• ২০০২ সালের ভোটার তালিকা কোন পদ্ধতিতে দেখবেন? কী ভাবে খুঁজে দেখবেন ২৩ বছর আগের নথি? পড়ে জেনে নিন
    আনন্দবাজার | ২৮ অক্টোবর ২০২৫
  • সোমবার জাতীয় নির্বাচন কমিশন ঘোষণা করে দিয়েছে ভোটার তালিকায় বিশেষ নিবিড় সংশোধনের দিনক্ষণ। পশ্চিমবঙ্গ-সহ ১২টি রাজ্য ও কেন্দ্রশাসিত অঞ্চলে ভোটার তালিকা শুদ্ধকরণ অভিযান শুরু করছে কমিশন। ভোটার তালিকায় নাম রাখতে গেলে ১১টি নথি নির্দিষ্ট করে দিয়েছে নয়াদিল্লির নির্বাচন সদন। তা ছাড়া, সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশে আধার কার্ডও রয়েছে ভোটার তালিকায় নাম তোলার নথির তালিকায়। তবে কমিশন একটি বিষয় স্পষ্ট করে দিয়েছে, ২০০২ সালের ভোটার তালিকায় যাঁদের নাম ছিল, তাঁদের আর নতুন করে কোনও নথি জমা দিতে হবে না। ২৩ বছর আগে কোন বিধানসভার, কোন বুথে, কত নম্বর সিরিয়ালে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তির নাম ছিল, তা ‘এনুমারেশন ফর্ম’-এ উল্লেখ করলেই ভোটার তালিকায় নাম থাকবে। কোন পদ্ধতিতে ২৩ বছর আগের নথি খুঁজতে হবে, এখানে রইল তারই সুলুকসন্ধান।

    কোন ঠিকানায় খুঁজবেন

    ২৩ বছর আগের ভোটার তালিকা খুঁজতে আপনাকে কোনও দলের পার্টি অফিস বা নেতাদের শরণাপন্ন হতে হবে না। স্মার্ট ফোনে ক্লিক করলেই দেখতে পাওয়া যাবে ২০০২ সালের পূর্ণাঙ্গ তালিকা। রাজ্যের মুখ্য নির্বাচনী আধিকারিক (সিইও)-এর ওয়েবসাইটের একটি অংশেই রয়েছে সেই তালিকা। যাকে সূচক করে এসআইআর শুরু করছে কমিশন। ceowestbengal.nic.in/Roll_dist গুগ্‌লে এই ওয়েব ঠিকানা লিখলেই খুলে যাবে ২০০২ সালের ভোটার তালিকা।

    কী ভাবে খুঁজবেন

    উল্লিখিত ঠিকানায় ক্লিক করলেই যে পাতাটি আপনার মোবাইল, কম্পিউটার বা ডিজিটাল স্ক্রিনে খুলবে, সেখানে রাজ্যের সমস্ত জেলার নাম লেখা থাকবে। আপনি বা আপনার বাবা-মা ২৩ বছর আগে যে জেলার ভোটার ছিলেন, প্রথমে সেই জেলার নামে ক্লিক করতে হবে। তখন খুলে যাবে সংশ্লিষ্ট জেলার বিধানসভাগুলির নাম। তখন আপনি যে বিধানসভা এলাকার ভোটার ছিলেন, সেই বিধানসভা কেন্দ্রের নামে ক্লিক করলে খুলে যাবে ভোটকেন্দ্রের (পোলিং স্টেশন) নাম। ‘স্ক্রল’ করে সেই কেন্দ্রের নামে ক্লিক করলেই আপনি দেখতে পাবেন ভোটার তালিকা।

    তবে এখানে একটি বিষয়ে সমস্যা হতে পারে। অনেক জায়গায় একটি ভোটকেন্দ্রে একাধিক বুথ থাকে। অর্থাৎ, একটি বড় স্কুলে উপরতলা, নীচের তলা মিলিয়ে চারটি-পাঁচটিও বুথ হয়। ২৩ বছর আগের বুথ বা পার্ট নম্বর স্মরণে থাকলে আপনি এক বারেই সেই তালিকা পেতে পারেন। একান্তই মনে না থাকলে আপনাকে সংশ্লিষ্ট ভোটগ্রহণ কেন্দ্রের সবকটি কক্ষের তালিকাই মিলিয়ে দেখতে হবে।

