• পাঁচ বছর, ১৩ রাজ্যের পুলিশ! অবশেষে কেরালায় জালে চোর
    এই সময় | ২৮ অক্টোবর ২০২৫
  • এই সময়: 'ডন কা ইন্তেজার তো ১১ মুলকোঁ কি পুলিশ কর রহি হ্যায়। লেকিন ডন কো পকড়না মুশকিল হি নেহি...' না। মুমকিন হ্যায়।

    ১১টি দেশের পুলিশকে নাকানিচোবানি খাইয়েছিলেন পর্দার 'ডন'। আর ভারতের ১৩টি রাজ্যের পুলিশের কালঘাম ছুটিয়ে দিয়েছিলেন কুরাপতি অজয়! তবে শেষ পর্যন্ত তাঁকে পাকড়াও করা 'মুমকিন' হয়েছে। বছর ৩১-এর অজয়কে ধরতে কতটা মরিয়া ছিল পুলিশ? একে অন্যের সঙ্গে সমন্বয় রেখে, হোয়াটসঅ্যাপ গ্রুপ খুলে দিনরাত এক করে ১৩ রাজ্যের পুলিশের পাক্কা পাঁচ বছর লেগেছে এই লুকোচুরি খেলা শেষ করতে। শনিবার রাতে কেরালার আলুভা থানা এলাকার একটি গেস্ট হাউস থেকে কর্নাটকের এই বাসিন্দাকে বিধাননগর কমিশনারেটের পুলিশ গ্রেপ্তার করে সল্টলেকের একটি মামলায়।

    শুধু দেশজুড়ে কর্মকাণ্ডের জাল ছড়ানোই নয়, অজয়ের 'মোডাস অপারেন্ডি'ও ছিল বেশ ফিল্মি কায়দার। এক শহরে চুরি করে অন্য শহরে গিয়ে লুকিয়ে পড়তেন সম্পূর্ণ অন্য নাম-পরিচয় নিয়ে। তার পরে একটি হোটেলে ঘর বুক করতেন।

    চেক-ইন করার পরে শুরু হতো তাঁর 'অপারেশন'। গেস্টদের খুঁটিয়ে দেখে বেছে নিতেন টার্গেট। সুযোগ তৈরি করে সেই গেস্টের সঙ্গে জমাতেন আলাপ। অজয়ের একটি বড় গুন, তিনি খুব সহজে মানুষের মন জয় করতে পারতেন। সেই ক্ষমতা কাজে লাগিয়ে রাতারাতি টার্গেটের কাছে চলে আসতেন।

    এর পরে অপেক্ষা মওকার। মোক্ষম সুযোগ বুঝে ক্রেডিট/ডেবিট কার্ড ও ফোন নিয়ে চম্পট! তদন্তকারীরা বলছেন, বুদ্ধি করে ফোনটাও হাতিয়ে নিতেন অজয়। কারণ কার্ডে কেনাকাটা করতে গেলে মোবাইলে ওটিপি আসে। সে কারণে ফোন চুরি ছিল আবশ্যিক।

    এ দিকে একসঙ্গে ফোন, কার্ড খুইয়ে প্রতারিত ব্যক্তি যখন দিশাহারা, তখন দ্রুত কেনাকাটা সেরে ফেলতেন অজয়। জিনিসপত্র হাতে এলেই তা বিক্রি করে দিতেন যত তাড়াতাড়ি সম্ভব।

    গল্পে টুইস্ট এখানেই। এ ভাবে জিনিস বিক্রি করে হাতে নগদ এলেই ফোন আর কার্ড ডাক মারফত আসল মালিকের কাছে ফিরিয়ে দিতেন অজয়। তদন্তকারীরা বলছেন, এই ফিরিয়ে দেওয়াটাই অজয়ের 'ট্রেড মার্ক' হয়ে দাঁড়ায়। এ যেন নিজের কাজের প্রতি এক অহঙ্কার জাহির করা।

    গত জুলাইয়ে 'সাই কৃষ্ণা' পরিচয়ে সল্টলেকের একটি গেস্ট হাউসে উঠেছিলেন অজয়। সেখানে ভাব জমান বিহারের বাসিন্দা বিনয় কুমারের সঙ্গে। দু'জনেই ডরমিটরি রুমে থাকতেন। বিনয়ের অভিযোগ, ২৯ জুলাই সকাল সাড়ে ১১টা নাগাদ তিনি বাথরুমে গেলে তাঁর মোবাইল, ওয়ালেট এবং ল্যাপটপ চুরি করে পালান 'সাই কৃষ্ণা'। তদন্তে নেমে বিধাননগর দক্ষিণ থানার পুলিশ জানতে পারে, বিনয়ের ক্রেডিট কার্ড ব্যবহার করে কলকাতার একটি গয়নার দোকান থেকে প্রায় ৫ লক্ষ টাকার সোনার গয়না এবং একটি ইলেকট্রনিক্স জিনিসের দোকান থেকে ছ'টি আইফোন-সহ মোট ৭টি ফোনও কিনেছেন অজয়। একটি অ্যাকাউন্টে ৫০ হাজার টাকা ট্রান্সফারও করা হয়।

    এই সবের পরে কুরিয়ার মারফত ফোন এবং ক্রেডিট কার্ড ফিরে আসে অভিযোগকারীর কাছে। পুলিশের দাবি, কেনাকাটা করা যাবতীয় জিনিস অনলাইনে বিক্রি করে দেন অজয়। বিধাননগরের গোয়েন্দা প্রধান কুলদীপ সোনাওনে বলেন, 'অভিযুক্ত প্রথমে একটা নকল পরিচয়পত্র তৈরি করে সেটা দিয়ে নতুন সিমকার্ড নিতেন। সেই সিমকার্ড ব্যবহার করা হতো নতুন মোবাইল ফোনে। নতুন মোবাইলে নতুন ইমেল আইডি তৈরি করে বিভিন্ন ওয়েবসাইট থেকে গেস্ট হাউস বুক করতেন অভিযুক্ত।'

    অজয় সাধারণত বড় শহরেই কার্যকলাপ চালাতেন। তদন্তে নেমে পুলিশ জানতে পারে, ক্লাস ১২ পাশ করা এই যুবক এথিক্যাল হ্যাকিংয়েও পারদর্শী। পরিচয় ভাঁড়ালেও, পুলিশের কাছে ছিল অজয়ের ছবি। এ ছাড়াও ৫০-৬০টি আইএমইআই নম্বর লাগাতার ট্র্যাক করেছেন গোয়েন্দারা। তাতে দেখা যায়, এক প্রতারিতের নম্বর ব্যবহার করে আরও একজনকে প্রতারণা করারও নজির রয়েছে অজয়ের। শেষে এই ফোন ট্র্যাকিংই কাজে আসে। কেরালায় ধরা পড়ে যান অজয়।

  • Link to this news (এই সময়)