একদা বঙ্গ বিজেপির অভিভাবক! সেই কৈলাশ বলছেন, ‘অস্ট্রেলিয়ান মহিলা ক্রিকেটারদের উচিত শিক্ষা হয়েছে’...
আজকাল | ২৮ অক্টোবর ২০২৫
আজকাল ওয়েবডেস্ক: ২০২৫ সালের মহিলাদের একদিনের বিশ্বকাপের আয়োজক ভারত। এরই মধ্যে মধ্যপ্রদেশের ইন্দোরে ঘটে গিয়েছে এক নিন্দনীয় ঘটনা। বিশ্বকাপের মাঝে এই ঘটনায় কেঁপে উঠেছে ক্রিকেট দুনিয়া। বিশ্বকাপ চলাকালীন ইন্দোরে এক হোটেলে ছিল অস্ট্রেলিয়া মহিলা দল।
অভিযোগ, হোটেলের কাছেই বাইক আরোহীর হাতে দুই অস্ট্রেলিয়ান মহিলা ক্রিকেটার শ্লীলতাহানির শিকার হন। জনসমক্ষে ঘটে যাওয়া এই ঘটনাটি শুধু রাজ্যের নিরাপত্তা ব্যবস্থা নিয়ে প্রশ্নই তোলেনি, বরং এক বিজেপি মন্ত্রীর মন্তব্যে শুরু হয়েছে প্রবল রাজনৈতিক বিতর্ক। পুলিশ সূত্রে জানা যায়, অভিযুক্তের নাম আকিল ওরফে নাইত্রা (বয়স ২৯)।
খজরানা এলাকার বাসিন্দা এই ব্যক্তি একজন পরিচিত অপরাধী। অভিযোগ পাওয়ার কয়েক ঘণ্টার মধ্যেই তাকে গ্রেপ্তার করা হয়। এই ঘটনা আন্তর্জাতিক ক্রিকেট টুর্নামেন্ট চলাকালীন দেশে মহিলাদের নিরাপত্তা নিয়ে নতুন করে প্রশ্ন তুলেছে। কিন্তু ঘটনার নিন্দা না করে মধ্যপ্রদেশ সরকারের মন্ত্রী কৈলাশ বিজয়বর্গীয়ের মন্তব্যে আরও ক্ষোভ ছড়িয়েছে।
তিনি বলেন, ‘এই ঘটনাটি থেকে খেলোয়াড়দেরও শিক্ষা নেওয়া উচিত। আমরা যেখানে যাই, স্থানীয় প্রশাসন বা নিরাপত্তাকর্মীদের জানিয়ে যাই। খেলোয়াড়দেরও তা করা উচিত। ভারতে ক্রিকেটারদের প্রতি যে উন্মাদনা আছে, তা অন্য দেশের মতোই প্রবল। তাই খেলোয়াড়দের সতর্ক থাকা দরকার।’
তিনি আরও বলেন, ‘খেলোয়াড়রা অনেক সময় নিজেদের জনপ্রিয়তা বোঝেন না। এই ঘটনা সবার জন্যই একটি শিক্ষা, খেলোয়াড়দের জন্যও, আমাদের জন্যও।’ সংবাদমাধ্যম এনডিটিভিকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে বিজয়বর্গীয় আরও বলেন, ‘নিরাপত্তায় কিছু ত্রুটি ছিল বটে, কিন্তু খেলোয়াড়দেরও উচিত ছিল স্থানীয় প্রশাসনকে জানানো। তারা কাউকে কিছু না জানিয়েই বাইরে গিয়েছিলেন। এই ঘটনার পর ভবিষ্যতে তাঁরা আরও সতর্ক থাকবেন বলে আমি আশা করি।’
বিজেপি সরকারের মন্ত্রীর এই মন্তব্যে তীব্র প্রতিক্রিয়া জানিয়েছে বিরোধী দল ও মহিলা অধিকার সংগঠনগুলি। কংগ্রেস নেতা ও প্রাক্তন কেন্দ্রীয় মন্ত্রী অরুণ যাদব বলেন, ‘এটি অত্যন্ত ঘৃণ্য মন্তব্য। দেশের অতিথি খেলোয়াড়দের সুরক্ষা দিতে ব্যর্থ হয়েছে রাজ্য সরকার, আর সেখানে মন্ত্রী ভিক্টিমদেরই দোষারোপ করছেন।
মুখ্যমন্ত্রী নিজেই স্বরাষ্ট্র দপ্তরের দায়িত্বে, তবুও এমন ঘটনা ঘটছে।’ ঘটনা নিয়ে ক্রীড়াজগতেও মতভেদ দেখা দিয়েছে। মধ্যপ্রদেশ ক্রিকেট অ্যাসোসিয়েশনের (MPCA) প্রাক্তন সভাপতি সঞ্জয় জগদালে বলেন, ‘সব সময় খেলোয়াড়দের নিরাপত্তা দেওয়া সম্ভব নয়। কেউ যদি অনুমতি ছাড়া বেরিয়ে যান, তাহলে প্রশাসন কীভাবে জানবে? তাই খেলোয়াড়দেরও সতর্ক থাকা জরুরি।’
তবে এটাই প্রথম নয় যে কৈলাশ বিজয়বর্গীয় মহিলাদের নিয়ে বিতর্কিত মন্তব্য করলেন। এর আগেও তিনি একাধিকবার নারীদের পোশাক ও আচরণ নিয়ে বিতর্ক সৃষ্টি করেছেন। কয়েক মাস আগেই রাহুল ও প্রিয়াঙ্কা গান্ধীকে নিয়ে মন্তব্য করে তিনি বলেছিলেন, ‘আমরা প্রাচীন সংস্কৃতির মানুষ। আজকের বিরোধী নেতারা বিদেশি মূল্যবোধে বড় হয়েছেন, তাই তাঁদের আচরণে শালীনতার অভাব।’
এছাড়াও, গত জুনে ইন্দোরে এক সভায় তিনি বলেন, ‘আমার কাছে অনেক মেয়েরা ছোট পোশাক পরে ছবি তুলতে আসে। আমি বলি, পরের বার শালীন পোশাকে এসো, তারপর ছবি তুলব।’ ২০২২ সালে হনুমান জয়ন্তী উপলক্ষে এক অনুষ্ঠানে তিনি মন্তব্য করেন, ‘আজকের মেয়েরা এমন পোশাক পরে যে তাঁদের দেবীর মতো মনে হয় না, বরং শূর্পনখার মতো দেখায়। ঈশ্বর সুন্দর শরীর দিয়েছেন, তাই শালীন পোশাক পরা উচিত।’
একাধিক বিতর্কিত মন্তব্য করেও বারবার আক্রমণের মধ্যে পড়েছেন কৈলাশ। কিন্তু তাতেও যে তার শিক্ষা হয়নি তা প্রমাণ হয়ে গেল আরও একবার। ইন্দোরের ঘটনাটি নতুন করে মধ্যপ্রদেশ সরকারের ভাবমূর্তি ও মহিলাদের নিরাপত্তা নিয়ে প্রশ্ন তুলে দিল।