রাজ্যে এসআইআর ঘোষণা হয়েছে। ভোটারদের তথ্য যাচাইয়ে শীঘ্রই নামবেন বিএলও (বুথ লেভেল অফিসার) তথা স্কুল শিক্ষক-সহ সরকারি কর্মীরা। এই পরিস্থিতিতে ইঁদপুরের কয়েকটি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সমস্ত শিক্ষককেই বিএলও হিসেবে এসআইআর-এর কাজে যোগ দিতে হবে বলে চিঠি দেওয়ায় পঠন-পাঠনথেকে মিডডে মিল বন্ধের আশঙ্কা দেখা দিয়েছে। এতে উদ্বিগ্ন অভিভাবকেরাও।
ইঁদপুর ব্লকের শবর অধ্যুষিত গ্রাম সয়েরবেড়িয়ায় কমবেশি ৫০টি পরিবারের বাস। সয়েরবেড়িয়া প্রাথমিক বিদ্যালয়ে শিশু শ্রেণি থেকে চতুর্থ শ্রেণি পর্যন্ত ৩৫ জন পড়ুয়া রয়েছে। তাদের পড়ান দু’জন শিক্ষক। এসআইআর-এর কাজে দুই শিক্ষককেই নামতে হবে বলে বলে চিঠি দিয়েছে প্রশাসন।
স্কুল সূত্রে জানা গিয়েছে, ওই কাজে দু’জন শিক্ষকই যুক্ত হলে স্কুল বন্ধ রাখা ছাড়া উপায় নেই। এতে পঠনপাঠন ব্যাহত হবে। স্কুলের অনেকেই প্রথম প্রজন্মের শিক্ষার্থী। দিনমজুর পরিবারের ওই শিক্ষার্থীদের বাড়িতে পড়াশোনার পরিবেশ নেই। ফলে টানা কয়েক মাস স্কুল বন্ধ থাকলে অনেকেই পড়া ভুলবে বলে অভিভাবকেরা আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন।
তৃতীয় শ্রেণির পড়ুয়া সুরজিৎ শবর বলে, ‘‘বাড়িতে কেউ লেখাপড়া জানেন না। স্কুলই ভরসা। স্কুল বন্ধ থাকলে পড়াশোনাও বন্ধ হয়ে যায়।’’ চতুর্থ শ্রেণির প্রতিমা শবরের বাবা বিলাস শবর বলেন, ‘‘মেয়েকে স্কুলে পাঠিয়ে স্বামী-স্ত্রী দিনমজুরের কাজে যাই। দুপুরে স্কুলের খাবারই সন্তানের ভরসা। এই পরিস্থিতিতে স্কুল বন্ধ থাকলে মিডডে মিলও বন্ধ হয়ে যাবে। মেয়েটা তখন খাবে কোথায়?’’
ওই স্কুলের প্রধান শিক্ষক উত্তমকুমার বাউরি বলেন, ‘‘স্কুলের সময়ে এসআইআর-এর কাজ করতে হলে স্কুল বন্ধ রাখা ছাড়া উপায় কী? স্কুলের সময় বাদে অন্য সময়ে এই কাজের সুযোগ দিলে পঠনপাঠনে ঘাটতি হবে না। তবে স্কুল চালিয়েও অবসর সময়ে এই কাজ করতে একটু চাপ হলেও সরকারি নির্দেশ পালন করতে আমরা ইচ্ছুক।’’
অন্য দিকে, ইঁদপুর ব্লকের আরও একটি স্কুলে এই সমস্যার কথা উঠে আসছে।দক্ষিণ কমলপুর প্রাথমিক বিদ্যালয়ে রয়েছেন দু'জন শিক্ষক। কুড়ি জন পড়ুয়া। আদিবাসী অধ্যুষিত এই গ্রামে প্রাথমিক বিদ্যালয়ের দুই শিক্ষকেরই এই কাজের চিঠি এসেছে। শিক্ষকদের আশঙ্কা, স্কুল টাইমে এই কাজ করতে হলে স্কুল বন্ধ করতে হবে। বাসিন্দাদের মধ্যে বিকাশ মুদি বলেন, ‘‘স্কুল বন্ধ হলে, পঠন-পাঠন থেকে মিডডে মিল— সব বন্ধ হয়ে যাবে। খুব সমস্যা হবে।’’
স্কুলের সহ-শিক্ষক সুভাষ মণ্ডল বলেন, ‘‘স্কুলে যেমন সমস্যা তৈরি হবে, ব্যক্তিগত ভাবে আমিও সমস্যায় পড়েছি। কারণ, আমার বাড়ি নেকড়্যাকোন্দা গ্রামে। বিদ্যালয় দক্ষিণ কমলপুর গ্রামে। অন্যদিকে বিএলও হিসেবে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে দক্ষিণ পায়রাচালি বুথে। এই কাজের পাশাপাশি স্কুল করতে হলে একটু সমস্যা হবে।’’
এ বিষয়ে বাঁকুড়া জেলা বিদ্যালয় পরিদর্শক (প্রাথমিক) জগবন্ধু বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, ‘‘এই রকম সমস্যার কথা জেলার তিন-চারটি স্কুল থেকে এসেছে। তবে শিক্ষকেরা বিএলও হিসেবে নিজের এলাকাতেই কাজ করবেন। আশাকরি সমস্যা হবে না। তবে কোনও পরিস্থিতিতেই স্কুল বন্ধ করা যাবে না। পরিস্থিতি বুঝে বিকল্প ব্যবস্থা করা হবে।’’