• ‘অভিভাবকহীন’ পুরসভায় পরিষেবা পাব তো? ভাইস চেয়ারপার্সনের পর মুখ্য প্রশাসকেরও ইস্তফা, সিঁদুরে মেঘ দেখছে হাওড়া
    বর্তমান | ২৮ অক্টোবর ২০২৫
  • নিজস্ব প্রতিনিধি, হাওড়া: কিছুদিন আগে হাওড়া পুরসভার প্রশাসক মণ্ডলীর ভাইস চেয়ারপার্সনের পদ থেকে ইস্তফা দেন সৈকত চৌধুরী। তার এক সপ্তাহের মধ্যেই রবিবার রাতে পুরসভার মুখ্য প্রশাসক ডাঃ সুজয় চক্রবর্তীও পদত্যাগপত্র পাঠিয়ে দিয়েছেন পুরদপ্তরে। এই অবস্থায় আগামী দিনে পুর পরিষেবার হাল কী হবে, তা নিয়ে দুশ্চিম্তা ও ধন্দে পড়েছেন নাগরিকরা। কারণ, আগামীতে পুর পরিষেবা কীভাবে পরিচালিত হবে, তার কোনও স্পষ্ট ইঙ্গিত এখনও মেলেনি। যদিও কমিশনারের নেতৃত্বে পরিষেবা স্বাভাবিক রয়েছে বলেই দাবি পুরসভার। মুখ্য প্রশাসকের ইস্তফার পর হাওড়াবাসীর মধ্যে মিশ্র প্রতিক্রিয়া লক্ষ্য করা গিয়েছে। রাজনৈতিক মহলেও চলছে নানা জল্পনা। 

    গত প্রায় সাড়ে চার বছর ধরে হাওড়া পুরসভার প্রশাসক মণ্ডলীতে মুখ্য প্রশাসকের দায়িত্বে ছিলেন ডাঃ সুজয় চক্রবর্তী। বছর দেড়েক আগেও এই পদ থেকে ইস্তফা দেওয়ার ইচ্ছে প্রকাশ করেছিলেন তিনি। সেবার তাঁর ইস্তফা গ্রহণ করেনি পুর ও নগরোন্নয়ন দপ্তর। রবিবার সরাসরি পুরমন্ত্রীকে চিঠি লিখে পদত্যাগের কথা জানিয়ে দিয়েছেন সুজয়বাবু। ব্যক্তিগত কারণেই এই সিদ্ধান্ত বলে জানিয়েছেন তিনি। সুজয়বাবু বলেন, ‘দলের নির্দেশ বা কোনও চাপের বিষয় নেই। সম্পূর্ণ ব্যক্তিগত কারণে মুখ্য প্রশাসকের পদ থেকে অব্যাহতি নিচ্ছি।’ সেই সঙ্গে তাঁর দাবি, গত সাড়ে চার বছরে ওলাবিবিতলায় ভুগর্ভস্থ জলাধার, সালকিয়া ওয়াটার ট্রিটমেন্ট প্লান্টের মত বড় প্রজেক্টে কাজ হয়েছে। পুরসভার সীমিত অর্থভাণ্ডার ও লোকবল সত্ত্বেও নিকাশি পরিকাঠামো সংস্কারের ক্ষেত্রে বহু কাজ হয়েছে। 

    এদিকে, কয়েকদিন আগেই প্রশাসক মণ্ডলীর ভাইস চেয়ারপার্সনের পদ থেকে ইস্তফা দিয়েছেন সৈকত চৌধুরী। তাঁর দাবি, সম্প্রতি দলের তরফে দক্ষিণ হাওড়া বিধানসভায় তাঁকে গুরুত্বপূর্ণ সাংগঠনিক পদ দেওয়া হয়েছে বলেই প্রশাসনিক পদ থেকে অব্যাহতি নিয়েছেন তিনি। হাওড়া পুরসভা পরিচালনা নিয়ে শীর্ষ মহল থেকে নতুন কোনও নির্দেশ না আসা পর্যন্ত পুর-কমিশনারের নেতৃত্বেই পুরসভার স্বাভাবিক কাজকর্ম চলবে বলে জানা গিয়েছে।

    সুজয়বাবুর ইস্তফা প্রসঙ্গে হাওড়া পুরসভার জঞ্জাল সাফাই বিভাগের বিশেষ দায়িত্বপ্রাপ্ত তথা উত্তর হাওড়ার বিধায়ক গৌতম চৌধুরী বলেন, ‘ওঁর এই সিদ্ধান্ত বিন্দুমাত্র আন্দাজ করতে পারিনি। রবিবার বিষয়টি জানার পরেই আমি ওঁকে ফোন করেছিলাম। ব্যক্তিগত কারণেই তিনি ইস্তফা দিচ্ছেন।’ মধ্য হাওড়ার বিধায়ক তথা রাজ্যের মন্ত্রী অরূপ রায় বলেন, ‘ইস্তফার বিষয়টি সম্পূর্ণভাবে ওঁর ব্যক্তিগত সিদ্ধান্ত। পুর পরিষেবার ক্ষেত্রে আগামী দিনে কী হবে, দল সেই সিদ্ধান্ত নেবে।’ বাসিন্দাদের অনেকেই বলেন, ‘নির্বাচন না হলেও এতদিন প্রশাসক মণ্ডলী নাগরিক পরিষেবা অব্যাহত রাখছিল। আবারও অভিভাবকহীন হয়ে পড়ল পুরসভা। মুখ্য প্রশাসকের কাছে তবু অভিযোগ নিয়ে যাওয়া যেত। এখন কী হবে!’ বাসিন্দাদের আরেক অংশের বক্তব্য, ২০১৮ সালের ডিসেম্বরে পুরসভার বোর্ডের মেয়াদ শেষ হওয়ার পর আর ভোটই হয়নি। জোড়াতাপ্পি দিয়ে পরিষেবা চলছে। শহরের সমস্যা কয়েকগুণ বেড়েছে। এবার নির্বাচন অত্যন্ত প্রয়োজন।’
  • Link to this news (বর্তমান)