ছটপুজো হল চার দিনব্যাপী ব্রত, যা মূলত সূর্যদেবতা এবং তাঁর বোন বা শক্তির দেবী ষষ্ঠীর উদ্দেশ্যে করা হয়। এই পুজোটি কার্তিক মাসের শুক্লপক্ষের ষষ্ঠী তিথিতে অনুষ্ঠিত হয় এবং পরিবারের সুখ-শান্তি, সন্তানের মঙ্গল কামনায় পালিত হয়। এই উৎসবে নারী-পুরুষ উভয়েই যোগ দিতে পারেন। সোমবার পশ্চিম বর্ধমান জেলার শিল্পাঞ্চলের বিভিন্ন নদ-নদী ঘাট, পুকুর ও জলাশয়ে প্রচুর ব্রতীর সমাগম হয়। জেলা পুলিশ-প্রশাসনের তরফে জানানো হয়েছে, ছটঘাটগুলিতে কঠোর নজরদারি রয়েছে। ছটঘাটগুলিতে পুলিশের কঠোর নজরদারি রয়েছে। রয়েছে সিভিল ডিফেন্সের টিম।
আবার ডিভিসির তরফেও বিশেষ ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। ডিভিসির মাইথন থার্ড ডাইক ছটঘাটে প্রচুর ছটব্রতীর সমাগম হয়েছে। ঝাড়খণ্ড থেকেও বহু ভক্ত এসেছেন এখানে। ডিভিসির তরফে জানানো হয়েছে, মাইথন জলাধারে নিরাপত্তার স্বার্থে বিপদ সঙ্কেত লেখা টেপ দিয়ে ছটঘাট এলাকা ঘিরে দেওয়া হয়েছে প্রশাসনের পক্ষ থেকে। যাতে ছটব্রতীরা তা দেখে নির্দিষ্ট জায়গার বাইরে না যেতে পারেন। ঘাটগুলিতে আলো দিয়ে সাজানো হয়েছে। মাইকে সচেতনতা প্রচারও করা হচ্ছে।
নিয়ামতপুর ‘সরকার পুকুর’ ‘শিব মন্দির’ ছটঘাট নামে পরিচিত। নিয়ামতপুর সর্বজনীন ছটপুজো সমিতির সভাপতি শিবপ্রসাদ রাউত বলেন, “প্রতি বছর এখানে প্রায় ৩০ হাজার ছটব্রতী ও ভক্তের সমাগম হয়। সোমবার এই ঘাটে প্রচুর ভক্তের সমাগম হয়েছে।” সালানপুর ব্লকের বনজেমাহারি ছটঘাট এবং হিন্দুস্তান কেব্লস চিত্তরঞ্জন ছটঘাটে উপস্থিত হন বিধায়ক তথা আসানসোল পুরসভার মেয়র বিধান উপাধ্যায়। তিনি পুজোর আয়োজন পরিদর্শন করেন এবং স্থানীয়দের শুভকামনা জানান। আসানসোল দক্ষিণের বিধায়ক, বিজেপির অগ্নিমিত্ৰা পাল জানান, দলের পক্ষ থেকে বার্নপুরে দামোদর ঘাটে ক্যাম্প করা হয়েছে। সেখানে ছটপুজো উপলক্ষে সারা রাত তিনি উপস্থিত থাকবেন।
এ দিকে, পূর্ব রেলের আসানসোল ডিভিশনের বিশেষ অভিযানে আসানসোল লোকো ট্যাঙ্ক, অন্ডাল, মধুপুর, সীতারামপুর ও পানাগড়ে ছটঘাট পরিষ্কার করা হয়েছে।
ছটব্রতীদের সম্মান জানালেন কুলটির চবকা এলাকার বাসিন্দারা। এখানে হিন্দুদের সঙ্গে সংখ্যালঘুরাও বেশ কিছুটা দণ্ডী কেটে সূর্য পুজো করতে পুকুরে যান। এই এলাকায় যে সব ব্রতীরা দণ্ডী কেটে যান, তাঁদের সামনে শিশু ও প্রবীণেরা শুয়ে পড়েন। ব্রতীরা তাঁদের ডিঙিয়ে পার হন। এমনই দুই ব্রতী কাবিলা বিবি ও অর্জুনা শেখ জানান, দীর্ঘ দিন তাঁরা ছট উৎসবের প্রথম দিন পুকুর যাওয়ার সময়ে তাঁদের সামনে অনেকে শুয়ে পড়েন। তাঁরা ডিঙিয়ে যান। মানুষের বিশ্বাস, এতে তাঁদের জীবন মঙ্গলময় হয়ে ওঠে।