মহম্মদবাজারে পুলিশি অভিযানে বাজেয়াপ্ত প্রচুর ভেজাল ডিজেল
বর্তমান | ২৮ অক্টোবর ২০২৫
নিজস্ব প্রতিনিধি, সিউড়ি ও সংবাদদাতা, রামপুরহাট: ‘বর্তমান’ এর খবরের জেরে অবশেষ ঘুম ভাঙল পুলিশের। সোমবার মহম্মদবাজারের খয়রাকুড়ি গ্রামে অভিযান চালিয়ে প্রচুর পরিমাণে অবৈধ ডিজেল, দু’টি তেল ট্যাঙ্কার, টুলু পাম্প সহ বেশ কিছু সরঞ্জাম বাজেয়াপ্ত করল পুলিশ। গ্রেফতার করা হয়েছে ভেজাল ডিজেল বিক্রি চক্রের এক সদস্যকে। ধৃতের নাম দিলীপ ঘোষ। তার বাড়ি খয়রাকুড়ি গ্রামে। জেলা পুলিশ সুপার আমনদীপ বলেন, অভিযান চালিয়ে প্রচুর পরিমাণে ডিজেল, ট্যাঙ্কার ও অন্যান্য সরঞ্জাম বাজেয়াপ্ত করা হয়েছে। সেই সঙ্গে এই অবৈধ কারবারে জড়িত একজনকে গ্রেফতার করা হয়েছে।
বহুদিন ধরেই বীরভূম জেলাজুড়ে নকল পেট্রল ও ভেজাল ডিজেলের কারবার চলছে। সূত্রের দাবি, দুর্গাপুরের ইন্ডিয়ান অয়েল ও বিপিসিএল ডিপো থেকে কাটাই ডিজেল ট্যাঙ্কারে ভরে নিয়ে আসা হচ্ছে মহম্মদাবাজারের খয়রাকুড়িতে। একাধিক বারো ও চারচাকার ট্যাঙ্কারের বডিতে হুবহু ‘ইন্ডিয়ান’ অয়েলের লোগো ব্যবহার করে এই কারবার চালিয়ে আসছে ওই গ্রামেরই অসাধু কারবারিরা। যাতে রাস্তায় কারও সন্দেহ না হয়। ওই লোগো দেখে সড়কে টহলদারি পুলিশ মনে করে কোনও পাম্পে আনলোড করার জন্য তেল নিয়ে যাওয়া হচ্ছে। কিন্তু বাস্তবে সেই তেল চলে যাচ্ছে খয়রাকুড়ি গ্রামে। সেখানে কেমিক্যাল মিশিয়ে তেলের পরিমাণ বাড়ানো হচ্ছে। পরে টুলু পাম্প সহযোগে চারচাকা ট্যাঙ্কারে ভরে বিশেষ করে পাথর শিল্পাঞ্চলে সরবরাহ করা হচ্ছে। কোটি কোটি রাজস্ব থেকে বঞ্চিত হচ্ছে সরকার। কিছুদিন আগে এই ইশ্যু নিয়ে পাম্প অর্নাস অ্যাসোসিয়েশনের পক্ষ থেকে জেলাশাসককে ডেপুটেশনও দেওয়া হয়।
স্থানীয়দের দাবি, পুলিশ ও প্রশাসন সব জেনেই অজানা কারণে নীরব থেকেছে। যদিও রবিবার জেলাশাসক বিধান রায় বেআইনি এই কারবার বন্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়ার কথা বলেন। সোমবার ‘বর্তমান’-এ এই সংক্রান্ত খবর প্রকাশিত হয়। এরপরই নড়েচড়ে বসে মহম্মদবাজার থানার পুলিশ। তারা খয়রাকুড়ি গ্রামে অভিযান চালায়। উদ্ধার হয়েছে ১৪ হাজার লিটার অবৈধ ডিজেল। বারো ও চারচাকার দু’টি তেল ট্যাঙ্কার, ৫০টি ড্রাম, টুলু পাম্প, একাধিক পাইপ ও পাঁচটি প্লাস্টিকের বালতি। ঘটনাস্থল থেকে গ্রেফতার করা হয় দিলীপ ঘোষ নামে ওই কারবারিকে। যদিও পুলিশের দাবি, ধৃত একা নয়, একটা চক্র মিলে এই অবৈধ ও ভেজাল তেলের কাররার চালাচ্ছে। তাদের ধরতে তদন্তে নামা হয়েছে।
স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, সপ্তাহে তিনদিন এখানে দুর্গাপুর থেকে তিনটি ট্যাঙ্কার অর্থাৎ ৭২ হাজার লিটার কাটাই ডিজেল নিয়ে আসা হয়। পরে সেই তেল ছোট ট্যাঙ্কারে ভরে জাতীয় সড়ক ধরে পাঁচামি, শালদবাদরা ও রামপুরহাট পাথর শিল্পাঞ্চলে সরবরাহ করা হয়। এমন বহু ট্যাঙ্কার চলছে বীরভূম জেলাজুড়ে। ভেজাল ডিজেল বিক্রি করে আসার পর ধরা পড়ার ভয়ে জাতীয় সড়কের পাশে একটি পেট্রল পাম্পে ট্যাঙ্কারগুলিকে দাঁড় করিয়ে রাখা হয়। যাতে পুলিশ ভাবে পাম্প মালিকের ট্যাঙ্কার। ওই পাম্পের কর্তৃপক্ষ বারবার নিষেধ করা সত্ত্বেও বেপরোয়া মনোভাব দেখিয়ে ট্যাঙ্কার দাঁড় করিয়ে রাখা হয় বলে অভিযোগ। শুধু ভেজাল ডিজেল নয়, ঝাড়খণ্ড থেকে কেরোসিন, কেমিক্যাল ও রঙ মেশানো নকল পেট্রল ঢুকছে জেলায়। রাস্তার ধারে যত্রতত্র সেই পেট্রল বোতলে ভরে বিক্রি করা হচ্ছে।