• প্রতারণার পরে চুরির সামগ্রী মালিককে ফেরত, গ্রেফতার অভিযুক্ত
    আনন্দবাজার | ২৮ অক্টোবর ২০২৫
  • জাল নথির সাহায্যে তৈরি করা হত ভুয়ো আধার কার্ড, খোলা হত ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্ট। সেই সমস্ত ভুয়ো আধার কার্ডে ছবিটা একই থাকত, বাকি তথ্য ছিল আলাদা। এর পরে হোটেল কিংবা অতিথিশালায় ভাড়া নেওয়া হত ঘর। সেখানে এসেই নিশানা করা হত কোনও অতিথিকে। তাঁর ল্যাপটপ, মোবাইল, ওয়ালেট ও ক্রেডিট কার্ড চুরি করা হত। তার পরে সেই সব ব্যবহার করে রকমারি সামগ্রী কেনার পরে চুরি করা ফোন, ল্যাপটপ ও ক্রেডিট কার্ড মালিককে ফিরিয়ে দেওয়া হত।

    চুরির এমন অভিনব কৌশল দেখে হতবাক হয়ে গিয়েছিলেন বিধাননগরের তদন্তকারীরা। আরও কোথাও এই কৌশলে চুরি হয়েছে কিনা, তা খুঁজে দেখতে গিয়ে জানা যায়, ১৩টি রাজ্যে এমনই একাধিক ঘটনা ঘটেছে। প্রতিটি ঘটনায় একই ব্যক্তির জড়িত থাকার অভিযোগ রয়েছে। গত কয়েক বছর ধরে তার খোঁজ চলছে। দেশের একাধিক মেট্রোপলিটন শহরে সে এই ধরনের ঘটনা ঘটিয়েছে।অবশেষে বিধাননগর পূর্ব থানার পুলিশ কেরল থেকে অভিযুক্ত সেই ব্যক্তিকে গ্রেফতার করেছে। ধৃতের নাম অজয় কে ওরফে কুরাপতি অজয়। ধৃতকে সোমবার বিধাননগর আদালতে তোলা হলে ১৩ দিনের জন্য পুলিশি হেফাজতে রাখার নির্দেশ দেন বিচারক।

    বিধাননগর পুলিশ এ দিন জানায়, গত জুলাই মাসে বিহারের এক বাসিন্দা বিধাননগর পূর্ব থানায় চুরির অভিযোগ দায়ের করেন। তিনি কর্মসূত্রে বিধাননগরে এসে একটি অতিথিশালায় উঠেছিলেন। ঘর থেকে তাঁর মোবাইল, ল্যাপটপ এবং ওয়ালেট চুরি যায়। যদিও পরে চুরি করা সেই সব জিনিস তাঁকে বাইক-ট্যাক্সির মাধ্যমে ফেরত পাঠিয়ে দেয় চোর। পুলিশ জানায়, অন্যান্য রাজ্যেরপুলিশের সঙ্গে কথা বলে ওই চোরের খোঁজ শুরু হয়। কিন্তু তদন্তে নেমে দেখা যায়, অভিযুক্ত অত্যন্ত ধূর্ত। সে প্রথমে ভুয়ো আধার কার্ড, ভোটার কার্ড ও অন্যান্য নথি তৈরি করত। এর পরে সেই সব নামে ব্যাঙ্কে অ্যাকাউন্ট খুলত। যেমন, সাই কৃষ্ণ, কে রবীন্দ্র। প্রতিটি ভুয়ো পরিচয়পত্রেরই অবশ্য ছবি ছিল এক। প্রতি বারই চুরির পরে চোরাই সামগ্রী মালিককে ফিরিয়ে দিত সে। যদিও তার আগে সেগুলি ব্যবহার করে সোনা, মোবাইল-সহ নানা ধরনের দামি জিনিস কিনত অভিযুক্ত অজয়। তুলে নিত টাকাও। সেই টাকা নতুন খোলা অ্যাকাউন্টে সরিয়ে রাখত সে।

    ঘটনার তদন্তে নেমে পুলিশ প্রথমে অজয়ের প্রকৃত নাম, ঠিকানা, অবস্থান— কিছুই জানতে পারছিল না। অভিযোগকারী পুলিশকে জানান, তাঁর ক্রেডিট কার্ড চুরি করে তা দিয়ে মোট ১৫ লক্ষ টাকার লেনদেন করা হয়েছে। যার মধ্যে পাঁচ লক্ষ টাকা দিয়ে সোনা কেনা হয়েছিল। পুলিশ জানিয়েছে, অজয় প্রতারণার কাজে মোট ৯৮টি সিম কার্ড ব্যবহার করেছিল। এক পুলিশকর্তা বলেন, ‘‘অজয়কে শনাক্ত করাই ছিল আমাদের কাছে সব থেকে বড় চ্যালেঞ্জ।’’

    পুলিশ সূত্রের খবর, প্রাথমিক ভাবে জানা গিয়েছে, অজয় দ্বাদশ শ্রেণি পাশ। পরে হ্যাকিং নিয়ে পড়াশোনা করেছিল সে। তবে, সেই তথ্য যাচাই করে দেখা হচ্ছে। বেঙ্গালুরুর এই বাসিন্দা ২০১৬ সালে বাড়ি ছেড়ে অন্যত্র চলে যায়। ২০২১ সাল থেকে অপরাধে জড়িয়ে পড়ে সে। ২০২৩ সালে প্রথমে গ্যাংটক এবং পরে বেঙ্গালুরুতে দু’বার গ্রেফতার হয়েছিল অজয়।
  • Link to this news (আনন্দবাজার)