• নির্ণায়ক মহিলা ভোট, মন জয়ে নিত্যনতুন ঘোষণা যুযুধান দুই জোট এনডিএ-ইন্ডিয়ার
    বর্তমান | ২৮ অক্টোবর ২০২৫
  • নিজস্ব প্রতিনিধি, নয়াদিল্লি: জাতপাতের অঙ্কই একমাত্র নির্ণায়ক, এমন নয়! বিহারের বিধানসভা ভোটে আসলে মহিলারাই এবার প্রধান ফ্যাক্টর। তাই শুরু হয়েছে জোরদার টানাপোড়েন। বিদায়ী মুখ্যমন্ত্রী নীতীশ কুমার ভোট ঘোষণার প্রাক্কালে মহিলাদের জন্য ঘোষণা করেছেন ১০ হাজার টাকা করে আর্থিক সাহায্য। এই টাকায় মহিলারা শুরু করতে পারবে নিজেদের কোনও ব্যবসার উদ্যোগ। একবার ব্যবসা শুরু হলে ২ লক্ষ টাকা পর্যন্ত ব্যাঙ্কঋণও দেওয়া হবে। যদিও বিহারের গ্রামীণ মহিলাদের একাংশ সমীক্ষকদের বলেছে, ১০ হাজার টাকায় কী ব্যবসা শুরু হবে? দুটো ছাগলের দাম কত, সেটা জানেন নীতীশবাবু? কিন্তু ইতিমধ্যেই দেড় কোটি মহিলা ওই সাহায্য পেয়ে গিয়েছে এবং হাতে ১০ হাজার টাকা পাওয়াও কম খুশির নয়। পিছিয়ে নেই বিরোধী মহাজোট ‘ইন্ডিয়া’ও। আরজেডি-র তরফে তেজস্বী যাদব ঘোষণা করেছেন, ‘আমরা ক্ষমতায় এলে মহিলাদের ২৫০০ টাকা করে দেব। মাসে মাসে নয়, একসঙ্গে ৩০ হাজার টাকা দেওয়া হবে। ওই টাকায় মহিলারা নিজেদের আয় বাড়াতে কিছু শুরু করতে পারবে।’

    মহিলা ভোট নিয়ে এহেন টানাটানির কারণ একটাই। বিহারে বিগত ২০ বছরের ভোট বিশ্লেষণে দেখা যাচ্ছে, মহিলাদের ভোট দেওয়ার শতকরা হার পুরুষদের তুলনায় ক্রমেই লাফিয়ে বাড়ছে। পুরুষ ভোটারদের মধ্যে যত মানুষ ভোট দিয়েছে, মহিলাদের মধ্যে ভোট দেওয়ার প্রবণতা঩ সেই তুলনায় ৬ শতাংশ বেশি। এর অন্যতম কারণ হিসেবে বলা হচ্ছে যে, বিহারের গ্রামে গ্রামে পুরুষরা পরিযায়ী শ্রমিক। একদিনের জন্য ভোট দিতে খুব কম মানুষই আসে। বিগত বছরগুলিতে মহিলাদের ভোট দেওয়ার প্রবণতা নীতীশ কুমারের পক্ষেই বেশি। এমনকি সবথেকে বড় যে সমীক্ষা রিপোর্ট উঠে এসেছে, সেটি চমকপ্রদ—যতই বিহারের গ্রামীণ এলাকায় যাওয়া হয়েছে, ততই দেখা গিয়েছে মহিলাদের ভোটদানে সিদ্ধান্ত গ্রহণের একক ক্ষমতা বৃদ্ধি পাচ্ছে ক্রমেই। অর্থাৎ, একই পরিবারের পুরুষ যে দলকে ভোট দিয়েছে, নারীরা বিনা প্রশ্নে তাদের সমর্থন করেছে, এমন নয়। বরং উলটো। মদের উপর নিষেধাজ্ঞা জারি হওয়ায় বিহারের পুরুষদের একটি অংশ নীতীশ কুমারের বিরুদ্ধে ভোট দিয়েছে। মহিলারা কিন্তু ধন্যবাদ স্বরূপ ভোট দিয়ে চলেছেন নীতীশ কুমারকেই। এতদিন মনে করা হয়েছে, মগধ তথা কেন্দ্রীয় বিহারেই বেশি করে মহিলাদের ক্ষমতায়ন এবং ভোটদানের সিদ্ধান্ত বাড়ছে। কিন্তু বিগত সাত বছরের পরিসংখ্যানে দেখা গিয়েছে, উত্তর বিহার, মিথিলাঞ্চল, সীমাঞ্চলজুড়েও সেই প্রবণতা ক্রমবর্ধমান। আর সেই কারণেই এবারও মনে করা হচ্ছে, যতই উচ্চবর্ণ, দলিত, মহাদলিত, ওবিসির হিসেবনিকেশে ব্যস্ত থাকুক বিশ্লেষকরা, মহিলা ভোট ফ্যাক্টরকে ‘ডি-কোড’ করতে না পারলে বিহারের ভোটকে আন্দাজ করা যাবে না। 
  • Link to this news (বর্তমান)