নিজস্ব প্রতিনিধি, নয়াদিল্লি: ২০০২ থেকে ২০০৪ সাল। এই সময়কালে যে রাজ্যে এসআইআর হয়েছে, সেই অনুযায়ী ভোটার তালিকায় নিজের অথবা বাবা-মায়ের নাম থাকলেই হবে। তাহলে আর নাগরিকত্বের প্রমাণপত্র দেখাতে হবে না। বাংলার ক্ষেত্রে যেমন ২০০২ সালের তালিকা প্রযোজ্য। কিন্তু যদি সেই ইলেক্টোরাল রোলে নাম না থাকে? তখন দেখা হবে, ২০০৩ সালের খসড়া তালিকায় নাম আছে কি না। আর তারপরও জানতে চাওয়া হবে, ওই সময় সংশ্লিষ্ট ব্যক্তি কোথায় ছিলেন? এবং সেই ঠিকানাসহ অন্য প্রমাণপত্র দেখাতে হবে ভোটারকে। মুখ্য নির্বাচন কমিশনার জ্ঞানেশ কুমার সোমবার বাংলা সহ ১২ রাজ্য ও কেন্দ্রশাসিত অঞ্চলে স্পেশাল ইন্টেনসিভ রিভিশনের (এসআইআর) ঘোষণা করার পর এই শর্তই প্রধান হয়ে দাঁড়াল। সোমবার রাত ১২টা থেকেই বাংলা সহ এই রাজ্যগুলিতে ভোটার তালিকা ‘ফ্রিজ’ হয়ে গেল। অর্থাৎ ভোটার তালিকায় আপাতত কোনও সংযোজন-বিয়োজন হবে না। আজ, মঙ্গলবার থেকে প্রস্তুতিপর্ব। ৯ ডিসেম্বর প্রকাশিত হবে খসড়া সংশোধিত ভোটার তালিকা। সেই তালিকা সংক্রান্ত অভিযোগ, নালিশ, আবেদন, শুনানি ও নথিপত্র জমা দেওয়ার পর্ব সমাপ্ত হলে ৭ ফেব্রুয়ারি চূড়ান্ত ভোটার তালিকা প্রকাশ হবে।
৪ নভেম্বর শুরু হয়ে যাচ্ছে বাড়ি বাড়ি ভোটারদের কাছে যাওয়ার কাজ। বুথ লেভেল অফিসাররা (বিএলও) প্রতিটি পরিবারের কাছে গিয়ে ইনিউমারেশন ফর্ম দেবেন। সেই আবেদনপত্র পূরণ করে স্বাক্ষরিত ফর্ম দিতে হবে বিএলওর কাছে। ভোটার তালিকার অনলাইন লিংক খুলে যদি দেখা যায়, সেখানে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তির নাম রয়েছে এবং সব তথ্যই ২০২৫ সালের মতো, তাহলে তৎক্ষণাৎ অনুমোদন দিয়ে দেবেন বিএলও। সমস্যা তখনই, যদি ২০০২ সালের তালিকায় নিজের ও বাবা-মা—কারও নামই না পাওয়া যায়। তখন দেখাতে হবে নাগরিকত্ব সংক্রান্ত প্রমাণপত্র। এখানেই শেষ নয়, এমন নথিও দেখাতে হবে, যেখানে ভারতেই জন্মের প্রমাণ মেলে। এসবও যদি না থাকে? তাহলে বাড়িতে নোটিশ আসবে। আধার কার্ড ছাড়াও যে কোনও একটি সহায়ক নথি পেশ করতে হবে। জ্ঞানেশ কুমার স্পষ্ট জানিয়েছেন, আধার নাগরিত্বের প্রমাণ নয়। নিছক পরিচয়পত্র। নির্বাচন কমিশনের বক্তব্য, যে ১১ রকম নথি তথা প্রমাণপত্রের তালিকা দেওয়া হচ্ছে, সেটা এতটাই সম্প্রসারিত যে, এই নথিগুলির অন্তত একটাও কারও কাছে থাকবে না—এটা অসম্ভব! কারণ স্থানীয় প্রশাসনের ইশ্যু করা সার্টিফিকেটও গ্রহণযোগ্য। খসড়া তালিকা প্রকাশের পর যদি ভোটার তালিকায় নাম না থাকে, তাহলে জেলাশাসকের কাছে আবেদন