• গাড়িতে পিষে কৃষককে খুন বিজেপি নেতার! শ্লীলতাহানি দুই মেয়েকে, ডাবল ইঞ্জিন মধ্যপ্রদেশে তোলপাড়
    বর্তমান | ২৮ অক্টোবর ২০২৫
  • ভোপাল: ডাবল ইঞ্জিন সরকার বলে কথা। সেই শাসকদলের দোর্দণ্ডপ্রতাপ নেতাকেই কি না জমি বিক্রি করতে রাজি নয় সামান্য এক কৃষক! সেই ‘অপরাধে’ শুধু মারধর নয়, তাঁকে গাড়ি চাপা দিয়ে প্রাণে মেরে ফেলল মধ্যপ্রদেশের বিজেপির এক বুথ কমিটির সভাপতি ও তাঁর সঙ্গীরা। রেহাই পাননি রামস্বরূপ ধাকড় নামে ওই কৃষকের স্ত্রী-মেয়েরাও। জামাকাপড় ছিঁড়ে শ্লীলতাহানি এবং মারধর করা হয় দুই মেয়েকে। রবিবার এমনই নৃশংস ঘটনার সাক্ষী রইল গুনা জেলার গণেশপুরা গ্রাম। বিজেপি নেতা মহেন্দ্র নাগর ও তাঁর সঙ্গীদের বিরুদ্ধে অভিযোগ দায়ের হয়েছে। তবে এখনও পর্যন্ত অভিযুক্তদের গ্রেফতার করতে পারেনি মধ্যপ্রদেশ পুলিশ।

    স্থানীয়দের দাবি, গণেশপুরা গ্রামটি ফতেগড় থানার আওতাধীন। কিন্তু এখানে আইনের কোনও শাসন নেই। বিজেপি নেতা মহেন্দ্রর কথাই এখানে আইন। নামপ্রকাশে অনিচ্ছুক এক গ্রামবাসী বলেন, ‘অন্তত ২৫ জন কৃষক নামমাত্র দামে নিজেদের জমি বিক্রি করে গ্রাম ছেড়ে পালাতে বাধ্য হয়েছেন। যাঁরাই বাধা দিয়েছে, তাঁদের কপালে জুটেছে মারধর। হামলার আশঙ্কা সত্ত্বেও রাজস্থানের পাঁচলাওয়াড়ার ছ’বিঘা জমি বিক্রি করতে চাননি রামস্বরূপ। সেই জমির জন্য শেষ পর্যন্ত নিজের জীবন দিতে হল তাঁকে।’ প্রত্যক্ষদর্শীরা জানিয়েছেন, গত রবিবার বিকেলে স্ত্রীর সঙ্গে নিজের জমিতে যাচ্ছিলেন বছর চল্লিশের রামস্বরূপ। সেই সময় তাঁদের পথ আটকায় মহেন্দ্র ও হরিশ, গৌতম সহ বিজেপি নেতার অন্যান্য সঙ্গীরা। গাড়ি থেকে নেমে লাঠি-রড নিয়ে ধাকড় দম্পতির উপর তারা চড়াও হয়। বেধড়ক মারধরে রামস্বরূপের পাঁজরের হাড় ভেঙে যায়। এরপর তাঁকে প্রথমে একটি ট্র্যাক্টর ও পরে গাড়ি চাপা দেয় দুষ্কৃতীরা। রামস্বরূপের মেয়েরা বলেন, ‘বাবা আক্রান্ত হয়েছে শুনে আমরা বাঁচাতে ছুটে যাই। কিন্তু ওরা আমাদের প্রথমে ধাক্কা মেরে ফেলে দেয়। তারপর আমাদের জামাকাপড় ছিঁড়ে শ্লীলতাহানি করে।’ ততক্ষণে ঘটনাস্থলে ভিড় জমে গিয়েছিল। কিন্তু হামলাকারীদের হাতে আগ্নেয়াস্ত্র থাকায় কেউই এগতে সাহস করেনি। 

    রামস্বরূপের ভাই রামকুমার জানান, প্রায় এক ঘণ্টা ধরে অত্যাচার চালায় অন্তত ২০ জন দুষ্কৃতী। রক্তাক্ত অবস্থায় প্রায় এক ঘণ্টা ধরে ঘটনাস্থলেই পড়ে ছিলেন রামস্বরূপ। গ্রামবাসীরা যাতে তাঁকে হাসপাতালে নিয়ে যেতে না পারেন, তার জন্য হামলাকারীরা অস্ত্র নিয়ে দেহ পাহারা দিচ্ছিল। পরে রামস্বরূপকে জেলা হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। সেখানে চিকিৎসা চলাকালীন তাঁর মৃত্যু হয়। রবিবার রাতে মহেন্দ্র নাগর, জিতেন্দ্র নাগর সহ ১৪ জনের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করে পুলিশ।

    গোটা ঘটনায় বিজেপিকে নিশানা করেছে হাত শিবির। বামোরি বিধানসভার কংগ্রেস বিধায়ক ঋষি আগরওয়াল এই ঘটনাকে রাজ্যের আইনশৃঙ্খলার চরম অবক্ষয় বলে মন্তব্য করেছেন। দোষীদের দ্রুত গ্রেফতারির দাবিও তুলেছেন তিনি। চাপের মুখে অস্বস্তি এড়াতে মুখ খুলেছেন গুনা জেলার বিজেপি সভাপতি ধর্মেন্দ্র শিকারওয়ার। তিনি বলেন, ‘মহেন্দ্রকে দল থেকে বের করে দেওয়ার জন্য উপরমহলে জানিয়েছি। কেউই আইনের ঊর্ধ্বে নন।’
  • Link to this news (বর্তমান)