• বেহাত হওয়া বনভূমি উদ্ধারে উদ্যোগী ঝাড়গ্রাম বনবিভাগ
    বর্তমান | ২৮ অক্টোবর ২০২৫
  • নিজস্ব প্রতিনিধি, ঝাড়গ্রাম: ঝাড়গ্রামের সবুজ ভূমি লুট করে নিচ্ছে জমি মাফিয়ারা। জঙ্গল দখল করে একের পর এক হোটেলে, রিসর্ট, লজ তৈরি হচ্ছে। তবে এবার ঝাড়গ্রাম বনবিভাগ দীর্ঘদিন ধরে চলা এই বেআইনি কারবারে রাশ টানতে চলেছে। ঝাড়গ্রাম ব্লকের গড় শালবনী এলাকায় বেআইনিভাবে গড়ে ওঠা এক রিসর্টের মালিককে নোটিশ ধরানো হয়েছে। জঙ্গল ও হাতির করিডর রক্ষায় একাধিক পদক্ষেপ করা হয়েছে।

    ঝাড়গ্রাম জেলার ডিএফও উমর ইমাম বলেন, শালবনী গ্ৰাম পঞ্চায়েতের গড় শালবনী এলাকায় জঙ্গল দখল করে বেআইনি ভাবে একটি রিসর্ট নির্মাণ করা হয়েছিল। সদ্য কংক্রিটের সীমানা দেয়ালও তৈরির কাজ চলছিল। এদিন বনবিভাগের তরফে নির্মাণরত রিসর্টের গায়ে নোটিশ সাঁটিয়ে দেওয়া হয়েছে। জঙ্গলের জমি দখল করে যাঁরা রিসর্ট ও হোটেল তৈরি করেছেন, তাঁদের ধারাবাহিকভাবে নোটিশ দেওয়া হচ্ছে। জঙ্গলের বেহাত জমি পুনরুদ্ধারে আমরা ‘জিরো টলারেন্স’ নীতি নিচ্ছি।

    ঝাড়গ্রাম বনবিভাগের  ৬৮ হাজার হেক্টর জঙ্গলভূমী রয়েছে। দশ হাজার হেক্টর বনভূমির সার্ভের কাজ সম্পন্ন হয়েছে। তাতেই জেলার বনবিভাগের বিপুল পরিমাণ জমি বেদখল হওয়ার তথ্য সামনে এসেছে। দীর্ঘ কয়েক দশক ধরে বনভূমির জমি ধীরে ধীরে বেদখল হয়েছে। জেলায় রাজনৈতিক শান্তি ফেরার পর পর্যটকের সংখ্যা বেড়েছে। যার জেরে হোটেল, রিসর্ট, লজ ও হোম স্টের সংখ্যাও বাড়ছে। স্থানীয় জমি মাফিয়ারা কৌশলে বনভূমির জমি দখল নিয়েছে। 

    একশ্রেণির ব্যবসায়ী সবজেনেও বনভূমির সেই  জমির উপর বিলাসবহুল হোটেল, রিসর্ট নির্মাণ করেছেন। বনবিভাগের তরফে এবার দখল হওয়া জমি পুনরুদ্ধারের কাজ শুরু হয়েছে। ভীত হোটেল, রিসর্ট মালিকরা তড়িঘড়ি কংক্রিটের সীমানা প্রাচীর নির্মাণের কাজ শুরু করেছেন। শালবনী গ্ৰাম পঞ্চায়েতের গড় শালবনী এলাকায় একটি রিসর্টে কয়েকদিন ধরে সীমানা পাঁচিল দেওয়া হচ্ছিল। ঝাড়গ্রাম বনবিভাগের তরফে এদিন পাঁচিলের গায়ে নোটিশ সেঁটে দেওয়া হয়। নোটিশে উল্লেখ রয়েছে, জঙ্গলের জমি দখল করা হয়েছে। সাত দিনের মধ্যে জমি খালি করে দিতে হবে। নির্দেশ না মানলে বন বিভাগের তরফে আইনি পদক্ষেপ করা হবে। শালবনীর জিতুশোলে কয়েকদিন আগে বড় একটি শিল্প সংস্থা বনভূমির জমি দখল করে কংক্রিটের দেওয়াল তৈরি করছিল। বনবিভাগ তড়িঘড়ি সেই সংস্থা নোটিশ ধরায়। জমি দখল বন্ধ হয়ে যায়। পুজোর আগে বিনপুর-২ ব্লকে ভুলভেদার জঙ্গলে একাধিক নির্মীয়মাণ হোটল ও রিসর্ট মালিকদের নোটিশ ধরানো হয়েছে। জঙ্গলের জমি দখলে স্থানীয় জমি মাফিয়াদের সঙ্গে প্রশাসনের নিচুতলার কর্মীদের যোগ থাকার অভিযোগও উঠছে। বনবিভাগের তরফে মানিকপাড়া মৌজা-২ নম্বর শালজঙ্গল ভূমিদপ্তরের ভুলে অন্যের নামে চলে গিয়েছিল। বিষয়টি জানার সঙ্গে সঙ্গে বনবিভাগ জঙ্গলে বোর্ড টাঙিয়ে সেই জমি নিজেদের নিয়ন্ত্রণ নেয়। বনবিভাগের এক আধিকারিক বলেন, বনবিভাগের যেসব জমি দীর্ঘদিন আগে বেহাত হয়ে গিয়েছে সেগুলো উদ্ধার করা প্রায় অসম্ভব। তবে নতুন করে জমি যাতে বেহাত না হয়, তার জন্য উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। জঙ্গল লাগোয়া যেসব জায়গায় নতুন বসতি গড়ে উঠেছে সেদিকে নজর দেওয়া হয়েছে। হাতির করিডরে কোনও নির্মাণ যাতে না হয় তাও দেখা হচ্ছে।
  • Link to this news (বর্তমান)