উচ্চ মাধ্যমিকের পর হ্যাকিং নিয়ে পড়াশোনা, বিধাননগর পুলিশের জালে ‘মোস্ট ওয়াটেন্ড’ সাইবার প্রতারক
প্রতিদিন | ২৮ অক্টোবর ২০২৫
ফারুক আলম, বিধাননগর: উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষায় পাশ করে হ্যাকিং নিয়ে পড়াশোনা করে সাইবার প্রতারণার খুঁটিনাটি গুলে খেয়েছেন! জালিয়াতির বিশাল সাম্রাজ্য গড়ে তুলেছে রীতিমতো! অসাধারণ বুদ্ধিমত্তা, চাতুর্য ও অভিনব কৌশলের জোরে গত পাঁচ বছর ধরে পশ্চিমবঙ্গ, কর্নাটক, সিকিম, রাজস্থান, উত্তরাখণ্ড-সহ ভারতের ১৩টি রাজ্যে জালিয়াতির নেটওয়ার্ক তৈরি করে রয়ে গিয়েছিল পুলিশের নাগালের বাইরে। শেষমেশ বিধাননগর কমিশনারেটের পুলিশের জালে ধরা পড়ল দেশের সেই ‘মোস্ট ওয়াটেন্ড’ সাইবার প্রতারক অজয় কে ওরফে কুড়াপতি অজয়। দাঁও মারার পরে প্রতারিতদের কুরিয়র মারফত মোবাইল ফোন, ল্যাপটপ, ডেবিট ও ক্রেডিট কার্ড ফেরত দিয়ে প্রতারণায় ভিন্ন মাত্রা জুড়েছিলেন তিনি।
বিধাননগর পূর্ব থানায় দায়ের হওয়া এক মামলার তদন্তে নেমেছিলেন তদন্তকারীরা। মোবাইলের টাওয়ার লোকেশনের সূত্র ধরে শনিবার রাতে ওই ‘ধুরন্ধর’কে জালে তুলেছে পুলিশ। ধৃত যুবকের থেকে মিলেছে ৩৮টি মোবাইল সিমকার্ড, অসংখ্য আধার কার্ড ও একাধিক বৈদ্যুতিন সরঞ্জাম। পুলিশ সূত্রের খবর, আদতে বেঙ্গালুরুর বাসিন্দা অজয় ২০১৬ সালে বাড়ির সঙ্গে সব সম্পর্ক ছিন্ন করে অনলাইন প্রতারণায় ‘ক্যারিয়ার’ গড়তে নামেন। প্রতারণার পরে তিনি নিমেষে সিমকার্ড পাল্টে ফেলে অন্য রাজ্যে গা ঢাকা দিতেন! অভিযোগ, আধার কার্ডে নম্বর একই রেখে বারবার নিজের নাম বদলে ফেলতেন। এইভাবে পুলিশকে বারবার ধোঁকা দিয়েছেন তিনি।
বস্তুত, অজয়ের নিখুঁত ‘মোডাস অপারেন্ডি’ দেখে বিধাননগর কমিশনারেটের দুঁদে অফিসাররাও হতবাক। সোমবার দুপুরে কমিশনারেটের সদর দপ্তরে সাংবাদিক সম্মেলন করেন বিধাননগর পুলিশের গোয়েন্দা প্রধান কুলদীপ সানোওয়ানি। তিনি বলেন, “অজয় বিভিন্ন রাজ্যে ঘুরে বেড়াতেন। থাকতেন হোটেলে। হোটেলের অন্য আবাসিকদের সঙ্গে বন্ধুত্ব পাতিয়ে তাঁদের ঘর থেকে ম্যানিব্যাগ, মোবাইল, ল্যাপটপ, ডেবিট-ক্রেডিট কার্ড ইত্যাদি হাতিয়ে চম্পট দিতেন। এমন বহু ক্রেডিট ও ডেবিট কার্ড দিয়ে সোনার গয়না, দামী ফোন কিনেছেন। ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্ট থেকে লোপাট করেছেন নগদ টাকা।
বিধাননগরে দায়ের হওয়া মামলাটিতে চোরাই ক্রেডিট কার্ড দিয়ে ছ’টি আইফোন, একটি দামী ফোন, সাড়ে পাঁচ লক্ষ টাকার স্বর্ণালঙ্কার কেনা ও ৫০ হাজার টাকা তুলে নেওয়ার অভিযোগ ছিল। সব মিলিয়ে প্রতারণার অঙ্ক প্রায় ১৫ লক্ষ টাকা। দেশের বিভিন্ন থানায় অজয়ের বিরুদ্ধে একই ধরনের বিস্তর মামলা বহাল রয়েছে।