• বাংলার ১০০ দিনের কাজের টাকা মঞ্জুর করতে হবে কেন্দ্রকে
    দৈনিক স্টেটসম্যান | ২৮ অক্টোবর ২০২৫
  • সুপ্রিম কোর্টে বড় ধাক্কা খেল কেন্দ্র। ১০০ দিনের কাজ নিয়ে হওয়া মামলায় কেন্দ্রের আবেদন খারিজ করে কলকাতা হাইকোর্টের নির্দেশ বহাল রাখল শীর্ষ আদালত। প্রসঙ্গত, প্রায় ৩ বছর ধরে রাজ্যে বন্ধ হয়ে থাকা ১০০ দিনের কাজ গত ১ আগস্ট থেকে শুরু করতে বলেছিল হাইকোর্ট। উচ্চ আদালতের এই নির্দেশকে চ্যালেঞ্জ করে সুপ্রিম কোর্টের দ্বারস্থ হয় কেন্দ্রীয় সরকার।

    কেন্দ্রের উদ্দেশে সুপ্রিম কোর্টের বিচারপতি বিক্রম নাথ এবং বিচারপতি সন্দীপ মেহতার বেঞ্চ জানায়, ‘আপনারা মামলা তুলে নেবেন, না কি আমরা খারিজ করব?’ এরপর আদালত মামলাটি খারিজ করে দেয়। আদালতের এই নির্দেশ নিঃসন্দেহে স্বস্তি দিল রাজ্যকে। এবার হাইকোর্টের নির্দেশ মেনে কেন্দ্র রাজ্যকে ১০০ দিনের কাজের টাকা দেবে। ফলে চার বছর পর ফের ১০০ দিনের কাজ শুরু হবে বাংলায়।

    রাজ্যের আইনজীবী কল্যাণ বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, ‘পশ্চিমবঙ্গের মানুষের স্বার্থের বিরুদ্ধে গিয়ে কেন্দ্রের সরকার ১০০ দিনের কাজের টাকা আটকে রেখেছিল। হাইকোর্ট আগেই এই বিষয়ে রায় দিয়েছিল। তার বিরুদ্ধে সুপ্রিম কোর্টে গিয়েছিল কেন্দ্র। আজ মাত্র ৩০ সেকেন্ডে কেন্দ্রের আর্জি খারিজ করে দিয়েছেন বিচারপতিরা। মানুষও দেখল কারা সাধারণ মানুষের টাকা আটকে রেখেছে।’

    এদিনের রায় নিয়ে এক্স হ্যান্ডলে তৃণমূলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় লিখেছেন, ‘রাজনৈতিকভাবে আমাদের পরাজিত করতে না পেরে বিজেপি বঞ্চনাকে অস্ত্র হিসেবে ব্যবহার করেছিল। যাঁরা মনে করেছিল বাংলাকে হেনস্থা করা যায়, চুপ করিয়ে দেওয়া যায়, আজকের রায় তাঁদের গালে গণতান্ত্রিক উপায়ে থাপ্পড় মেরেছে। তাঁরা মানুষের ভোটেও হেরেছে, সুপ্রিম কোর্টেও হারল।… বাংলা কখনই হার মানেনি। আমরা প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলাম যে প্রতিটি ন্যায্য টাকার জন্য, প্রতিটি সৎ কর্মীর জন্য লড়াই করব।…যেমনটি আমি আগেও বলেছি, আবারও বলব, চলবে না অন্যায়, টিকবে না ফন্দি, জনগণের আদালতে হতে হবে বন্দি! জয় বাংলা।’

    প্রসঙ্গত, বাংলায় গত তিন বছর ধরে ১০০ দিনের কাজ বন্ধ রয়েছে। এনিয়ে প্রথম থেকেই সরব হয়েছে রাজ্যের শাসকদল তৃণমূল কংগ্রেস। কেন্দ্রের বক্তব্য, ১০০ দিনের কাজের জন্য দেওয়া টাকা নিয়ে পশ্চিমবঙ্গে ব্যাপক দুর্নীতি হয়েছে। রাজ্যে প্রকৃত জব কার্ড হোল্ডাররা এই প্রকল্পের সুবিধা থেকে বঞ্চিত থেকেছেন। প্রকৃত সুবিধাভোগীদের বঞ্চিত করে ওই টাকা অন্যদের ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টে পাঠানো হয়েছে। এই যুক্তিতেই এরাজ্যে ১০০ দিনের কাজের বরাদ্দ টাকা আটকে রেখেছিল কেন্দ্র।

    চলতি ১৮ জুন কলকাতা হাইকোর্টের তৎকালীন প্রধান বিচারপতি টিএস শিবজ্ঞানম এবং বিচারপতি চৈতালি চট্টোপাধ্যায় দাসের ডিভিশন বেঞ্চ জানিয়েছিল, বাংলায় ১০০ দিনের কাজ আবার শুরু করতে হবে। সমগ্র প্রকল্পটিকে বন্ধ করে রাখা যাবে না। ওই শুনানিতে প্রধান বিচারপতি শিবজ্ঞানমের বেঞ্চের পর্যবেক্ষণ ছিল, যাঁরা কাজ করতে পারছেন না বা কাজ করেও প্রাপ্য টাকা পাচ্ছেন না, তাঁদের কেন ভুগতে হবে? ১০০ দিনের কাজ কেন আটকে রাখা হবে?

    আদালত জানায়, প্রয়োজনে যে চার জেলা থেকে দুর্নীতির অভিযোগ উঠেছে, সেই জেলাগুলি বাদ রেখে বাকি অংশে কাজ চালু করার কথা হোক। ১০০ দিনের কাজ একটি দীর্ঘমেয়াদী প্রকল্প, এর পুরো টাকায় দেয় কেন্দ্রীয় সরকার। জনস্বার্থে এই কাজ চালু হওয়া জরুরি। এরপর কলকাতা হাইকোর্টের এই সিদ্ধান্তকে চ্যালেঞ্জ করে সুপ্রিম কোর্টের দ্বারস্থ হয় কেন্দ্র।
  • Link to this news (দৈনিক স্টেটসম্যান)