অভিজিৎ চৌধুরী, চুঁচুড়া: ইঙ্গিত দিয়েছিল পঞ্চমীর রাত। সেই আভাসই বাস্তবে পরিণত করল ষষ্ঠীর রাত। মানুষের ভিড় জনসমুদ্র হয়ে আছড়ে পড়ল চন্দননগর থেকে ভদ্রেশ্বর। অলিগলি, রাজপথ ভিড়ে ঠাসা। দুর্যোগের আশঙ্কা এবং সোমবার ছুটির দিন হওয়ায় ষষ্ঠীতেই রেকর্ড ভিড় হল হুগলির জগদ্ধাত্রী নগরীতে। বিকেল গড়াতেই চন্দননগর, মানকুণ্ডু, ভদ্রেশ্বরের রাস্তা ঢেকে যায় কালো মাথায়। দুই শহরেরই দখল চলে গিয়েছিল উৎসবমুখর জনতার হাতে। চন্দননগরের মোহময় আলোয় সাজানো রাস্তাজুড়ে জলস্রোতের মতো আন্দোলিত হয়েছে ভিড়। রাত গড়িয়ে ভোর হয়েছে কিন্তু ফিকে হয়নি জমায়েতের ছবি। ভদ্রেশ্বর, মানকুণ্ডু, চন্দননগর স্টেশনে তিল ধারণের জায়গা ছিল না। জেলা তো বটেই, জেলার বাইরে থেকেও উৎসাহী জনতার বিপুল ঢল নেমেছিল চন্দননগরে। উৎসাহী তরুণ প্রজন্মের উৎসাহের সঙ্গে পাল্লা দিয়েছেন মধ্যবয়সি ও প্রবীণরা। রাত যত গড়িয়েছে বাঁধ ভাঙা ভিড়ের দাপট বেড়েছে পাল্লা দিয়ে।
পঞ্চমী ছিল রবিবার। ফলে ছুটির আমেজেই ভিড়ের দাপট দেখা গিয়েছিল। কিন্তু সমস্যা করেছিল চন্দননগরের পুজো প্রস্তুতি সম্পূর্ণ না হওয়া। এরপর সোমবারের পর মঙ্গলবারও ছুটির দিন। সঙ্গে দুর্যোগের পূর্বাভাসও আছে। ফলে ষষ্ঠীতেই সুসজ্জিত মণ্ডপ আর আলোর রোশনাই অকাতরে গায়ে মেখে নিতে বিন্দুমাত্র দ্বিধা করেনি নাগরিক মহল্লা। বিপুল জনজোয়ার সর্বশক্তি দিয়ে নেমে পড়েছিল জগদ্ধাত্রী পুজো উদযাপনে। কাতারে কাতারে মানুষ এদিন হাওড়া, কল্যাণী থেকে এসেছিলেন। ভিড়ের মধ্যে দেখা হয় কল্যাণীর অজয় সরকারের সঙ্গে। স্ত্রীকে নিয়ে এসেছিলেন। বলেন, পঞ্চমীতেই পুজো দেখা সেরে ফেলতে চেয়েছিলাম। কিন্তু অনেক জায়গাতেই মণ্ডপসজ্জা শেষ হয়নি। এদিকে আবার দুর্যোগের আশঙ্কাও আছে। তাই ষষ্ঠীর দুপুরেই চন্দননগরে চলে এসেছি। সপ্তমীর ভোরে ফিরে যাব। গোটা চন্দননগর স্টেশন রোড তখন ভিড়ে থইথই করছে। কাছেই দু’টি বিগ বাজেটের পুজো হয়। শিশুকন্যার কান্না থামাতে ব্যস্ত ছিলেন মাম্পি দাস। যাদবপুর থেকে পুজো দেখতে এসেছেন। বললেন, এমন দমবন্ধ ভিড় হবে ভাবিনি। ভিড় দেখে আমার মেয়ে ভয় পেয়েছে। তাহলে কি পুজো দেখা বাতিল? হেসে গৃহবধূ বললেন, এসেছি যখন সবগুলো পুজো দেখে তবে যাব। চন্দননগরের বাসিন্দা জ্যোতির্ময় গুহ বলেন, বৃদ্ধা মায়ের আবদারে ষষ্ঠীতেই পুজো দেখতে বেরিয়েছিলাম। কিন্তু ষষ্ঠীর সন্ধ্যায় এমন জনসমুদ্র বহু বছর দেখিনি। বাধ্য হয়ে ফিরে যাচ্ছি। বিপুল ভিড়ের দাপটে হাসি চওড়া পুজো উদ্যোক্তাদের। কেন্দ্রীয় জগদ্ধাত্রী পুজো কমিটির সাধারণ সম্পাদক শুভজিৎ সাউ বলেন, চন্দননগরের পুজোর জনপ্রিয়তা এখন বিপুল। অন্যদিকে দুর্যোগের আভাস এবং দু’দিনের সরকারি ছুটি থাকায় মানুষ আনন্দ করতে ষষ্ঠীতেই বিপুল সংখ্যায় হাজির। এদিন ভিড় আমাদের কাছে প্রত্যাশিত ছিল। তবে প্রত্যাশার থেকে বেশি ভিড় হয়েছে।
শুধু থিম পুজোই নয় উৎসাহী দর্শকদের ভিড় জমেছে সাবেক পুজো মণ্ডপেও। তেঁতুলতলার সাবেক পুজো আয়োজন থেকে চাউলপট্টির আদি মায়ের মণ্ডপের ভিড়ও চোখ কপালে তুলে দিয়েছে। তেমনই জলস্রোতের মতো ভিড় যাওয়া আসা করেছে হেলাপুকুরের হীরকসজ্জায় সেজে ওঠা জগদ্ধাত্রী বা উত্তরাঞ্চলের রাজস্থানী রাজমহল দেখতে। শীত এখনও হুগলিতে আসেনি। উল্টে কিছুটা গরমের দাপট। সেসবকে তুড়ি দিয়ে ভোররাত পর্যন্ত চন্দননগর, ভদ্রেশ্বরে জনগর্জন।