১২ অক্টোবর থেকে শুরু হওয়া পালস পোলিও কর্মসূচিতে নজির গড়ল উত্তর ২৪ পরগনা জেলা স্বাস্থ্যবিভাগ। একাধিক কারণে এনকেডিএ (নিউটাউন কলকাতা ডেভেলপমেন্ট অথরিটি) ও বারাকপুর ক্যান্টনমেন্ট এলাকায় পোলিও টিকাদান কর্মসূচি সফল করা যাচ্ছিল না। এর একটা কারণ উপযুক্ত পরিকাঠামো ও সচেতনতার অভাব। আরেকটি কারণ হল সিংহভাগ বাসিন্দা আর্থিকভাবে সম্পন্ন হওয়ায় বেসরকারি পরিষেবার উপর তাঁরা বেশি ভরসা করে এসেছেন। তাই কোনও পুরসভা বা ব্লক প্রশাসনের আওতায় না থাকা এই দুই এলাকায় পোলিও টিকাকরণের সরকারি কর্মসূচি সফল করা একপ্রকার চ্যালেঞ্জ ছিল জেলা স্বাস্থ্যবিভাগের কাছে। দেখা যাচ্ছে, এবার সেই চ্যালেঞ্জ সসম্মানে উত্তীর্ণ হয়েছে তারা।
এনকেডিএ ও বারাকপুর ক্যান্টনমেন্ট এলাকা সাধারণত বিভিন্ন পেশার প্রতিষ্ঠিত মানুষজনের বসবাস। ইতিপূর্বে প্রতিবার এই দুই এলাকায় সরকারি স্বাস্থ্য কর্মসূচির প্রতি অনাস্থা লক্ষ্য করা যেত। তাই এবার এলাকার প্রত্যেক বাড়িতে গিয়ে সমীক্ষা ও সচেতনতা প্রচার চালানো হয়। নামানো হয় প্রায় ২০০জন স্বাস্থ্যকর্মীকে। পালস পোলিও পাওয়ার উপযুক্ত শিশুদের শনাক্ত করা হয়। পাশের ব্লক ও পুরসভা এলাকা থেকে স্বাস্থ্যকর্মীদের নিয়ে যাওয়া হয়। বিশেষ গুরুত্ব দেওয়া হয় বাড়ির পরিচারিকা ও তাঁদের সন্তানদের ক্ষেত্রে। কারণ, অনেক পরিচারিকাই দূর থেকে কাজে আসেন। দিনের অধিকাংশ সময় ঘরের বাইরে থাকায় তাঁদের শিশুকে পোলিও কর্মসূচির আওতায় আনা সমস্যার। তাঁদের ক্ষেত্রে তাই বিশেষ গুরুত্ব দেওয়া হয়েছিল। গোটা বিষয়টি তদারকি করেন উত্তর ২৪ পরগনা জেলা স্বাস্থ্যবিভাগের আধিকারিক ডাঃ সঙ্গীতা বন্দ্যোপাধ্যায় ও কেয়া বিশ্বাস। স্বাস্থ্যবিভাগ সূত্রে জানা গিয়েছে, এনকেডিএ এলাকায় প্রায় ২৬ হাজার বাড়িতে সার্ভে করা হয়। ফলস্বরূপ ৩,১৫২ শিশুকে পোলিও খাওয়ানো গিয়েছে এবার। গত ফ্রেব্রুয়ারিতে সংখ্যাটা ছিল ১৭০০। অন্যদিকে, বারাকপুর ক্যান্টনমেন্ট এলাকায় ১৭০০ শিশুকে পোলিও খাওয়ানো গিয়েছে। উত্তর ২৪ পরগনার সিএমওএইচ সমুদ্র সেনগুপ্ত বলেন, ‘পোলিও ভাইরাস এমনই, যা নিমেষে এক শরীর থেকে আরেকজনের শরীরে ছড়িয়ে পড়তে পারে। কোনও অঞ্চলে যদি কিছু শিশু টিকা না পায়, ভাইরাস সেখানে আশ্রয় নেয়। পরে তা ছড়িয়ে পড়ে। এই সংক্রমণ-চক্র বন্ধ করার জন্যই গোটা বিশ্বজুড়ে একসঙ্গে পালস পোলিও টিকাকরণ হয়। আমাদের জেলার ক্ষেত্রে এটা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। কারণ বাংলাদেশের সীমান্তবর্তী জেলা। সেখানে এখনও পোলিও সংক্রমণ দেখা যায়।’
তাঁর আরও সংযোজন, ‘এই সাফল্য অবশ্যই স্বাস্থ্যদপ্তরের কর্মীদের, যাঁরা গ্রাসরুটে কাজ করেন। আমাদের কাজের প্রশংসা করেছেন বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার আধিকারিকরাও।’ এনিয়ে উত্তর ২৪ পরগনার জেলাশাসক শরদ কুমার দ্বিবেদী বলেন, ‘এনকেডিএ ও বারাকপুর ক্যান্টনমেন্ট কর্তৃপক্ষের সঙ্গে আমরা বৈঠক করে সবটা ঠিক করেছিলাম। সেই মতো কাজ করেছে স্বাস্থ্যবিভাগ।’ নিজস্ব চিত্র