• যোগীরাজ্যে মৃত শ্রমিকের বাড়িতে জোড়াফুলের দল, পাশে থাকার আশ্বাস তৃণমূলের প্রতিনিধিদের
    বর্তমান | ২৮ অক্টোবর ২০২৫
  • নিজস্ব প্রতিনিধি, সিউড়ি: ভিনরাজ্যে কাজ করতে গিয়ে বীরভূমের পরিযায়ী শ্রমিক পথিক হেমব্রমের(৩২) রহস্যমৃত্যু হয়েছে। সোমবার মৃতের পরিবারের সঙ্গে দেখা করতে এল তৃণমূলের একটি প্রতিনিধি দল। ছয় সদস্যের ওই দলে ছিলেন রাজ্যসভার সাংসদ তথা ওয়েস্টবেঙ্গল মাইগ্রেন্ট ওয়ার্কার্স ওয়েলফেয়ার বোর্ডের চেয়ারম্যান সামিরুল ইসলাম, পশ্চিমবঙ্গ আদিবাসী উন্নয়ন পর্ষদের চেয়ারম্যান তথা ঝাড়গ্রামের নয়াগ্রামের বিধায়ক দুলাল মুর্মু, বীরভূম জেলা তৃণমূলের কোর কমিটির সদস্য রবি মুর্মু প্রমুখ। তাঁরা মৃতের পরিবারের পাশে সবরকমভাবে থাকার প্রতিশ্রুতি দেন। বিজেপি শাসিত রাজ্যের আইনশৃঙ্খলা নিয়ে গর্জে ওঠার পাশাপাশি বিজেপি বাঙালি ও আদিবাসী বিরোধী বলেও আক্রমণ শানান তৃণমূলের প্রতিনিধি দলের সদস্যরা।

    বীরভূমের পাড়ুই থানার অন্তর্গত কসবা অঞ্চলের দামোদরপুর গ্রামের বাসিন্দা পথিকের কীভাবে মৃত্যু হয়েছে, তা নিয়ে রহস্য ঘনীভূত হয়েছে। পরিবারের দাবি, ওই যুবক কাজের সন্ধানে গত মাঘ মাসে চেন্নাইয়ে পাড়ি দেন। সেখানকার একটি চামড়া কারখানায় কাজ করতেন। তবে, বেশি টাকা রোজগারের আশায় তিনি সেখান থেকে বেঙ্গালুরু যান। গত ২১ অক্টোবর ওই যুবক তাঁর বোনকে ফোন করে জানান, বেঙ্গালুরুতে যেখানে তিনি কাজ করছিলেন, সেখানে মাইনে আরও কম। তাই তিনি ফের চেন্নাইয়ের পুরনো কর্মক্ষেত্রেই ফিরে যাচ্ছেন। যুবকের ভাতৃবধূ সাবিত্রী হেমব্রম বলেন, ২২ অক্টোবরও আমার ননদের সঙ্গে ভাশুরের কথা হয়। দাদা জানিয়েছিলেন যে, চেন্নাইয়ে পৌঁছে গিয়েছেন। আমাদের প্রশ্ন, চেন্নাইয়ে কাজ করলে উত্তরপ্রদেশের কানপুর থেকে কীভাবে দেহ উদ্ধার হয়? এনিয়ে রহস্য রয়েই গিয়েছে। মৃতের স্ত্রী শর্মিলা হেমব্রম বলেন, আমার সঙ্গে ২২ অক্টোবর বিকেলে শেষ কথা হয়। ও প্রচণ্ড আতঙ্কে ছিল। তারপর ফোন বন্ধ হয়ে যায়। শনিবার মধ্যরাতে পুলিশ এসে আমাদের দেহ উদ্ধারের কথা জানায়। শর্মিলাদেবীর দাবি, আমার স্বামীকে নৃশংসভাবে খুন করা হয়েছে। আমরা এর বিচার চাই।

    সোমবার মৃতের পরিবারের সঙ্গে মাটির উঠানে বসেই কথা বলেন সামিরুলরা। সামিরুল ইসলাম বলেন, ওই শ্রমিকের মৃত্যুর খবর পাওয়ামাত্র আমাদের দলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের নির্দেশে আমরা মৃতের পরিবারের খোঁজখবর নিতে এসেছি। দলীয়ভাবেও আমরা ওই পরিবারের পাশে রয়েছি। তাছাড়া, ওই পরিযায়ী শ্রমিকের নাম সরকারি খাতায় নথিভুক্ত রয়েছে। সরকারিভাবে যা যা সাহায্য পাওয়ার, তা মৃতের পরিবার পাবে। তাঁর অভিযোগ, আমরা যে ছবি পেয়েছি, তাতে দেখা যাচ্ছে, দেহটি রেল লাইনের দু’টি ট্র্যাকের মাঝামাঝি অংশে পড়ে রয়েছে। কানের কাছে গুরুতর আঘাতের চিহ্ন রয়েছে। এটা কোনওভাবেই ট্রেন দুর্ঘটনা নয়। ট্রেন দুর্ঘটনা হলে দেহের একাধিক জায়গায় ক্ষতের চিহ্ন থাকবে। বিধায়ক দুলাল মুর্মু বলেন, উত্তরপ্রদেশে দলিত বিরোধী, বাংলা বিরোধী বিজেপির সরকার চলছে। ওই রাজ্যে বাংলায় কথা বললেই বাঙালিদের উপর অত্যাচার করা হয়। সেই ঘটনার বহু প্রমাণ রয়েছে। আমাদের সন্দেহ, কেবল বাঙালি এবং আদিবাসী বলেই ওই যুবককে নৃশংসভাবে খুন করা হয়েছে। আমরা এই ঘটনার পূর্ণাঙ্গ তদন্তের দাবি জানাচ্ছি। রবি মুর্মু বলেন, বিজেপি শাসিত রাজ্যে দলিতরা এইভাবেই অত্যাচারের শিকার হচ্ছেন। এই বিজেপি-ই আবার বাংলা দখলের স্বপ্ন দেখছে। মানুষ এদের যোগ্য জবাব দেবে।

    প্রশাসন সূত্রের খবর, উত্তরপ্রদেশ থেকে দেহ আনতে ইতিমধ্যেই গ্রামের চারজনকে পাঠানো হয়েছে। আজ, মঙ্গলবার ওই শ্রমিকের মৃতদেহ গ্রামে আসার কথা।
  • Link to this news (বর্তমান)