    সতর্ক থাকুন তিন বিষয়ে

    ১. পশ্চিমবঙ্গে সেই সময়কার জেলার নাম অনুযায়ী আপনাকে তালিকা খুঁজতে হবে। ২৩ বছর আগে বর্ধমান, জলপাইগুড়ি, দার্জিলিং, পশ্চিম মেদিনীপুরের মতো জেলাগুলি ছিল অবিভক্ত। এখনকার পূর্ব বা পশ্চিম বর্ধমান, কালিম্পং, আলিপুরদুয়ার, ঝাড়গ্রামের নাম জেলার তালিকায় নেই। অর্থাৎ, এখনকার ঝাড়গ্রাম জেলার কোনও বুথের তালিকা খুঁজতে হলে আপনাকে খুঁজতে হবে পশ্চিম মেদিনীপুর জেলায়। অথবা কালিম্পংয়ের কোনও বুথ খুঁজতে হলে দেখতে হবে দার্জিলিঙের ভোটার তালিকায়। আপনি পশ্চিম বা পূর্ব যে বর্ধমানেরই ভোটার হন, আপনাকে নিজের নাম খুঁজতে হবে অবিভক্ত বর্ধমানেই।

    ২. বাকিগুলির ক্ষেত্রে জেলা উল্লেখ থাকলেও কলকাতার ক্ষেত্রে রয়েছে তিনটি ভাগ। তখন কলকাতায় ছিল তিনটি লোকসভা কেন্দ্র। কমিশন প্রদত্ত জেলার তালিকায় সেই তিন কেন্দ্রের নামের উল্লেখ রয়েছে। কলকাতা উত্তর-পশ্চিম (কলকাতা এন-ডব্লিউ), কলকাতা উত্তর-পূর্ব (কলকাতা এন-ই) এবং কলকাতা দক্ষিণ (কলকাতা সাউথ)। কেন্দ্র পুনর্বিন্যাসের পরে কলকাতায় এখন দু’টি লোকসভা আসন। কলকাতা উত্তর এবং কলকাতা দক্ষিণ। নিজের নাম খুঁজতে গেলে কিন্তু ২৩ বছর আগের আসনের নামে ক্লিক করেই তালিকায় ঢুকতে হবে।

    ৩. পশ্চিমবঙ্গে আসন পুনর্বিন্যাসের (ডিলিমিটেশন) ফলে পুরনো অনেক বিধানসভার এখন আর অস্তিত্ব নেই। কিন্তু আপনাকে মনে করে পুরনো বিধানসভা কেন্দ্রেই নাম খুঁজতে হবে। যেমন, ২৩ বছর আগে কলকাতা উত্তর-পশ্চিম লোকসভার অধীনে বড়বাজার, জোড়াবাগান, বউবাজার, তালতলার মতো বিধানসভা আসন ছিল। এখন কোনওটিরই অস্তিত্ব নেই। কিন্তু ভোটার তালিকায় নাম খুঁজতে হলে পুরনো বিধানসভার নাম মনে করেই খুঁজতে হবে। এমন বিলুপ্ত হয়ে যাওয়া বিধানসভা রয়েছে কলকাতা উত্তর-পূর্ব, কলকাতা দক্ষিণ, হাওড়া, হুগলি-সহ বিভিন্ন জেলায়।

    যদি ভোটার তালিকায় নিজের নাম খুঁজে না পাওয়া যায়, তা হলে কমিশনের বলে দেওয়া পন্থা অনুযায়ী নথিপত্র জমা দিয়ে নাম তোলার বন্দোবস্ত করতে হবে। এ কাজে বিভিন্ন আগ্রহী রাজনৈতিক দলও রাজ্য জুড়ে বিশেষ শিবির খোলার প্রস্তুতি নিতে শুরু করেছে।
  • Link to this news (আনন্দবাজার)