• ল্যান্ডফলের দোরগোড়ায় 'মান্থা', অন্ধ্রপ্রদেশ-ওড়িশায় জারি লাল সতর্কতা, কী ব্যবস্থা নিল প্রশাসন?...
    আজকাল | ২৮ অক্টোবর ২০২৫
  • আজকাল ওয়েবডেস্ক: বঙ্গোপসাগরে প্রবল তৈরি হওয়া অতি শক্তিশালী ঘূর্ণিঝড় ‘মান্থা’ ক্রমশ উপকূলের দিকে ধেয়ে আসছে। এর প্রভাবে অন্ধ্রপ্রদেশ ও ওড়িশায় জারি হয়েছে লাল সতর্কতা। উপকূলবর্তী এলাকা থেকে স্থানীয় বাসিন্দাদের নিরাপদ এলাকায় সরিয়ে নিয়ে যাওয়ার কাজ ইতিমধ্যেই শুরু হয়ে গিয়েছে।

    আবহাওয়া দপ্তর জানিয়েছে, মঙ্গলবার রাতের মধ্যেই কাকিনাড়ার কাছে অন্ধ্র উপকূলে আছড়ে পড়তে পারে ঘূর্ণিঝড়টি। ভারতীয় মৌসম ভবন (IMD) সূত্রে খবর, সোমবার গভীর রাতে ঘূর্ণিঝড়টি মছলিপত্তনম থেকে প্রায় ২৮০ কিলোমিটার দক্ষিণ-দক্ষিণ-পূর্বে এবং বিশাখাপত্তনম থেকে প্রায় ৪১০ কিলোমিটার দক্ষিণে অবস্থান করছিল।

    মঙ্গলবার সন্ধ্যা বা রাতের মধ্যেই এটি ‘সিভিয়ার সাইক্লোনিক স্টর্ম’ বা অতি শক্তিশালী ঘূর্ণিঝড়ের রূপ নিয়ে মছলিপত্তনম ও কলিঙ্গপত্তনমের মধ্যে উপকূলে আছড়ে পড়তে পারে। ঘূর্ণিঝড়ের প্রভাবে ইতিমধ্যেই চিত্তুর, তিরুপতি ও কাকিনাড়া জেলায় প্রবল বৃষ্টি ও ঝোড়ো হাওয়া শুরু হয়ে গিয়েছে।

    চিত্তুর জেলার নাগাড়ি বিধানসভা এলাকায় টানা চার দিন ধরে চলছে ভারী বৃষ্টি। খুশাস্তলি নদীর জল উপচে পড়ে নাগাড়ি শহর থেকে তিরুত্তানি ও পল্লিপাত্তুর মতো গ্রামীণ এলাকায় যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে। জেলা প্রশাসন বিকল্প রাস্তা দিয়ে যানবাহন চালানোর নির্দেশ দিয়েছে এবং উপকূলবর্তী এলাকায় যাতায়াতে বিধিনিষেধ জারি করেছে।

    সতর্কতামূলক ব্যবস্থা হিসেবে কৃষ্ণপুরম জলাধার থেকে ১,০০০ কিউসেক জল ছাড়া হয়েছে। কাকিনাড়া উপকূলে ইতিমধ্যেই তাণ্ডব শুরু করেছে মান্থা। উপ্পাডা উপকূলে প্রবল জলোচ্ছ্বাসের কারণে সমুদ্রের ঢেউ গ্রামাঞ্চলের ভেতর ঢুকে পড়েছে।

    ক্ষয়ক্ষতির আশঙ্কায় পুলিশ উপ্পাডা, সুব্বামপেট, মায়াপত্তনম ও সুরাডাপেট গ্রামের বাসিন্দাদের সরিয়ে নিয়েছে। তিরুপতির জেলা প্রশাসনের প্রধান জানিয়েছেন, উপকূলবর্তী পাঁচটি এলাকায় প্রবল বৃষ্টি ও ঝোড়ো হাওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। ইতিমধ্যেই বিপর্যয় মোকাবিলা বাহিনী মোতায়েন করা হয়েছে।

    ঝড়ের পর যাতে তড়িঘড়ি উদ্ধারকাজ শুরু করা যায় সেই ব্যবস্থাও করা হয়েছে। ঘূর্ণিঝড়ের প্রভাব থেকে রক্ষা পাচ্ছে না ওড়িশাও। রাজ্য সরকার মলকানগিরি, কোরাপুট, নবরঙ্গপুর, রায়গড়া, গজপতি, গঞ্জাম, কলাহান্ডি ও কাংধমাল জেলায় লাল সতর্কতা জারি করেছে।

    মঙ্গলবার থেকে এই জেলাগুলিতে প্রবল বৃষ্টি ও ঝোড়ো হাওয়ার পূর্বাভাস রয়েছে। সরকারি সূত্রে জানা গিয়েছে, রাজ্য জুড়ে ১,৪৪৫টি ঘূর্ণিঝড় আশ্রয়কেন্দ্র খোলা হয়েছে। এনডিআরএফ, ওডিআরএফ ও দমকল বাহিনীর মোট ১৪০টি উদ্ধারকারী দল প্রস্তুত রাখা হয়েছে।

    বিশেষত গজপতি জেলার পাহাড়ি এলাকায় ভূমিধসের আশঙ্কায় অতিরিক্ত নজরদারি চালানো হচ্ছে। ইতিমধ্যেই প্রায় ৩২,০০০ মানুষকে বিপজ্জনক এলাকা থেকে নিরাপদ স্থানে সরিয়ে নেওয়া হচ্ছে। বৃষ্টির দাপটে আকাশপথ ও রেলপথে যোগাযোগ ব্যাহত হয়েছে।

    বিশাখাপত্তনম–চেন্নাই রুটে ছ’টি বিমান পরিষেবা বাতিল হয়েছে। ইন্ডিগো তাদের এক্স হ্যান্ডলে যাত্রীদের সতর্ক করে বলেছে, ‘বিশাখাপত্তনম, বিজয়ওয়াড়া ও রাজামুন্দ্রির এলাকায় ঘূর্ণিঝড় ও ভারী বৃষ্টির কারণে ফ্লাইট স্ট্যাটাস আগে দেখে নিন।’ রেল পরিষেবাতেও প্রভাব পড়েছে। জানা গিয়েছে, হাওড়া–জগদলপুর সামলেশ্বরী এক্সপ্রেস বর্তমানে রায়গড়া পর্যন্ত চলবে।

    হিরাখণ্ড এক্সপ্রেস ও ইন্টারসিটি এক্সপ্রেস রায়গড়া থেকে শুধুমাত্র ভুবনেশ্বর বা রাউরকেলা পর্যন্ত চলবে। জগদলপুর অংশের পরিষেবা আপাতত বন্ধ রাখা হয়েছে। প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি অন্ধ্রপ্রদেশ সরকারকে কেন্দ্রীয় সহায়তার আশ্বাস দিয়েছেন। তিনি বলেছেন, ‘উপকূলবর্তী রাজ্যগুলির সুরক্ষা ও ত্রাণকাজে কেন্দ্রীয় সরকার সবরকম সহায়তা দেবে।’
  • Link to this news (আজকাল)