১০০ দিনের কাজে সুপ্রিম ধাক্কা, মুখ থুবড়ে পড়ল মোদি সরকার
বর্তমান | ২৮ অক্টোবর ২০২৫
নিজস্ব প্রতিনিধি, নয়াদিল্লি: চেষ্টা করেও পশ্চিমবঙ্গে ১০০ দিনের কাজ আটকে রাখতে পারল না মোদি সরকার। সোমবার মাত্র ৩০ সেকেন্ডে সুপ্রিম কোর্টে মুখ থুবড়ে পড়ল কেন্দ্র। ১ আগস্টের মধ্যে বাংলায় ১০০ দিনের কাজ শুরু করতে হবে—১৮ জুন কলকাতা হাইকোর্টের দেওয়া এই রায়কে চ্যালেঞ্জ করে শীর্ষ আদালতের দ্বারস্থ হয়েছিল নরেন্দ্র মোদির সরকার। সেই আবেদন বিচারপতি বিক্রম নাথ এবং বিচারপতি সন্দীপ মেহতার বেঞ্চ এক কথায় খারিজ করে দিল। এবার শুধু বাকি থাকল রাজ্যের প্রাপ্য মেটানোর প্রসঙ্গ।
হাইকোর্টের নির্দেশ ছিল, ‘মহাত্মা গান্ধী ন্যাশনাল রুরাল এমপ্লয়মেন্ট গ্যারান্টি আইনে’ দুর্নীতির তদন্ত জারি রাখতে পারে কেন্দ্র। ১০০ দিনের কাজ চালু করতে হবে। সাধারণ মানুষকে বঞ্চিত রাখা যাবে না। মোদি সরকার সেই নির্দেশ পালন তো করেইনি, উলটে গত ৩১ জুলাই শীর্ষ আদালতে মামলা করে বিষয়টিকে আইনি জটে জিইয়ে রাখতে মরিয়া ছিল। উদ্দেশ্য ছিল একটাই, বঞ্চনা। সেই মতো ২২ সেপ্টেম্বর এবং ১৩ অক্টোবর মামলার শুনানি পিছিয়ে দেওয়ার আবেদন করেছিল কেন্দ্র। সোমবারও (২৭ অক্টোবর) ‘কৌশলে’ সেই চেষ্টা চলে। কেন্দ্রের পক্ষে জানানো হয়, সলিসিটর জেনারেল তুষার মেহতা উপস্থিত নেই। অন্য এজলাসে ব্যস্ত। তাই মামলাটি পরে শুনলে ভালো হয়। সেই মতো ‘পাস ওভার’ দেয় বিচারপতির বেঞ্চ।
কিছুক্ষণ পর শুনানি শুরু, আর প্রায় সঙ্গে সঙ্গেই শেষ। সলিসিটর জেনারেলকে বেঞ্চ জানায়, ‘আপনারা মামলা তুলে নেবেন, নাকি খারিজ করব?’ তুষার মেহতা কিছু বলার আগেই আদালত মামলাটি খারিজ করে দেয়। ফলে এবার যত দ্রুত সম্ভব বাংলায় ১০০ দিনের কাজ ফের শুরু করতে বাধ্য কেন্দ্র। এরপরও যদি কাজ শুরু না হয়, তাহলে কয়েকদিন দেখে কলকাতা হাইকোর্টে কেন্দ্রের বিরুদ্ধে আদালত অবমাননার মামলা দায়ের হবে বলে জানিয়েছেন হাইকোর্টে মামলার মূল আবেদনকারী ‘পশ্চিমবঙ্গ খেতমজুর সমিতি’র আইনজীবী পূর্বায়ন চক্রবর্তী।
আর্থিক দুর্নীতির কারণে রাজ্যে গত তিন বছর ধরে ১০০ দিনের কাজ বন্ধ। মূলত পূর্ব বর্ধমান, হুগলি, মালদহ এবং
দার্জিলিং—এই চার জেলায় আর্থিক দুর্নীতির অভিযোগ ওঠে। কিন্তু তার জন্য গোটা বাংলার গরিব শ্রমিকদের কেন ভুগতে হবে? কেন বন্ধ হবে কাজ? এই সওয়াল খাড়া করে গোড়া থেকেই সরব তৃণমূল। মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় চারবার চিঠি দেন কেন্দ্রকে। সাক্ষাৎ করেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির সঙ্গেও। কিন্তু বঞ্চনা মেটেনি।
এবার কিন্তু গোটা রাজ্যেই কেন্দ্রকে ১০০ দিনের কাজ শুরু করতে হবে। তবে বকেয়া মেটানোর বিষয়ে আলাদা করে কোনও নির্দেশ দেওয়া হয়নি। এই সংক্রান্ত কলকাতা হাইকোর্টে পৃথক মামলা রয়েছে। এদিন ফের কাজ শুরুর কথাই জানিয়ে দিয়েছে সুপ্রিম কোর্ট। আদালতে রাজ্যের হয়ে ছিলেন আইনজীবী কপিল সিবাল, কল্যাণ বন্দ্যোপাধ্যায় এবং গোপাল শঙ্করনারায়ণ।
সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশের পর তৃণমূলের সাধারণ সম্পাদক অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় সোশ্যাল মিডিয়ায় বিজেপিকে তোপ দেগে লিখেছেন, ‘বহিরাগত বাংলা বিরোধী জমিদারদের আরও একবার ব্যাপক হার হল।’ খেতমজুর সমিতির তরফ থেকে বিবৃতিতে বলা হয়েছে, বাংলার প্রতি অন্যায় এবার বন্ধ করতেই হবে। এই জয় শুধু আইনের নয়, শ্রমের। এবং ঐক্যেরও। বাধা যতই আসুক, শ্রমজীবী মানুষ তাদের অধিকার আদায় করেই ছাড়বে। শ্রমিক ঐক্য জিন্দাবাদ।