ভোটার তালিকার নিবিড় সংশোধনী চালু হওয়ার ঘোষণার আগে ঘরে বসেই কাজ করছিলেন বুথ লেভেল অফিসার বা বিএলও-রা। এ বার বার বাড়ি বাড়ি গিয়ে ভোটারদের সম্পর্কে তথ্য সংগ্রহ করতে হবে তাঁদের। এ দিকে, পুজোর ছুটি শেষে বুধবার থেকে পুরোদমে স্কুল শুরু হতে চলেছে। প্রাথমিক কিংবা মাধ্যমিক স্তরের বহু স্কুলের প্রধান শিক্ষকদের দাবি, এমনিতেই শিক্ষক-সঙ্কটে ভুগছে স্কুলগুলি। নিয়োগ সংক্রান্ত দুর্নীতির জেরে অনেক শিক্ষকের চাকরি চলে যাওয়ায় স্কুল চালাতে নানা অসুবিধা হচ্ছে। এর মধ্যে ভোটের কাজে শিক্ষকদের নেওয়ার প্রভাব পড়বে পড়াশোনায়। ক্লাস কে নেবে, এই প্রশ্নও উঠছে।
মেমারি বোহার হাই স্কুলে উচ্চ মাধ্যমিকস্তরে এক জন রসায়নের শিক্ষক রয়েছেন। বিএলও হিসাবে নির্বাচন কমিশন তাঁকে নিয়োগ করেছে। ওই স্কুলের প্রধান শিক্ষক অরুণ মণ্ডলের দাবি, “উচ্চ মাধ্যমিকে ৪০ জন ছাত্র রয়েছে। স্কুলের একমাত্র রসায়নের শিক্ষককে বিএলও-কে নিয়োগ করা হয়েছে। রসায়ন কে পড়াবে?’’ বর্ধমানের পাহাড়হাটি কিংবা জামালপুরের কুলীন হাই স্কুল থেকে দু’জন করে শিক্ষক বিএলও হয়েছেন। ওই সব স্কুল কর্তৃপক্ষের দাবি, স্কুল চালাতে অসুবিধার কথা বিডিও বা এইআরও-কে জানানো হয়েছিল।
৩ নভেম্বর থেকে মাধ্যমিকের টেস্ট শুরু। তার পরেই ফের ক্লাসের মূল্যায়ণ। মেমারির সাতগেছিয়ার মতো অনেক স্কুল পরীক্ষা কী ভাবে চলবে, তা নিয়ে চিন্তায় পড়ে গিয়েছে। সাতগেছিয়া বাজার হাই স্কুলে ১৯ জন শিক্ষকের মধ্যে পাঁচ জন বিএলও হিসাবে নিযুক্ত হয়েছেন। শিক্ষক-সঙ্কট মেটাতে বৈঠকে বসেছেন স্কুল কর্তৃপক্ষ। মাধ্যমিকস্তরের একাধিক শিক্ষকের দাবি, “ভোটার-ম্যাপিংয়ের কাজ ঘরে বসে হয়েছে। তাতেই স্কুলে পড়ানোয় ব্যাঘাত ঘটেছে। এ বার বাড়ি বাড়ি গিয়ে ভোটারদের তথ্য সংগ্রহ করতে হলে স্কুলে যাওয়া যাবে না। ছাত্রছাত্রীদের ক্ষতি হবে।” প্রধান শিক্ষকদের একটি সংগঠনের জেলা সভাপতি রূপক রায় বলেন, “আমরা এ ব্যাপারে কমিশনের সঙ্গে দেখা করেছিলাম। কমিশন পড়াশোনায় ব্যাঘাত হবে না বলে আশ্বাস দিয়েছিল। কিন্তু ভোটার-ম্যাপিংয়ের সময়েই ওই শিক্ষকেরা স্কুলে যাতায়াতে অসুবিধায় পড়েছিলেন।”
একাধিক প্রধান শিক্ষকের দাবি, অনেক জায়গায় প্রধান শিক্ষকেরাও বিএলও হয়েছেন। ফলে ছোটদের পড়াশোনা, মিড-ডে মিল চালানোতেও সমস্যা হতে পারে। জেলা প্রাথমিক শিক্ষা সংসদের চেয়ারম্যান মধুসূদন ভট্টাচার্য বলেন, “প্রতিটি চক্রেরই ৫০%য়ের বেশি শিক্ষককে বিএলও হিসাবে নিয়োগ করা হয়েছে। ফলে, পড়াশোনায় একটা প্রভাব পড়বেই।” যদিও নির্বাচন কমিশন সূত্রের খবর, শুধু শিক্ষক-শিক্ষিকা নন, সরকারি স্থায়ী কর্মচারীদের অনেককেও নিয়োগ করা হচ্ছে। সেটা করছেন ইআরও-রা, যাঁরা এসডিও বা তেমন পদমর্যাদার। প্রশিক্ষণে সকলকে একসঙ্গে যেতে হয় না, শনি এবং রবিবারও বিএলওদের কাজের সুযোগ দেওয়া হচ্ছে। ফলে, তাঁরা নিজেদের নির্দিষ্ট কাজের পরেও ভোটের কাজ করতে পারবেন বলে দাবি কমিশনের।
চিন্তা কোথায়
জেলায় বুথ ৪৪২১টি
ভোটার প্রায় ৪২ লক্ষ
৬৩% ভোটার-ম্যাপিং হয়েছে
জেলায় বিএলও হিসাবে নিযুক্ত শিক্ষকদের ৯০%ই প্রাথমিক স্কুলের
বাড়ি বাড়ি গিয়ে তথ্য সংগ্রহ করে নির্দিষ্ট পোর্টালে ‘আপলোড’ করতে গিয়ে পড়ানো তো বটেই, মিড-ডে মিল চালাতেও অসুবিধার আশঙ্কা (সূত্র: নিবার্চন কমিশন)