দোকানে সাজানো হরেক রকমের দড়ি। কার্বাইড পাওয়া যাবে? ভ্যান রিকশা নিয়ে দাঁড়িয়ে থাকা চল্লিশোর্ধ্ব এক ব্যক্তি বলেন, “খুচরোর জন্য শহর লাগোয়া গ্রামীণ এলাকার মুদির দোকানে যেতে হবে। আর পাইকারি এখানে মিলবে। অপেক্ষা করতে হবে, লুকিয়ে গুদামে মজুত করা আছে।” পাশেই বাজির পাইকারি দোকান। সোমবার কার্বাইডের বিকিকিনির এমনই ছবি দেখা গেল মালদহের রথবাড়ির নেতাজি পুর-বাজারে।
এই নেতাজি পুর-বাজারেই ২০২৩ সালের মে মাসে মজুত কার্বাইড থেকে ছড়ানো আগুনে ঝলসে মৃত্যু হয় দুই শ্রমিকের। এ বারের কালীপুজোয় ‘কার্বাইড গান’ ব্যবহার করে চোখের সমস্যায় ভুগছে জেলার একাধিক শিশু-কিশোর। তার পরেও কার্বাইড বিক্রির চেনা ছবি ঘিরে পুলিশ ও প্রশাসনের নজরদারি নিয়ে উঠছে প্রশ্ন।
কী ভাবে মিলছে কার্বাইড? ইংরেজবাজারের নিয়ন্ত্রিত বাজারে ফল পাকানোর জন্য গোপনে বিক্রি করা হয় ক্যালসিয়াম কার্বাইড। রথবাড়ির নেতাজি পুর-বাজারেও কার্বাইড মজুত রাখা হয়। তা পাইকারি বাজার থেকে গ্রামীণ এলাকায় খুচরো বাজারে ছড়িয়ে পড়ছে। স্বাস্থ্য দফতরের দাবি, ক্যালসিয়াম কার্বাইডে ক্ষতিকর আর্সেনিক ও ফসফরাস থাকে। যা স্বাস্থ্যের পক্ষে ক্ষতিকর। এই কার্বাইডের সঙ্গে জল মিশিয়ে প্লাস্টিকের বোতল বা পাইপে ভরে বন্দুক বানিয়ে বাজি পোড়ানোরও নজির জেলায় দেখা গিয়েছে। তাতে একাধিক শিশু-কিশোরের চোখের ক্ষতি হয়েছে। গাজলের দশম শ্রেণির এক স্কুল ছাত্র জানায়, “কার্বাইডের সঙ্গে জল মিশিয়ে বোতলে ভরে ফাটাচ্ছিলাম। হঠাৎ করে আগুন চোখে লাগে। চোখে সমস্যা হওয়ায় বাড়িতে জানাই।” পরিবারের দাবি, চিকিৎসা করানোর পরে ছেলে সুস্থ। তবে চিকিৎসকের পরামর্শ মতো কালো চশমা পড়ে থাকতে হচ্ছে। মালদহের ব্যবসায়ী সমিতির সম্পাদক উত্তম বসাক বলেন, “বেআইনি ভাবে কেউ কার্বাইড বিক্রি করলে তার পাশে সংগঠন থাকবে না। বাজারগুলিতে কড়া বার্তা দেওয়া হয়েছে।”
নিয়ম-বহির্ভূত ভাবে কার্বাইড বিক্রি করা হলে কড়া ব্যবস্থার হুঁশিয়ারি দিয়েছেন মালদহের জেলাশাসক নীতিন সিংহানিয়া। তিনি বলেন, “কার্বাইডের কেনাবেচা রুখতে নিয়মিত নজরদারি চালানো হয়। তার পরেও কোথাও বিক্রির প্রমাণ মিললে কড়া ব্যবস্থা নেওয়া হবে। এ ছাড়া কার্বাইড গানের ব্যবহার নিয়েও আমাদের তদন্ত শুরু হয়েছে।” পুলিশ সুপার প্রদীপকুমার যাদব বলেন, “অভিযান আরও বাড়ানো হবে।”