সঙ্গে কথা বলত না। একবেলা ডিউটি করে চলে যেত। গম্ভীর মুখে সব সময় ঘুরে বেড়াত। সহকর্মীরাও বিশেষ ওর সঙ্গে কথা বলতেন না।’’
অমিতের এই গতিবিধি ভাবাচ্ছে তদন্তকারীদের। এনআরএস হাসপাতালে কাজে না যাওয়ার পর থেকে গ্রেফতার হওয়ার আগে পর্যন্ত ছ’দিনে একাধিকবার অভিযুক্তকে এসএসকেএম এবং শম্ভুনাথ পণ্ডিত হাসপাতালে দেখা গিয়েছিল বলে খবর। কারও ‘প্রশ্রয়ে’ সে এসএসকেএম হাসপাতালে এসেছিল কি না, তা খতিয়ে দেখছে পুলিশ। অমিতকে কেউ ওই হাসপাতালে চাকরির আশা দিয়েছিল কি না, তা-ও খতিয়ে দেখা হচ্ছে। পুলিশের একাংশের বক্তব্য, অমিতকে জেরা এবং মোবাইলের সূত্র ধরে এই প্রশ্নের উত্তর মেলা সম্ভব।
পুলিশ সূত্রে খবর, ১৬ তারিখ থেকে এনআরএস হাসপাতালের ডিউটিতে না যাওয়ার কথাও পরিবারের কাছে লুকিয়ে গিয়েছিল অমিত। তার পরিবার সূত্রে জানা গিয়েছে, এসএসকেএম হাসপাতালে নাবালিকাকে ধর্ষণের পর বিকেল পাঁচটা নাগাদ ধাপার বাড়িতে ফিরেছিল সে। বৃদ্ধা মাকে জানিয়েছিল, এনআরএস হাসপাতালের ডিউটি সেরে ফিরেছে। পরে রাত আটটা নাগাদ বাড়িতে পুলিশ হাজির হলে ঘটনার কথা জানতে পারেন পরিবারের সদস্যেরা। এ দিন অমিতের ধাপার বাড়িতে গিয়ে দেখা গেল, বাড়ির সামনে প্রতিবেশীদের জটলা। তার মা চন্দা মল্লিক বলেন, ‘‘বাড়িতে এসেও তেমন কথা বলত না। ঘরের ভিতরে থাকত। বাড়িতে পুলিশ আসার আগে পর্যন্ত তো আমরা জানতে পারিনি, ও এমন কাজ করে এসেছে।’’