• পাহাড়ের নেশায় বুঁদ, ট্রেকিং করে ১৩৫৫০ ফুট উচ্চতার অন্নপূর্ণা বেসক্যাম্পে জলপাইগুড়ির শিক্ষিকা
    ২৪ ঘন্টা | ২৮ অক্টোবর ২০২৫
  • প্রদ্য়ুত্ দাস: শিক্ষিকার সাফল্যে উত্ফুল্ল জলপাইগুড়িবাসি। ট্রেকিং করে ১৩ হাজার ৫৫০ ফুট উচ্চতায় অন্নপূর্ণা বেস ক্যাম্পে পৌঁছে গেলেন জলপাইগুড়ির প্রাথমিক স্কুল শিক্ষিকা সোনালী সিং।

    পাহাড় চড়ার নেশায় বুঁদ শিক্ষিকা। বাড়িতে ৬৮ বছরের বৃদ্ধ মা। পড়শিদের উপর তাঁর দেখভালের দায়িত্ব দিয়েই বেরিয়ে পড়েছিলেন পাহাড়ে চড়তে। অবশেষে ৭৫ কিমি ট্রেক করে ৪১৩০ মিটার উচ্চতায় পৌঁছে গেলেন অন্নপূর্ণা বেসক্যাম্পে। টানা চারদিনের চেষ্টায় জীবনে প্রথমবার পর্বতারোহণ অভিযান সফল হওয়ায় আপ্লুত জলপাইগুড়ির নিউ টাউনপাড়ার বাসিন্দা সোনালী সিং।

    ময়নাগুড়ির দোমোহনি কাঁঠালবাড়ি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষিকা সোনালী। বিয়ে করেননি। দিদির বিয়ে হয়েছে শিলিগুড়িতে। মাকে নিয়ে জলপাইগুড়িতে থাকেন তিনি। বরাবর পাহাড় তাঁকে টানে। তবে আর পাঁচজনের মতো পাহাড়ে ঘুরতে যেতে পছন্দ করেন না ওই শিক্ষিকা। ট্রেক করে পাহাড়ের সৌন্দর্য উপভোগ করতে চান তিনি। এই ইচ্ছেতেই শান দিতে ২০২৩ সালে বাঁকুড়ার শুশুনিয়া পাহাড়ে পৌঁছে যান সোনালী। করেন রক ক্লাইম্বিং কোর্স। তারপর থেকেই একটু একটু করে পাহাড়ে চড়া শুরু হয়।

    ঠিক করেন, অন্নপূর্ণা বেসক্যাম্প দিয়েই শুরু করবেন পর্বতাভিযান। সেইমতো গত দু’বছর ধরে নিজেকে মানসিক ও শারীরিকভাবে তৈরি করেছেন। কিন্তু মেয়ে এভাবে পাহাড়ে ট্রেকিং করুক, কখনওই চাননি সোনালীর মা আরতী। অন্নপূর্ণা বেসক্যাম্প অভিযানেও প্রবল আপত্তি ছিল তাঁর। কিন্তু শেষমেশ মেয়ের জেদের কাছে হার মানেন মা। অভিযানে যাওয়ার সম্মতি দেন।

    আত্মীয় ও পড়শিদের উপর বৃদ্ধা মায়ের দেখভালের দায়িত্ব দিয়ে গত ৮ অক্টোবর বাড়ি থেকে রওনা হন সোনালী। শিলিগুড়ির পানিট্যাঙ্কি দিয়ে নেপালের কাঁকড়ভিটায় পৌঁছে বাসে চাপেন। প্রায় ১৬ ঘণ্টার বাস জার্নি করে পৌঁছন নেপালের পোখরা। এরপর অন্নপূর্ণা বেসক্যাম্পে অভিযানের জন্য সংগ্রহ করেন প্রয়োজনীয় অনুমতিপত্র। ওই অনুমতিপত্র নিয়ে পৌঁছন ঘানড্রুক। সেখান থেকেই শুরু হয় ট্রেকিং।

    সোনালীর কথায়, টানা চারদিন ধরে প্রায় ৭৫ কিমি ট্রেক করে আমি ৪১৩০ মিটার অর্থাৎ সাড়ে ১৩ হাজার ফুট উঁচুতে অন্নপূর্ণা বেসক্যাম্পে পৌঁছই। এইপথে অজস্র সিঁড়ি পেরতে হয়েছে। ট্রেক করতে হয়েছে পাহাড়। বহু প্রতিকূলতার সম্মুখীন হতে হয়েছে। কিন্তু অন্নপূর্ণা বেসক্যাম্পে পৌঁছনোর পর বুঝেছি, শারীরিক সক্ষমতার চেয়েও মনের জোরটাই আসল। যে পথ চারদিনে উঠেছি, নামার সময় দু’দিনে পেরিয়েছি সেই পথ।

    কেমন ছিল পৃথিবীর দশম উচ্চতম শৃঙ্গের বেসক্যাম্পে পৌঁছনোর অভিজ্ঞতা? সোনালী বলেন, পাহাড়ে চড়ার পথে থাকাখাওয়ার জায়গা খুবই কম। আমার যেখানে বিশ্রামের জন্য বুকিং ছিল, তা বাতিল হয়ে যাওয়ায় বিপদে পড়ি। কয়েক কিমি পাহাড়ে চড়ে তারপর দোভান নামে একটি জায়গায় কোনওমতে থাকাখাওয়ার জায়গা পাই। তবে যে মুহূর্তে অন্নপূর্ণা বেসক্যাম্পে পা রাখি, তখন সব কষ্ট ভুলে গিয়েছি। আনন্দে ওই রাতে ঘুম আসেনি। এরপর এভারেস্টের বেসক্যাম্পে পৌঁছনোর ইচ্ছে রয়েছে।

  • Link to this news (২৪ ঘন্টা)