ওলা-উবারের দিন শেষ? চড়া ভাড়া থেকে মুক্তি দিতে আসছে সরকারি অ্যাপ ক্যাব ‘ভারত ট্যাক্সি’
আজকাল | ২৮ অক্টোবর ২০২৫
আজকাল ওয়েবডেস্ক: অ্যাপ ক্যাব ব্যবহারকারীদের জন্য বড় সুখবর। পকেটবান্ধব ও ন্যায্য ভাড়ায় যাতায়াতের সুযোগ করে দিতে নতুন অ্যাপ ক্যাব প্রকল্প ঘোষণা করেছে কেন্দ্র সরকার। নাম - ‘ভারত ট্যাক্সি’। বেসরকারি ক্যাব পরিষেবাগুলির অনিয়ন্ত্রিত ভাড়া বৃদ্ধি ও কমিশন নির্ভর ব্যবস্থা থেকে সাধারণ জনগণকে মুক্তি দিতে নতুন এই সরকারি অ্যাপ ক্যাব পরিষেবা এক যুগান্তকারী পদক্ষেপ হতে পারে বলে মনে করছেন অনেকেই।
প্রকল্পটি কেন্দ্রীয় সহযোগিতা মন্ত্রক এবং ন্যাশনাল ই-গভর্ন্যান্স ডিভিশন- এর যৌথ উদ্যোগে গড়ে তোলা হচ্ছে। সূত্রের খবর, এটি দেশের প্রথম ট্যাক্সি পরিষেবা যেখানে চালকরা কেবল কর্মচারী নন, বরং মালিক ও শেয়ারহোল্ডার হিসেবেও যুক্ত থাকতে পারবেন। চলতি বছরের নভেম্বর মাস থেকে দিল্লিতে এই প্রকল্পের পাইলট পর্ব শুরু হবে বলে খবর। প্রাথমিকভাবে প্রায় ৬৫০ জন চালক-মালিক এই প্রকল্পে অংশ নেবেন। পরীক্ষামূলক ভাবে পরিষেবা সফল হলে ডিসেম্বরের মধ্যে ভারতের অন্যান্য শহরেও এই পরিষেবা চালু করার পরিকল্পনা রয়েছে কেন্দ্রের।
বদলে যাবে গাড়িচালকদের নামও। ‘ভারত ট্যাক্সি’-র চালকদের বলা হবে ‘সারথি’- অর্থাৎ পথপ্রদর্শক। এই নামকরণ প্রতীকী অর্থে চালকদের মর্যাদা ও সম্মান বৃদ্ধির উদ্দেশ্যেই করা হয়েছে বলে জানান এক আধিকারিক।
তবে এই প্রকল্পের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ দিক হল, চালকরা নিজেরাই নিজেদের ট্যাক্সির অংশীদার হতে পারবেন। তাঁরা কো-অপারেটিভের সদস্য ও শেয়ারহোল্ডার হিসেবে যুক্ত থাকবেন। ফলে পরিষেবা সংক্রান্ত নানা সিদ্ধান্তগ্রহণে তাঁদের সরাসরি ভূমিকা থাকবে। পাশাপাশি এই প্রকল্পে কোনও কমিশন ব্যবস্থা থাকবে না। অর্থাৎ ভাড়ার পুরো অর্থই চালকের হাতে পৌঁছাবে। ওলা, উবারের মতো অ্যাপ-ক্যাব প্ল্যাটফর্মগুলির চালকের থেকে নির্দিষ্ট পরিমাণ অর্থ কেটে নেয়। সেই প্রথা এখানে থাকছে না।
ভাড়া নির্ধারণের ক্ষেত্রেও থাকছে নতুন নিয়ম। ‘ভারত ট্যাক্সি’-তে অতিরিক্ত সার্জ প্রাইস বা আকস্মিক ভাড়া বৃদ্ধির মুখে পড়তে হবে না যাত্রীদের। এই প্ল্যাটফর্মে বিভিন্ন রুটের ভাড়া আগে থেকেই নির্ধারণ করা থাকবে। সরকারের আশা এতে অনেকটাই চাপ কমবে মধ্যবিত্তের পকেটে। পাশাপাশি নতুন এই পরিষেবা কেন্দ্রের বিভিন্ন সরকারি ডিজিটাল প্ল্যাটফর্মের সঙ্গে সংযুক্ত করা হবে। এটি ‘ডিজিলকার’, ‘উমঙ্গ’ প্রভৃতি অ্যাপের সঙ্গে সংযুক্ত থাকার ফলে বুকিং, নথি যাচাই, ও অর্থপ্রদানের প্রক্রিয়া আরও সহজ হবে যাত্রীদের জন্য।
প্রসঙ্গত, গত কয়েক বছরে ওলা ও উবের-এর মতো অ্যাপভিত্তিক গাড়ি পরিষেবাগুলি নিয়ে যাত্রী ও চালক - উভয়ের দিক থেকেই একাধিক অভিযোগ উঠেছে। অতিরিক্ত ভাড়া, ঠিকঠাক পরিষেবা না পাওয়া কিংবা স্বচ্ছতা নিয়ে বারংবার অভিযোগ উঠেছে যাত্রীদের দিক থেকে। অন্যদিকে, বেশি কমিশন নেওয়া এবং কাজের নিরাপত্তাহীনতার বিরুদ্ধে প্রতিবাদে নেমেছেন গাড়িচালকদের একটি অংশ।
এই প্রেক্ষাপটে, সরকারের নতুন এই মডেলটি চালকদের অর্থনৈতিক স্বাধীনতা ও ন্যায্য লাভের নিশ্চয়তা দেবে বলেই মনে করছে সংশ্লিষ্ট মহল। সেই সঙ্গে যাত্রীদেরও বিশ্বাসযোগ্য ও সুলভ ভাড়ায় যাত্রার সুযোগ এনে দেবে। সম্প্রতি কেন্দ্রের একটি বিবৃতিতে জানানো হয় ‘ভারত ট্যাক্সি’ “সহকার সে সমৃদ্ধি”- প্রকল্পের অংশ। এর লক্ষ্য সহযোগিতা ও সমবায় গঠনের মাধ্যমে সর্বস্তরের মানুষের আর্থিক উন্নয়ন নিশ্চিত করা। শেষ পর্যন্ত ‘ভারত ট্যাক্সি’ ভারতীয় ট্যাক্সি পরিষেবায় নতুন দৃষ্টান্ত স্থাপন করতে পারে কি না সেটাই এখন দেখার।