করতে হবে। সেখানেও সন্তুষ্ট না হলে দ্বিতীয় আবেদন রাজ্যের মুখ্য নির্বাচনী অফিসারের কাছে। যাদের নাম একাধিক স্থান অথবা রাজ্যের ভোটার তালিকায় রয়েছে? জ্ঞানেশ কুমারের সতর্কবার্তা—তারা আইনত অপরাধী। অতএব যদি কেউ দুই ঠিকানায় দুই ইনিউমারেশন ফর্ম পেয়ে থাকেন, তিনি যেন যে কোনও একটি ফর্ম পূরণ করেন এবং বিএলওকে জানিয়ে দেন।
তৃণমূলের পক্ষ থেকে এসআইআরের বিরোধিতা প্রসঙ্গে মুখ্য নির্বাচন কমিশনার বলেছেন, রাজ্য সরকার একটি সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠান। তারা সংবিধানের নির্দেশিত দায়িত্ব পালনে বাধ্য। সেটা তারা করবেও। আমাদের কোনও সন্দেহ নেই। এসআইআরের সহজবোধ্য বিশ্লেষণ হল, ১৯৮৭ সালের আগে যাদের জন্ম হয়েছে, তারা ভারতীয়। এবং ২০০২ সালের ভোটার তালিকায় যাদের নিজের ও পিতামাতার নাম রয়েছে, তারাও ভারতীয়।
অতএব প্রধান চিন্তা, ২০০২-০৪ সালের মধ্যের ভোটার তালিকায় নিজের কিংবা বাবা-মায়ের নাম আছে তো? না হলে শুনানি। প্রমাণ দিন—তখন কোথায় ছিলেন! জেনে রাখুন
১) কেন্দ্র, রাজ্য বা রাষ্ট্রায়ত্ত সংস্থার স্থায়ী কর্মী অথবা পেনশনভোগীর পরিচয়পত্র বা পেনশন পেমেন্ট অর্ডার
২) ১৯৮৭ সালের ১ জুলাইয়ের আগে সরকার, স্থানীয় প্রশাসন, ব্যাঙ্ক, পোস্ট অফিস, এলআইসি অথবা রাষ্ট্রায়ত্ত সংস্থার দেওয়া যে কোনও নথি, পরিচয়পত্র অথবা সার্টিফিকেট
৩) জন্ম শংসাপত্র
৪) পাসপোর্ট
৫) স্বীকৃত বোর্ড বা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে প্রাপ্ত মাধ্যমিক, উচ্চ শিক্ষার শংসাপত্র
৬) রাজ্য সরকারের উপযুক্ত কর্তৃপক্ষের দেওয়া স্থায়ী বাসস্থানের শংসাপত্র (পার্মানেন্ট রেসিডেন্ট সার্টিফিকেট)
৭) ফরেস্ট রাইট সার্টিফিকেট
৮) এসসি, এসটি, ওবিসি বা যে কোনও জাতিগত শংসাপত্র
৯) ন্যাশনাল রেজিস্ট্রার অব সিটিজেনস (এনআরসি) বা জাতীয় নাগরিকপঞ্জি (যদি থাকে)
১০) রাজ্য বা স্থানীয় প্রশাসনের দেওয়া পারিবারিক রেজিস্ট্রার
১১) জমি অথবা বাড়ির সরকারি দলিল
১২) আধার (তবে নির্বাচন কমিশনের ৯ সেপ্টেম্বরের নির্দেশিকা অনুযায়ী, এর সঙ্গে উপরোক্ত ১১টি নথির যে কোনও একটি দিতে হবে)
কাদের কোনও নথি দিতে হবে না?
২০০২ সালের ভোটার তালিকায় যাঁদের নাম রয়েছে, তাঁদের আর কোনও নথি দিতে হবে। কারও যদি বাবা-মায়ের নাম ওই তালিকায় থাকে, তা হলেও আর কোনও নথি দিতে হবে না। www.eci.gov.in সাইটে গিয়ে এই ‘ম্যাচিং’ করানো যাবে। যেখানে ২০০২ সালের ভোটার তালিকা পাওয়া যায়নি, সেখানে ২০০৩ সালের ভোটার তালিকাকে ধরে হবে এসআইআর